চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৫৪ জন, যার মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ২৬৯ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৮৫ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, যার মধ্যে শিশু-কিশোরী ৬২ জন। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮১৯ নারী ও ৭৩৬ শিশু ও কিশোরী।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে।
বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জানান, কেবল জুনে ১১৬ নারী ও ৮৭ জন কন্যাসহ ২০৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৬৫ জনের মধ্যে কন্যাশিশু ৪৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮ জন, এদের মধ্যে ৫ জন কন্যা। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, যার মধ্যে ২ জন কন্যা। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ কন্যাশিশু।
উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৫ জন নারী ও কন্যা; যার মধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ১৩ জন কন্যাসহ ৬৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন কন্যাসহ ১১ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৩ নারী, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন ১ জন নারী। ৩ জন নারী অগ্নিদগ্ধ (যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে), যৌতুক নির্যাতনের শিকার ১ নারী এবং পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৬ কন্যাসহ ২২ জন। অপহরণ হয়েছে ২ কন্যা, সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১ জন এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি।
সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ কিশোরী। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৭ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার ৫১ জন। ৩১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২১ নারী ও কন্যাশিশু পাচার হয়েছেন। একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার। ৬১ কন্যাসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৩২০ নারী ও কন্যাশিশু।
সংগঠনের সভাপতি ডা.
তিনি বলেন, ছয় মাসে হাজারের বেশি নারী-কন্যা নির্যাতনের শিকার হলেও মহিলা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আছিয়া ধর্ষণ মামলায় তড়িঘড়ি করে বিচার হয়েছে, কিন্তু ভালো তদন্ত না হওয়ায় পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এ ধরনের বিচারে দ্রুততা নয়, নির্ভুলতা জরুরি। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ন র ল হক ন র হয় ছ ন ১ জন ন র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: গ্রেপ্তার হয়নি মূল আসামিরা
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝর্ণা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার হয়নি মামলার হয়নি মূল আসামিরা। এদিকে মামলার আসামিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। একই দাবিতে উপজেলার মোল্লা পুকুর এলাকায় মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার দুই নম্বর আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ইকবাল হোসেন লিটন ও সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার আসামিদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে তজুমদ্দিন বাজারে মানববন্ধন করে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।
মানববন্ধনে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ রিন্টু জানান, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানোনো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এছাড়া এ মামলায় রাসেল নামে একজন আসামি রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ওই রাসেলের পরিবর্তে ছাত্রদল নেতা রাসেলকে জড়িয়ে প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। এসব অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মিন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন জুলফিকার, জাহাঙ্গীর আলম।
একই সময়ে মোল্লা পুকুর এলাকায় স্থানীয়রা আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ওমর আসাদ রিন্টু জানান, আওয়ামী লীগের কিছু লোক অপপ্রচার করতে গেলে সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে আদালতের পুলিশ পরিদর্শক শেখ মো. নাসির উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তার ঝর্ণা বেগমকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীকে সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। রাতেই তার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে যান।
মামলার বাদী ওই নারীর স্বামী জানান, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ চলছে। এ নিয়ে কথা বলার জন্য শনিবার রাতে ফোন করে তাকে তজুমদ্দিন বাজার এলাকায় যেতে বলেন ওই নারী। সেখানে পৌঁছানোর পর শ্রমিক দলের নেতা ফরিদ উদ্দিন, তার সহযোগী আলাউদ্দিন, ছাত্রদল নেতা রাসেলসহ ৫ থেকে ৭ জন তাকে মারধর করে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেয়ে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে পরদিন রোববার বেলা ১১টায় ওই ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী সেখানে গিয়ে আসামিদের ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু এতে খুশি হননি ফরিদ ও তার লোকজন। ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে নির্যাতন করতে থাকে তারা।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, দুপুর ১২টায় তার স্বামীকে জোরপূর্বক বাসার বাইরে নিয়ে যায় আসামিদের কয়েকজন। এ সময় ওই বাসার একটি কক্ষে ফরিদ ও আলাউদ্দিন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। তখন ঘরের বাইরে পাহারায় ছিল মারধরের শিকার ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী। ভুক্তভোগী নারী আসামিদের ‘ভাই’ ডেকেও রক্ষা পাননি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে বিকেলে মুক্তি পান স্বামী-স্ত্রী। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ওই নারী। তবে স্বজনদের কারণে তিনি তা করতে পারেননি। প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই রাতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে তজুমদ্দিন থানা পুলিশ গিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে।