গাড়ি, মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক যানবাহন কিংবা মোটরের যন্ত্রাংশ; তার সবই ছিল রাজধানীর আইসিসিবির চারটি হল জুড়ে আয়োজিত দেশের ১৮তম মোটর শোতে। তাই মোটরযানপ্রেমীদের কাছে এই প্রদশর্নীর ছিল বাড়তি আকর্ষণ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্টলে শুধু গাড়ি ও মোটরসাইকেল প্রদর্শন নয়, উপস্থাপনাতেও ছিল ভিন্নতা। তবে ক্রেতাদের আগ্রহ ও ভিড় ছিল ২ নম্বর হলের মোটরসাইকেলের স্টলগুলো ঘিরে। সেমস গ্লোবাল তিন দিনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। আজ শনিবার ছিল মোটর শোর শেষ দিন।

মোটরসাইকেলের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ছিল বাজাজ, স্পিডোজসহ ডংজিন গ্রুপ ও সালিদা ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল। সরেজমিনে দেখা যায়, মোটরসাইকেল প্রদর্শনীর দুই–তৃতীয়াংশ দখলে ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল।

বাংলাদেশে প্রায় দুই বছর ধরে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে চীনা প্রতিষ্ঠান সালিদা ইলেকট্রিক ভেহিকেল। মূলত ৬০০ থেকে ৩ হাজার ওয়াটের মোট ১২টি মডেলের মোটরসাইকেল বাজারে পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক এ মোটরসাইকেলগুলো একবার চার্জে ৮০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। চীনা এ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতিটি মোটরসাইকেল চাইলে চাবি ছাড়া এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) কার্ড দিয়ে চালানো যাবে।

আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান ডংজিন আট বছর ধরে দেশের বাজারে ব্যাটারি বিক্রি করে আসছে। তারাও এ বছর দেশের বাজারে সাতটি মডেলের বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বাজারে নিয়ে এসেছে। চীন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে দেশে সংযোজন করা হয় এ প্রতিষ্ঠানের মোটরসাইকেলে। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কিলোওয়াটের একেকটি মোটরসাইকেলের দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।

ডংজিনের বিক্রয় নির্বাহী জাহিদ হাসান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। তাই এ বছর আমরা সাতটি মডেল বাজারে এনেছি। মেলায় বেশ সাড়া পেয়েছি। পরিবেশবান্ধব ও দাম কিছুটা কম হওয়ায় দিন দিন বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা বাড়ছে।’

মোটর শোতে যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছিলেন জামাল উদ্দিন। মোটরসাইকেল দেখতে আসা এই তরুণ প্রথম আলোকে জানান, এবারের আয়োজনে নতুন অনেক মোটরসাইকেল এসেছে। মেলায় বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের সংগ্রহ বেশি। দামও অনেকটা নাগালের মধ্যে।

এবারের ঢাকা মোটর শোতে উত্তরা মোটরসের বাজাজ পালসার এফ২৫০ ডুয়েল চ্যানেল এবিএস মোটরসাইকেলের উদ্বোধন করা হয়। ২৫০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলটির বাজারমূল্য ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্পিডোজ লিমিটেড বাজারে এনেছে জিপিএক্স ও কিউজের এবিএস ও ননএবিএস মডেলের মোটরসাইকেল। এগুলোর দাম ২ লাখ ২৪ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ টাকা। এ ছাড়া বিখ্যাত মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশের প্রতিষ্ঠান আরসিবির স্টলেও ছিল তরুণ বাইকারদের চোখে পড়ার মতো ভিড়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ