Prothomalo:
2025-09-24@22:22:43 GMT

যমুনার ধারে দেখা পাখিটি

Published: 4th, May 2025 GMT

সুন্দর এই লালঘাড় পেঙ্গা পাখি বাংলাদেশের অল্প কিছু জায়গায় বিস্তৃত। এ পাখি মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বনগুলোতে; বিশেষ করে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন বনে, শেরপুরের গারো পাহাড় ও মধুপুরের জাতীয় উদ্যানে পাওয়া যায়।

গত নভেম্বরে টাঙ্গাইলে যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে নলখাগড়ার ঝোপ এলাকায় পাখি জরিপকাজে বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞ ডক্টর রশিদসহ কয়েকজন অংশ নিয়েছিলাম। সকালে ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখছিলাম ও ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলাম, শালিকের মতো একটি পাখি। এই কম দেখা যাওয়া পাখিটির দেহ লালচে বাদামি এবং মুখ কালো এবং গলার পাশের দিকটায় লাল দাগ দেখতে পেলাম। পাখিটি শালিকও না, আবার বুলবুলিও না।

চেনার জন্য তাই ছুটে গেলাম পাখিটির কাছাকাছি, ততক্ষণে সঙ্গে আরও দুটি পাখি যোগ দিল। আমার হাতে থাকা জুম লেন্সের ক্যামেরা দিয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটি ছবি তুলে পর্যবেক্ষণ করলাম এবং বুঝতে পারলাম, এ তিনটি পাখি হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার ঝোপঝাড়ে মাঝেমধে৵ পাওয়া যায়, এমন একটি পাখি। যেটির ইংরেজি নাম Rufous-necked Laughing Thrush; বাংলা নাম লালঘাড় পেঙ্গা, বৈজ্ঞানিক নাম Garrulax ruficollis। অবাক হলাম কিছুটা; কারণ, এ পাখিটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) পাহাড়ি বনগুলোর ঝোপে পাওয়া যায়। তবে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বেশ কমই আগে দেখা গেছে। মধুপুরে আমি একবার দেখেছি। এই পাখিগুলোর কালচে ধূসর মাথা; কপাল, গাল, গলা ও বুক কালো; ঘাড়ে লালচে পট্টি। চোখ বাদামি, চঞ্চু কালচে বাদামি, পা কালচে বাদামি এবং তলপেট ও লেজের তলায় লাল। ই-বার্ডের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৬৬ প্রজাতির পেঙ্গা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় চার প্রজাতির পেঙ্গা। যেমন ধলাঝুঁটি পেঙ্গা, ছোট মালাপেঙ্গা, বড় মালাপেঙ্গা ও লালঘাড় পেঙ্গা।

তিন থেকে পাঁচটি পেঙ্গা পাখি একত্রে দলবদ্ধ অবস্থায় মূলত বেশি পাওয়া যায়। এরা পতঙ্গভুক ও গায়ক পাখি। মাটিতে শুকনা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় খুঁজে খুঁজে খেয়ে থাকে। তাই ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই প্রজাতির পাখি কীটপতঙ্গ খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রাণী ভক্ষণের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে খাদ্যশক্তি অন্য প্রাণীতে স্থানান্তরে সহায়তা করে। ফলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।

মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পেঙ্গা পাখি প্রজনন করে থাকে। শুকনা ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা তৈরি করে। তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। যদিও এরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাখি; নদীর ধারের কাশবন, জঙ্গল অথবা নলখাগড়া থাকে, এমন বাসস্থান এ পাখির খুবই পছন্দ। তাই এ ধরনের বাসস্থানগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নির্জন এলাকায় বসবাস করতে এরা পছন্দ করে।

পেঙ্গা পাখির বাসস্থান এখন হুমকির সম্মুখীন। এই প্রজাতির পাখির জন্য বাসা বানানোর নিরাপদ স্থান বা বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত গাছের এখন খুবই অভাব। সহজে ও নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারছে না বলে দিন দিন এ পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এদের বাসস্থান সংরক্ষণ ও বাসা বানানোর জন্য পছন্দের গাছ লাগানো এখন খুবই জরুরি। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পতঙ্গভুক এ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাবে।

মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, অধ্যাপক ও প্রাণী-গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ