হাজার কোটি টাকার মুনাফার ঘরে ব্র্যাক এবং সিটি ব্যাংক
Published: 3rd, May 2025 GMT
রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ ব্যবসা ক্ষেত্রে নানা সংকটাবস্থার মধ্যেও হাজার কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের দেশি দুই ব্যাংক ব্র্যাক এবং দ্য সিটি। ব্র্যাক ব্যাংক ২০২৪ সালে এককভাবে নিট ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। দ্য সিটি ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা ।
এতদিন বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের কথা শোনা গেলেও এবারই প্রথম দেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই মাইলফলক অতিক্রমের তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু প্রতিষ্ঠানগত সাফল্য নয়, ব্র্যাক এবং সিটি ব্যাংকের এ অর্জন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতেও রেকর্ড।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, এ সাফল্য গ্রাহক, সমাজ ও দেশের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক এখন এক আস্থার নাম। করপোরেট সুশাসন, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধনির্ভর ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, মানুষ সিটি ব্যাংকের ওপর আস্থা রেখে আমানত রেখেছে। আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৪২ শতাংশে এসেছে। ফলে মুনাফায় বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। ব্যাংকে ঈর্ষণীয় পর্যায়ের সুশাসন রেকর্ড মুনাফা অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। একই সময়ে দ্য সিটির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। উভয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১২ শতাংশ করে বোনাস (স্টক) লভ্যাংশসহ মোট ২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আর্থিক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ থেকে বড় অঙ্কের সুদ আয় ব্র্যাক ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকের মুনাফা বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্র্যাক ব্যাংক সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগে ২০২৩ সালে সুদ আয় করে ৫৩৪ কোটি টাকা, যা গত বছর বেড়ে ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সার্বিকভাবে ব্র্যাক ব্যাংক ঋণ দিয়ে গত বছর সুদ আয় করেছে ৫ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। বিপরীতে গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করেছে ৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯৮ শতাংশ বেশি।
সিটি ব্যাংকের মোট আয়ের ৬৪ শতাংশ এসেছে ঋণ থেকে পাওয়া সুদ থেকে। ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে এসেছে ১৯ শতাংশ। ফি এবং এলসি কমিশন থেকে এসেছে ১২ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ এসেছে বন্ড, ডিভিডেন্ড এবং শেয়ারবাজার থেকে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’