বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহতের অভিযোগ
Published: 3rd, July 2025 GMT
নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মো. ইব্রাহিম (৩৭) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিজিবি এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার ভোরে নিতপুর সীমান্তের ২২৮ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে ৫০০ গজ ভারতের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইব্রাহিম সাপাহার উপজেলার রোদগ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে। স্থানীয় ও পরিবার সূত্র বলছে, বুধবার রাতে ইব্রাহিম সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে যান মহিষ আনতে। ভোরের দিকে তিনি একজোড়া মহিষ নিয়ে ফেরার পথে ভারতের আগ্রাবাদ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইব্রাহিম। দুপুরে বিএসএফ সদস্যরা তাঁর লাশ উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
সাপাহার থানার ওসি আব্দুল আজিজ জানান, দুপুরের দিকে পোরশা থানার ওসি তাঁকে জানিয়েছেন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহতের কথা।
পোরশা থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি জানার পরই ইব্রাহিমের নাম-ঠিকানার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পোরশা থানার ওসিকে জানিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। তবে এখনও সত্যতা যাচাই করা যায়নি। বিজিবি ঘটনার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তবে ভারতের আগ্রাবাদ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা এই ঘটনার দায় অস্বীকার করেছেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। তবে বৈঠকের সময় এখনও জানানো হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এসএফ ন হত ব এসএফ র
এছাড়াও পড়ুন:
অন্ধকারের হয়নি অবসান
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিবর্ণ চিত্র লইয়া বরাবরই আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া আসিতেছি। দুঃখজনক হইলেও সত্য, উহা যেন অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত; পরিস্থিতির প্রত্যাশিত পরিবর্তন হয় না বলিলেই চলে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যানে প্রতিভাত– চলতি বৎসরের জানুয়ারি হইতে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সমগ্র দেশে বিভিন্নভাবে দেড় সহস্রাধিক নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হইয়াছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্ষণের শিকার। সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করিয়া সংস্থাটি এই তথ্য প্রকাশ করিয়াছে, যাহার অর্থ প্রকৃত নির্যাতনের চিত্র নিশ্চয় আরও অধিক হইবে। এহেন নারী নির্যাতনকে আর চলিতে দেওয়া যায় না। ইহাকে শূন্যে অবনমনই প্রত্যাশিত।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাহা মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে উঠিয়া আসিয়াছে; নারী ও কন্যা নিপীড়নের এই পরিস্থিতিতেও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেহ প্রতিক্রিয়া দেন নাই। নির্যাতনের বাড়বাড়ন্ত পরিস্থিতিতেও কীভাবে তাহারা নীরব রহিয়াছেন? আমরা দেখিয়াছি, মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ মামলায় অত্যন্ত দ্রুততায় বিচার হইয়াছে বটে, কিন্তু যথাযথ তদন্ত না হইবার কারণে পরিবার সন্তুষ্ট হইতে পারে নাই। আমরা ইহাও দেখিয়াছি, দেশে ধারাবাহিক ধর্ষণের ঘটনায় মার্চ মাসে দেশব্যাপী যখন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলিতেছিল তখন অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য দ্রুত নিষ্পন্নকরণে বিদ্যমান আইনে পরিবর্তন আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিচারকার্য বিলম্বিত না করা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা মনে করি, এই প্রকার বিচারে দ্রুততার সহিত নির্ভুলতাও জরুরি। এমনকি আলোচ্য পরিসংখ্যানে উঠিয়া আসিয়াছে, উত্ত্যক্তের শিকার দুইজন আত্মহত্যা করিয়াছেন। অগ্নিদগ্ধ ও এসিডদগ্ধের বীভৎসতা এখনও বিদ্যমান। এমনকি যৌতুকের কারণে এখনও নারীগণ নির্যাতিত হইতেছেন। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হইতেছেন নারীরা এবং বহুল বিস্তৃত আন্তর্জালে সাইবার অপরাধ হইতেও নারীর যেন নিষ্কৃতি নাই। নিপীড়নের এই সকল ধরনই বলিয়া দিতেছে, সমাজে এখনও কতটা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা প্রকট। কীভাবে নারী প্রায় সর্বত্রই অনিরাপদ।
আমরা জানি, দেশের নারীগণ সমাজের বহু যুগের বন্ধ অর্গল ভাঙিয়া অগ্রগামী। নারী নির্যাতন তাহাদের এই অগ্রগামিতাকে ভয়ানকভাবে রুদ্ধ করিতেছে। আমরা চাই, নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করিয়া উহাদের অগ্রসর হইবার পথ উন্মুক্ত করা হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী এবং তাহাদের পশ্চাতে রাখিলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হইতে বাধ্য। নারী যাহাতে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তিরূপে ভূমিকা রাখিতে পারে, তজ্জন্য তাহাদের দমন-নিপীড়নমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করিতে হইবে।
বলা বাহুল্য, নারী নির্যাতন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জরুরি। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে যাহারা দায়িত্ব পালন করেন তাহাদের নারীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া আবশ্যক। ধর্ষণসহ সকল নির্যাতনের ঘটনায় বিদ্যমান কঠোর আইন তাহাদের সদিচ্ছাতেই বাস্তবায়ন সম্ভব। সমাজের জাগরণও এই ক্ষেত্রে জরুরি।
ইহা নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়া থাকে। স্বীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিপীড়নের শিকার হইলে সঙ্গে সঙ্গে যাহাতে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারে, তজ্জন্য সচেতনতাও জরুরি। সেই ক্ষেত্রে নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করিতেই হইবে। সম্প্রতি বাল্যবিবাহের কারণে বিদ্যালয় হইতে নারী শিক্ষার্থীর ঝরিয়া পড়িবার যেই চিত্র দেখা গিয়াছে, উহা গ্রহণযোগ্য নহে। এই বিষয়েও কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরি।
সাইবার অপরাধ নারী নির্যাতনের নূতন যেই ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত, সেইখানেও সামাজিক মাধ্যমসহ আন্তর্জাল ব্যবস্থাপনায় তাহাদের সতর্ক হইতে হইবে। সর্বোপরি আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহি নিশ্চিত করিলে নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করিতে পারে।