কুষ্টিয়ার খোকসায় গুলির পর যুবককে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা
Published: 3rd, July 2025 GMT
কুষ্টিয়ার খোকসায় পূর্ব বিরোধের জেরে এক যুবককে গুলি করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাসান (৩৮) নামে এক যুবককে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার পর উপজেলা সদরের পৌর এলাকার পাতেলডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত হাসান পাতিলডাঙ্গী গ্রামের লোকমান মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার।
আরো পড়ুন:
দৌলতপুরে পরীক্ষা দিতে এসে হামলার শিকার ২ শিক্ষার্থী
যেখানে সাঁইর বারামখানা
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাতেলডাঙ্গী গ্রামের রাস্তায় হাসানকে (৩৮) লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হাসান রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় সন্ত্রাসীরা। ৫-৬ জন সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশ নেয়।
গুলির শব্দ ও আহতে যুবকের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। পরে রাতেই তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে স্থানান্তর করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানা থেকে ঘটনাস্থল দেড় কিলোমিটার দূরত্ব হলেও পুলিশ পৌঁছায় কয়েক ঘণ্টা পরে।
আহত যুবক হাসানের বাবা লোকমান হোসেন পুলিশের সামনেই গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সন্ত্রাসী রাজন ও জনি তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারাই হাসানকে প্রথমে গুলি করে এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, রাতে তার ছেলে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তার ছেলের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীরা দুই রাউন্ড গুলি চালায় এবং তার ছেলে হাসান গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। গ্রামবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পশ্চিমের মাঠ নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
তিনি আরো জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তার জমি থেকে এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বাহিনী প্রধানের দেহরক্ষি জনির বাবা জাহিদকে ঘাস কাটাতে বাধ দেয় হাসান। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ করে। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে তদন্ত করে বিচার করবেন বলে জানায়। এরপর থেকে সন্ত্রাসী জনি ও তার মদতদাতারা হাসানকে হত্যার হুমকী দিয়ে আসছিল।
তিনি ছেলের উপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি করেন। একইসঙ্গে তিনি মামলা করবেন বলেও জানান।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম আগের ঘটনায় থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, “দুই পক্ষই তাদের ওই অভিযোগ ফেরত নিয়েছিলেন।”
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান রাজন ও তার দেহরক্ষি জনির বিরুদ্ধে এক সংখ্যালঘু পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি ও দোকান ঘর দখল করে নেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা আছে। এর আগে, অন্য একটি সন্ত্রাসী ঘটনায় জনির বাবা জাহিদকে আটক করা হয়েছিল।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান