ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ যেভাবে ঘটছে, তাতে নাগরিকেরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক হবে, কেউ ভাবতে পারেননি।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তাঁর কাছে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একই দিন সাভারের আশুলিয়ার বাসায় একজন অভিনেতা ও তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা।

ধর্ষণের প্রতিবাদে রোববার আসাদগেটে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ-মিছিল করেন।

রোববার দিবাগত রাত তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরদিন আইজিপি বাহারুল আলম ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রাতে ছিনতাই বেড়েছে। দিনেও ছিনতাই বেড়েছে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে আর আইজিপি বললেন, দিনে-রাতে ছিনতাই বেড়েছে। নাগরিকেরা কার কথায় আস্থা রাখবেন?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা যদি দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়, তাহলে সরকার তাদের ধরছে না কেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলার পরও ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিও বেড়ে চলেছে, এর ব্যাখ্যা কী? এই অভিযান কি তবে লোকদেখানো?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন সবকিছুর দায় আওয়ামী লীগের দোসরদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, তখন বাস্তব অবস্থা কী? বাস্তব অবস্থা হলো, হাটে ঘোষণা দিয়ে একটি দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদেরকে খাজনা দেওয়ার জন্য দোকানদারদের নির্দেশ দিয়েছেন, সড়কের ওপর প্রকাশ্যে দম্পতিকে কোপাচ্ছে এলাকার মাস্তানেরা, চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, নারীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি, আনসার এমনকি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। তারপরও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন, সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে।

প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বহু শীর্ষ সন্ত্রাসী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদও খোয়া যায়। এসব অপরাধীকে না ধরে এবং খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি আশা করা যায় না। অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশ বাহিনীর ভেঙে পড়া মনোবল পুনরুদ্ধারের কাজটিও সরকার যথাযথভাবে করতে পারেনি।

অতীতে রাজনৈতিক সরকারগুলো যেকোনো অভিযান চালানোর সময় বিরোধী দলকে লক্ষ্যবস্তু করত। অপরাধী ধরা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা। কিন্তু এই সরকারের তো রাজনৈতিক অভিলাষ থাকার কথা নয়। গাজীপুরের যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে, সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে।

এদিকে সোমবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘টের পাওয়ার’ মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করতে চাই, সরকার দল-মতনির্বিশেষে অপরাধীদের ধরবে। আওয়ামী লীগের দোসররা অপরাধ করলে সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এর অর্থ এই নয় যে বাইরের অপরাধীরা রেহাই পাবে। এত অভিযানের পর নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র আওয় ম অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও হবে একই দিন। ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারেরাও পোস্টাল ব্যলটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো ইসি।

শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কিছু দল। গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন।

এরপর থেকে সরকার বারবার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি।

ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫৬টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর বাইরে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন
  • আওয়ামী লীগ যাঁদের টার্গেট করেছে, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি তাঁদের অন্যতম: রাশেদ খান
  • প্রাইম সাসপেক্টকে খুঁজছি, হোপফুলি হিট করতে পারব: ডিএমপি কমিশনার
  • তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ
  • হাদিকে গুলির নিন্দা–প্রতিবাদ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
  • নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ অনেকটাই দূর হয়েছে
  • দিনাজপুরে যক্ষ্মা না থাকলেও রোগী, কফের নমুনায় জালিয়াতি
  • বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
  • তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি
  • জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি