ইসরায়েলি সেনারা তাঁর বাবা-ভাইকে মারল, পরিবারের জীবিত সদস্যদের উপহাস করল
Published: 3rd, July 2025 GMT
ছোট একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। এর মধ্যে গাদাগাদি করে রয়েছে ক্ষুধার্ত আর আতঙ্কিত কয়েকজন মানুষ। এলাকা কাঁপিয়ে চলেছে ইসরায়েলি সেনাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ।
হাদিল সালেহ ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য ২০২৪ সালের মার্চ মাসের বেশ কয়েকটি দিন এভাবেই পার করছিলেন। গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় সে সময় ইসরায়েলের সেনাদের তীব্র অভিযান চলছিল।
এরই মধ্যে একদিন আচমকা হাদিলদের বাড়িতে হানা দেয় কয়েক ডজন ইসরায়েলি সেনা। সৈন্যরা হাদিলের ৬০ বছর বয়সী বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর বড় ভাই বাবাকে সাহায্য করতে ছুটে গেলে সেনারা তাঁকেও গুলি করে মেরে ফেলে।
নৃশংস এ হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সৈন্যরা আশপাশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। যারা বেঁচে যায়, তাদের পালাতে বাধ্য করে সেনারা।
ভয়ঙ্কর ওই হামলার এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনার বিভিন্ন সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে। ভয়াবহ সেই ঘটনা হাদিলকে এখনো মানসিকভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যে বাসায় তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে এখনো তিনি ফিরে যেতে পারেননি। বাসাটির বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি সে রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সেটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় দিন।
আল-শিফা হাসপাতাল অবরোধ
হাদিল সালেহ বলেন, আরও আগে আরেকটি বোমা হামলায় তাঁদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এর জেরে যুদ্ধের প্রথম বছরে তাঁদের পরিবার একাধিকবার পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়।
হাদিলদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ছিল আল-শিফা হাসপাতালের কাছে হাইদার আবদেল শাফি মোড়ের পাশের একটি অ্যাপার্টমেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। এটা ছিল আমাদের দশমবারের মতো গৃহহারা হওয়া। পবিত্র রমজান মাসে ওই ঘটনা ঘটেছিল। পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছুই প্রায় ছিল না।’
২০২৪ সালের ১৮ মার্চ নিশুতি রাতে ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে বড় ধরনের অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ করা হয়।
ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও সামরিক যান দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। এরপর সৈন্যরা হাসপাতাল চত্বরের আশপাশের ভবনগুলোতে হামলা চালায়। তারা সামনাসামনি মানুষজনকে গুলি করে হত্যা করে, জীবিতদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
ইসরায়েলি হামলায় প্রিয়জন হারানো ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি। ২৯ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আশপ শ র আল শ ফ
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ