দেশীয় প্রসাধনী ও ত্বক পরিচর্যাকারী পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প রক্ষা ও রপ্তানিমুখী খাতে রূপান্তরে সরকারের কঠোর দিকনির্দেশনা চেয়েছেন এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভেজাল প্রসাধনী, শুল্ক ফাঁকি, মূল্য কম দেখানো ও অসাধু আমদানিকারকদের কারণে দেশীয় প্রসাধনশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। প্রসাধনী খাত ক্রমেই আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এএসবিএমইবি আয়োজিত ‘কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্প খাতের রপ্তানি সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার। এএসবিএমইবির এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরাত দিয়ে সংগঠনটি জানায়, কালার প্রসাধনী খাতে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। মূল্য কম দেখানো এবং ওজনে ফাঁকি না দিলে প্রকৃতপক্ষে এই আমদানি ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে আমদানিতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। বিগত অর্থবছরে প্রসাধনী আমদানিকারকেরা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে মাত্র ১৭ কোটি টাকা। আর উৎপাদক হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানই রাজস্ব দিয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে এএসবিএমইবির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, ‘ভেজাল ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি। বিদেশের মেয়াদহীন পণ্য দেশে এনে নতুন করে স্টিকার লাগিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। ভোক্তাদের তাই এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।’

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আলিম আখতার বলেন, ‘ভোজ্যতেল, কসমেটিকস, খাদ্যপণ্য—তিন ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পণ্যর মান নিয়ে প্রতারণা হচ্ছে। আজকে যে ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়, কালকেই সে আবার একই আইন ভাঙছে। এই বাস্তবতা বদলাতে না পারলে শুধু জরিমানা দিয়ে কিছু হবে না।’

সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের মানুষ বিদেশি পণ্যে যতই দাম হোক, তাতে তেমন আপত্তি করেন না। কিন্তু যখনই কোনো দেশি ব্র্যান্ড বাজারে আসে, তখন আমরা দামাদামি করি। বাংলাদেশের উৎপাদকেরা খুব অল্প মুনাফায় ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। এটা আমাদের দেশে শিল্পায়নের পথে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কসমেটিকস পণ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়, যেগুলোর ওপর এখনো উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান। প্রয়োজনীয় কাঁচামালে শুল্ক কমিয়ে দেশি শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে, পাশাপাশি বিদেশি প্রস্তুত পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ইসহাকুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে পণ্যের মানদণ্ড সরকার নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে চিত্রটা উল্টো। এখানে ব্যবসায়ীরা জমি কেনে, রাস্তা তৈরি করে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংযোগ নিয়ে আসে, সরকারকে করও দেয়। সবশেষে ব্যবসাটা কীভাবে চলবে, সেটাও আমাদের ভেবে নিতে হয়। নীতিনির্ধারণী জায়গায় সরকারের ভূমিকা না থাকায় পুরো চাপ এসে পড়ে উদ্যোক্তাদের ওপর। ব্যবসায়ীরা দেশের ভেতরে পুঁজি ও শ্রম দিয়ে শিল্প তৈরি করছে। আর সরকার আমদানিনির্ভর বাজেট করছে।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন, ত্বকবিশেষজ্ঞ শারমিনা হক, এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আলী জামান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এএসব এমইব ব যবস য় সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গত অর্থবছরে রপ্তানি ৯% বেড়েছে

সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির গতি ছিল বেশ সন্তোষজনক। আগের অর্থবছরের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঈদের ছুটি ছিল ১০ দিন।

এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে শেষ দুই কর্মদিবসে রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এ কারণে জুন মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ বাস্তবতার মধ্যেই গড়ে ৯ শতাংশের মতো রপ্তানি আয় বেড়েছে গত অর্থবছরে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, রপ্তানির পরিমাণের দিক থেকেও সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের রপ্তানি আয় গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অর্থবছরটিতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এর চেয়ে বেশি ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার রপ্তানি থেকে আয় এসেছিল। অবশ্য ওই অর্থবছর পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে গোঁজামিলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির সংশোধিত হিসাবমতে, গত ১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেশি দেখানো হয়েছে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৭ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। 

ইপিবির প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে একক পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক থেকেই এসেছে ৩ হাজার ৩৩৫ কোটি ডলার। বাকি সব পণ্য থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৯৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছর তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২০ কোটি ডলারের মতো। অবশ্য ঈদের ছুটির কারণে গত জুনে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। রপ্তানি হয় ২৭৯ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য। 

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ও হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দিন সমকালকে বলেন, ঈদের ১০ দিনের ছুটির কারণে জুনে রপ্তানি কম হয়েছে। এর মধ্যে অন্য আর কোনো কারণ নেই। ছুটির কারণে পণ্য জাহাজীকরণ কয়েকদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে আবার সেটা পুষিয়ে যাবে। জুনে কমলেও চলতি জুলাই মাসে রপ্তানি আয় বেশ বাড়তে পারে। কয়েক মাস ধরে ব্র্যান্ড ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ভালো সাড়া  পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি। 

গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। রপ্তানি হয় ১১৫ কোটি ডলারের পণ্য। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো। রপ্তানি হয় ৯৯ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি ৪ শতাংশ কমে রপ্তানি ৮৫ কোটি ডলারে। হোমটেক্সটাইলের রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি হয় ৮৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের হোমটেক্স পণ্য। এ ছাড়া হিমায়িত মাছ এবং চিংড়ির রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৪৪ কোটি ডলারের পণ্য। এসব বড় পণ্যের বাইরে রপ্তানি তালিকার প্রায় সব পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছর। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাবিপ্রবিতে ২০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
  • তিন কারণে হঠাৎ বরখাস্ত হলেন চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার
  • গত অর্থবছরে রপ্তানি ৯% বেড়েছে
  • দুই কারণে জুনে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৭%
  • সরকারি অনুদানে মূলধারার সিনেমা উপেক্ষিত, ক্ষোভ প্রকাশ নায়ক-পরিচালকের
  • অনিশ্চয়তা আর চ্যালেঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কম
  • চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড
  • কনটেইনার পরিবহনে রেকর্ড চট্টগ্রাম বন্দরের
  • ইতিহাসের সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করল চট্টগ্রাম বন্দর