Prothomalo:
2025-08-08@16:40:30 GMT

যমুনার ধারে দেখা পাখিটি

Published: 4th, May 2025 GMT

সুন্দর এই লালঘাড় পেঙ্গা পাখি বাংলাদেশের অল্প কিছু জায়গায় বিস্তৃত। এ পাখি মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বনগুলোতে; বিশেষ করে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন বনে, শেরপুরের গারো পাহাড় ও মধুপুরের জাতীয় উদ্যানে পাওয়া যায়।

গত নভেম্বরে টাঙ্গাইলে যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে নলখাগড়ার ঝোপ এলাকায় পাখি জরিপকাজে বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞ ডক্টর রশিদসহ কয়েকজন অংশ নিয়েছিলাম। সকালে ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখছিলাম ও ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলাম, শালিকের মতো একটি পাখি। এই কম দেখা যাওয়া পাখিটির দেহ লালচে বাদামি এবং মুখ কালো এবং গলার পাশের দিকটায় লাল দাগ দেখতে পেলাম। পাখিটি শালিকও না, আবার বুলবুলিও না।

চেনার জন্য তাই ছুটে গেলাম পাখিটির কাছাকাছি, ততক্ষণে সঙ্গে আরও দুটি পাখি যোগ দিল। আমার হাতে থাকা জুম লেন্সের ক্যামেরা দিয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটি ছবি তুলে পর্যবেক্ষণ করলাম এবং বুঝতে পারলাম, এ তিনটি পাখি হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার ঝোপঝাড়ে মাঝেমধে৵ পাওয়া যায়, এমন একটি পাখি। যেটির ইংরেজি নাম Rufous-necked Laughing Thrush; বাংলা নাম লালঘাড় পেঙ্গা, বৈজ্ঞানিক নাম Garrulax ruficollis। অবাক হলাম কিছুটা; কারণ, এ পাখিটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) পাহাড়ি বনগুলোর ঝোপে পাওয়া যায়। তবে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বেশ কমই আগে দেখা গেছে। মধুপুরে আমি একবার দেখেছি। এই পাখিগুলোর কালচে ধূসর মাথা; কপাল, গাল, গলা ও বুক কালো; ঘাড়ে লালচে পট্টি। চোখ বাদামি, চঞ্চু কালচে বাদামি, পা কালচে বাদামি এবং তলপেট ও লেজের তলায় লাল। ই-বার্ডের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৬৬ প্রজাতির পেঙ্গা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় চার প্রজাতির পেঙ্গা। যেমন ধলাঝুঁটি পেঙ্গা, ছোট মালাপেঙ্গা, বড় মালাপেঙ্গা ও লালঘাড় পেঙ্গা।

তিন থেকে পাঁচটি পেঙ্গা পাখি একত্রে দলবদ্ধ অবস্থায় মূলত বেশি পাওয়া যায়। এরা পতঙ্গভুক ও গায়ক পাখি। মাটিতে শুকনা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় খুঁজে খুঁজে খেয়ে থাকে। তাই ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই প্রজাতির পাখি কীটপতঙ্গ খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রাণী ভক্ষণের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে খাদ্যশক্তি অন্য প্রাণীতে স্থানান্তরে সহায়তা করে। ফলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।

মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পেঙ্গা পাখি প্রজনন করে থাকে। শুকনা ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা তৈরি করে। তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। যদিও এরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাখি; নদীর ধারের কাশবন, জঙ্গল অথবা নলখাগড়া থাকে, এমন বাসস্থান এ পাখির খুবই পছন্দ। তাই এ ধরনের বাসস্থানগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নির্জন এলাকায় বসবাস করতে এরা পছন্দ করে।

পেঙ্গা পাখির বাসস্থান এখন হুমকির সম্মুখীন। এই প্রজাতির পাখির জন্য বাসা বানানোর নিরাপদ স্থান বা বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত গাছের এখন খুবই অভাব। সহজে ও নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারছে না বলে দিন দিন এ পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এদের বাসস্থান সংরক্ষণ ও বাসা বানানোর জন্য পছন্দের গাছ লাগানো এখন খুবই জরুরি। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পতঙ্গভুক এ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাবে।

মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, অধ্যাপক ও প্রাণী-গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা দেশে টিকতে পারবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “জুলাই থাকবে-মীর মুগ্ধ মঞ্চ সেই বার্তাই দিচ্ছে। এটি মনে করিয়ে দেয়, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশে টিকতে পারবে না।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বাস্তবায়িত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরে নির্মিত ‘মুগ্ধ মঞ্চ’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৫-১৭ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও জনগণ কথা বলতে পারবে না বা শাসকগোষ্ঠী প্রশ্নবিহীনভাবে ক্ষমতায় থাকবে। এই মঞ্চ সেই প্রতিবাদের প্রতীক।”

আরো পড়ুন:

সরকার শহীদদের পুনর্বাসন ও স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করছে: আদিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকার: এক বছরে সফলতা ও ব্যর্থতা

শহীদদের বাবা-মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যে দাবিগুলো তুলে ধরেছেন, আমরা তা সমর্থন করি। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো মায়ের বুক খালি হবে না, কোনো বাবাকে আর সন্তানের লাশ কাঁধে বহন করতে হবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলন করব, প্রতিবাদ করব। কিন্তু আমাদের বুকে যারা গুলি চালায়—সেই ধরনের পুলিশ বাহিনী আমরা চাই না।”

২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেছিল—রাষ্ট্রের মেরামত দরকার। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তা আরো একবার প্রমাণ করেছে। তাই বলছি—রাষ্ট্রের মেরামত চলবে এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, নারী শহীদ নাঈমা সুলতানার মা, শহীদ জাবিরের বাবা, জুলাই আহত যোদ্ধা আব্দুল আজিজ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ