সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলার কৈফিয়ত চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুরে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো– সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলার কৈফিয়ত, পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান না হওয়া অবধি নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু না করা ও উন্নয়ন প্রকল্পের খপ্পরে ধ্বংস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদের সঞ্চালনায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে আমাদের যে ট্রমা, সেটি হলো, কোথাও গাছ কাটে, আর প্রশাসন বলে তারা জানে না। সেই ট্রমার ভেতর দিয়ে আমরা আরও একবার যাচ্ছি।’ 
গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দিয়ে সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব চাওয়া হয়। এর পর ৯ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ২০ মের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো হবে। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। 

এর মধ্যেই গত সোমবার গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনের নির্ধারিত স্থানে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, গাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে তিনি জানেন না।

জাবিতে গাছ নিধন বন্ধে বেলার চিঠি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মঙ্গলবার বেলার পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অবিলম্বে স্থগিতের দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি যথাযথ ও পরিবেশবান্ধব মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। চিঠিতে ইতোমধ্যে কাটা গাছগুলোর প্রজাতি নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণমূলক বনায়নের দাবিও জানানো হয়েছে। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়, এটি বহু প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল। প্রতিবছর শীতে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত থাকত এর জলাশয়গুলো। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩৫ বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ জলাশয় এবং ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ গাছপালাবেষ্টিত অঞ্চল হারিয়ে গেছে। ফলে অতিথি পাখির উপস্থিতিও এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ রনগর ব প রকল প গ ছ উপড় পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবী (সা.)-কে নিয়ে জাবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। এ অভিযোগ ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে নবীনদের আবাসন সংকট নিরসনে ছাত্রশিবিরের ৪ দাবি

চবি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা, ‘রাসূলের অপমান, সইবে নারে মুসলমান’, ‘শাতিমের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘বিচার চাই, শাতিমের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। 

সমাবেশে বাংলা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা আজ ব্যথিত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এই কটুক্তি আমাদের মনে শতগুণে বেশি আঘাত করেছে। প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাই, রবিবারের মধ্যে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে নিন্দা জানিয়ে তৌফিক নাবিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)–কে নিয়ে কটূক্তি করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোটি মুসলমানের হৃদয়ে গভীর আঘাত হেনেছে। এই জঘন্য আচরণ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

তিনি বলেন, “আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে জোর দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এই ছাত্রের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমরা আশা করি, প্রশাসন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে, যেন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা যায়। ধর্মীয় অনুভূতির অপমান কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়, এটি অপরাধ। এই অপরাধের বিচার হতেই হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, স্পর্শকাতর এবং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই ঘটনার সত্যতা নিরূপণে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তৌফিক নাবিল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি এই পোস্ট করিনি। কেউ আমার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম. রাশিদুল আলম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চিঠি দিয়েছে। আমি সেটি উপাচার্য স্যারের কাছে ফরওয়ার্ড করেছি এবং তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ
  • গাছ কাটার প্রতিবাদে জাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি
  • জাবিতে ফের উপড়ে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও উপড়ে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
  • মহানবী (সা.)-কে কটুক্তি: জাবি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটি
  • মহানবী (সা.)–কে কটূক্তির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার
  • মহানবী (সা.)-কে নিয়ে জাবি শিক্ষার্থীর কটুক্তি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ