সুন্দর এই লালঘাড় পেঙ্গা পাখি বাংলাদেশের অল্প কিছু জায়গায় বিস্তৃত। এ পাখি মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বনগুলোতে; বিশেষ করে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন বনে, শেরপুরের গারো পাহাড় ও মধুপুরের জাতীয় উদ্যানে পাওয়া যায়।
গত নভেম্বরে টাঙ্গাইলে যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে নলখাগড়ার ঝোপ এলাকায় পাখি জরিপকাজে বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞ ডক্টর রশিদসহ কয়েকজন অংশ নিয়েছিলাম। সকালে ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখছিলাম ও ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলাম, শালিকের মতো একটি পাখি। এই কম দেখা যাওয়া পাখিটির দেহ লালচে বাদামি এবং মুখ কালো এবং গলার পাশের দিকটায় লাল দাগ দেখতে পেলাম। পাখিটি শালিকও না, আবার বুলবুলিও না।
চেনার জন্য তাই ছুটে গেলাম পাখিটির কাছাকাছি, ততক্ষণে সঙ্গে আরও দুটি পাখি যোগ দিল। আমার হাতে থাকা জুম লেন্সের ক্যামেরা দিয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটি ছবি তুলে পর্যবেক্ষণ করলাম এবং বুঝতে পারলাম, এ তিনটি পাখি হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার ঝোপঝাড়ে মাঝেমধে৵ পাওয়া যায়, এমন একটি পাখি। যেটির ইংরেজি নাম Rufous-necked Laughing Thrush; বাংলা নাম লালঘাড় পেঙ্গা, বৈজ্ঞানিক নাম Garrulax ruficollis। অবাক হলাম কিছুটা; কারণ, এ পাখিটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) পাহাড়ি বনগুলোর ঝোপে পাওয়া যায়। তবে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বেশ কমই আগে দেখা গেছে। মধুপুরে আমি একবার দেখেছি। এই পাখিগুলোর কালচে ধূসর মাথা; কপাল, গাল, গলা ও বুক কালো; ঘাড়ে লালচে পট্টি। চোখ বাদামি, চঞ্চু কালচে বাদামি, পা কালচে বাদামি এবং তলপেট ও লেজের তলায় লাল। ই-বার্ডের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৬৬ প্রজাতির পেঙ্গা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় চার প্রজাতির পেঙ্গা। যেমন ধলাঝুঁটি পেঙ্গা, ছোট মালাপেঙ্গা, বড় মালাপেঙ্গা ও লালঘাড় পেঙ্গা।
তিন থেকে পাঁচটি পেঙ্গা পাখি একত্রে দলবদ্ধ অবস্থায় মূলত বেশি পাওয়া যায়। এরা পতঙ্গভুক ও গায়ক পাখি। মাটিতে শুকনা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় খুঁজে খুঁজে খেয়ে থাকে। তাই ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই প্রজাতির পাখি কীটপতঙ্গ খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রাণী ভক্ষণের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে খাদ্যশক্তি অন্য প্রাণীতে স্থানান্তরে সহায়তা করে। ফলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পেঙ্গা পাখি প্রজনন করে থাকে। শুকনা ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা তৈরি করে। তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। যদিও এরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাখি; নদীর ধারের কাশবন, জঙ্গল অথবা নলখাগড়া থাকে, এমন বাসস্থান এ পাখির খুবই পছন্দ। তাই এ ধরনের বাসস্থানগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নির্জন এলাকায় বসবাস করতে এরা পছন্দ করে।
পেঙ্গা পাখির বাসস্থান এখন হুমকির সম্মুখীন। এই প্রজাতির পাখির জন্য বাসা বানানোর নিরাপদ স্থান বা বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত গাছের এখন খুবই অভাব। সহজে ও নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারছে না বলে দিন দিন এ পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এদের বাসস্থান সংরক্ষণ ও বাসা বানানোর জন্য পছন্দের গাছ লাগানো এখন খুবই জরুরি। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পতঙ্গভুক এ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাবে।
মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, অধ্যাপক ও প্রাণী-গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় সমাবেশে আহত সেই শিক্ষিকা মারা গেছেন
ঢাকায় শিক্ষকদের তিন দফা দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়া ফাতেমা আক্তার (৪৫) নামে সেই শিক্ষিকা মারা গেছেন।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় তিনি রাজধানী একটি হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা জান। তিনি চাঁদপুর মতলব উত্তরের ৫ নম্বর ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন।
আরো পড়ুন:
জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন ও ট্যাগিংয়ের অভিযোগ
বগুড়ায় প্রভাষক পরিষদের ‘নো প্রোমোশন নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি
তিনি মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার গ্রামের ঘনিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ মোল্লার মেয়ে ও ঠাকুরচর গ্রামের ডিএম সোলেমাননএর স্ত্রী।
এর আগে, গত ৮ নভেম্বর সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে তিনি প্রচণ্ড আতঙ্কে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন এবং ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের শিক্ষকরা জানান, ফাতেমা আক্তার আন্দোলনের দিন শহীদ মিনারের সামনেও সক্রিয় ছিলেন। সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু হলে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকদিন ধরে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ মারা গেছেন।
রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঠাকুরচর গ্রামে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন শোক প্রকাশ করে বলেন, “আন্দোলনে আহত হওয়ার পর থেকে তিনি যে কষ্টটা সহ্য করেছেন, তা হৃদয়বিদারক। আমরা একজন নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষিকাকে হারালাম। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার মৃত্যুতে উপজেলার শিক্ষক সমাজ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।”
ঢাকা/অমরেশ/মেহেদী