জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক লেনদেন সেবা পেপ্যাল আসবে? পেপ্যাল আসার ক্ষেত্রে কী সমস্যা? পেপ্যাল কি আসলে আসবে? কবে আসবে? এমন কথাবার্তা অনেক বছর ধরেই চলছে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেপ্যাল আর বাংলাদেশে আসে না। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আবার আলোচনায় আসে পেপ্যাল। শোনা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে পেপ্যাল আসবে। আর এই পেপ্যাল আসা নিয়ে এখনো যেন আলোচনা থামছেই না।
তবে পেপ্যাল এখন কোন অবস্থানে আছে, গতকাল শনিবার রাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো আপডেট (হালনাগাদ) নেই। আমরা চেষ্টা করছি, তবে দৃশ্যমান (ভিজিবল) কোনো আপডেট নেই।’
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী হিসেবে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব দায়িত্ব পেয়েছেন। মার্চ মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি পেপ্যাল নিয়ে কথা বলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘আগের সরকার পেপ্যাল বিষয়ে নাগরিকদের মিথ্যা কথা বলেছে। আসলে পেপ্যাল আসবে—এ কথা বলে বিশাল বিশাল দল বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্র ঘুরতে গেছে। আরও বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে, অর্থের অপচয় করেছে। পেপ্যাল না আসার বেশ কিছু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ আছে। একটা প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে আমাদের এখানে ফাইন্যান্সিয়াল সেটেলমেন্টের ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ অনলাইনে স্ক্যাম হলে বিএফআইও ২৪/৭ সাপোর্ট দিতে পারে না। এমন কোনো দল বা ইউনিটই নেই আমাদের। অর্থাৎ আর্থিক নিরাপত্তার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল স্ক্যামের ২৪ ঘণ্টার কোনো কল সেন্টার বা এ ধরনের কোনো সুবিধা নেই। এটা একটা কারিগরি সমস্যা।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সেই সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘এরপর আছে ঠিকানা নিশ্চিতকরণ (অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন)। আমাদের নাগরিকদের অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন নেই। পেপ্যাল এখনো অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশনের ভিত্তিতে কাজ করে। ফলে এটা একটা বড় সমস্যা। আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে, পেপ্যাল একটা মার্কেটপ্লেস। এটা শুধু একটি পেমেন্ট গেটওয়ে নয়। এখানে লেনদেন দ্বিমুখী হতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কেবল একমুখী লেনদেন অনুমোদন দেয়, তাহলে পেপ্যাল আসবে না। এর বাইরেও কারণ আছে। যখনই আমরা পেপ্যালকে অনুরোধ করি, দেখা যায় সেই অনুরোধ ভারতে চলে যায়। ভারতীয় কর্মকর্তারা কোনো সাড়া দেন না। আমাদের এ রকম বহু পরোক্ষ সমস্যারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমাদের সরকারের আমলে অন্তত দুবার আমরা এর মোকাবিলা করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগ্রহ দেখানো হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও আগ্রহ দেখানো হয়েছিল। সেভাবে আমরা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। তবে আমরা এখন চেষ্টা করছি মার্কিন দূতাবাসকে এখানে যুক্ত করতে। একই সঙ্গে পেপ্যাল সিঙ্গাপুরকে আলাদাভাবে রিচ করতে। কিন্তু পেপ্যাল সিঙ্গাপুরের কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ভারতীয়, সে ক্ষেত্রে তারা অনেক ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে।’
ঢাকার ফ্রিল্যান্সার তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো অনেক বছর ধরেই শুনে আসছি পেপ্যাল আসবে। পরে দেখেছি এটা আসে না। তবে এই সরকারের আমলে আবার যেহেতু কথা উঠেছে পেপ্যাল আসার ব্যাপারে কিছুটা আশা পাচ্ছি। কিন্তু কত দূর এটা বাস্তবায়ন হবে, জানা নেই। কারণ, পেপ্যালের সদর দপ্তরে যখন যোগাযোগ করা হয়, তখন তারা ভারতকেই দেখতে বলে। আর পেপ্যালের এই জায়গাটায় ভারতের লোকজন বসে আছে। যার কারণে না আসার একটা করাণ হতে পারে। এখন পেপ্যাল কতটুকু আসবে, বাংলাদেশে এটা ধোঁয়াশাই। তবে পেপ্যাল আসলে বাংলাদেশে আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সারদের একটা বড় চাওয়া পূরণ হবে।’
মধুপুরের ফ্রিল্যান্সার সুবীর নকরেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হওয়ার প্রতিশ্রুতি বহুবার শোনা গেলেও বাস্তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি। ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য পেপ্যালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। বর্তমানে পেপ্যাল না থাকায় তাঁরা ব্যয়বহুল ও জটিল বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। পেপ্যালের বাংলাদেশে চালু হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, তবে বাস্তবায়নের পথে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
দফায় দফায় পেপ্যাল আসার কথা হয়েছে
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে পেপ্যালের চুক্তি হয়। সেখানেও বলা হয়, বাংলাদেশে পেপ্যাল আসছে। সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তখন জানা গেছে, চুক্তির আওতায় পেপ্যালের মাধ্যমে প্রবাসী আয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ফ্রিল্যান্সারদের আয় সহজে ও নিরাপদে দেশে আনা যাবে।
বাস্তবতা হলো, পেপ্যাল ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও চালু হয়নি। এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় দেশে পেপ্যাল চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। আদতে সেটি ছিল পেপ্যালের একটি সেবা ‘জুম’। জুম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীরা বাংলাদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন।
২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরেই (২০২১) দেশে চালু হতে যাচ্ছে পেপ্যাল। এদিকে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অনুষ্ঠানে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, ‘আমরা পেপ্যালের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি একটি ভালো সংবাদ দিতে পারব। কিন্তু কবে, কখন, কীভাবে পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হবে বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না।’
এখনো পেপ্যালের মতো আন্তর্জাতিক লেনদেন সেবা বাংলাদেশে চালু হওয়া অনিশ্চিত। সরকারি উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে। ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প প য ল আসব প রথম আল ক কর মকর ত উপদ ষ ট ল নদ ন আম দ র সমস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগোল বাংলাদেশ
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়েছে। এবারের সূচকে ১৮০টি দেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। স্কোর ৩৩ দশমিক ৭১। বাংলাদেশ এবার গত বছরের তুলনায় পাঁচটি বিষয়ের (ইন্ডিকেটর) প্রতিটিতে ভালো করেছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস (৩ মে) উপলক্ষে আজ শুক্রবার রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এই সূচক প্রকাশ করেছে।
২০২৪ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। স্কোর ছিল ২৭ দশমিক ৬৪। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ২০২১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ধারাবাহিকভাবে অবনতি হচ্ছিল। ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম। পরের বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থানের ১০ ধাপ অবনমন হয়েছিল। ২০২৩ সালে আরও এক ধাপ পেছায় বাংলাদেশ। পরের বছর পিছিয়েছিল আরও দুই ধাপ। অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালে তিন বছরে সূচকে বাংলাদেশের ১৩ ধাপ অবনমন ঘটেছিল, ১৫২তম থেকে নেমে ২০২৪–এ ১৬৫তম অবস্থানে গিয়েছিল।
১৮০টি দেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে গতবারের মতো এবারও শীর্ষে নরওয়ে