সবুজ চাদরে মোড়া ৭৫৩ একরের সুবিশাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেজে উঠেছে এক বর্ণিল রূপে। গ্রীষ্মের আগমণের সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালু ফুলের নয়নাভিরাম শোভা।
ক্যাম্পাসের পথে ঘাটে, সবুজ প্রাঙ্গণে এখন শুধু এই তিন রঙের ফুলের সমাহার। সবুজ গাছের ডালে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া, হালকা বেগুনী জারুল আর সোনালী রঙের সোনালু মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অসাধারণ দৃশ্য, যা সহজেই নজর কাড়ছে শিক্ষার্থীসহ পর্যটকদের।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফোকলোর চত্বর, পশ্চিমপাড়ার মন্নুজান ও রোকেয়া হল, পূর্বপাড়া মসজিদের পাশে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবন, চারুকলা ও কৃষি অনুষদসহ বহু স্থানে চোখ জুড়ানো জারুল ও সোনালু ফুল রঙ ছড়াচ্ছে।
জারুল ফুলের শান্ত ও স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরো মনোরম করে তুলেছে। হালকা বেগুনী রঙের জারুল ফুলগুলো দীর্ঘ মঞ্জরিতে ঝুলে থাকে, যা ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে এক চমৎকার বৈপরীত্য তৈরি করে।
বিশেষ করে ক্যাম্পাসের ভেতরের শান্ত পথ ধরে হেঁটে গেলে জারুল ফুলের এই সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। লম্বা ঝোপালো সোনালু ফুলগুলি দেখলে মনে হয় যেন কোনো শিল্পী হলুদ রঙের তুলি দিয়ে সবুজ ক্যানভাসে আল্পনা এঁকেছেন। গ্রীষ্মের রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সোনালু ফুলের এই উজ্জ্বলতা বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
তবে ফুলপ্রেমীদের কাছে কৃষ্ণচূড়ার আবেদন যেন সবসময়ই একটু বেশি। এর তীব্র লাল রঙ এবং নজরকাড়া ফুলের গঠন সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে, তখন মনে হয় যেন পুরো ক্যাম্পাস একটি লাল গালিচায় ঢেকে গেছে।
এই ফুলের সৌন্দর্য শুধু ক্যাম্পাসের পরিবেশকেই সুন্দর করে তোলে না, বরং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনেও এক আনন্দময় অনুভূতি জাগায়। গ্রীষ্মের এই সময়ে এক মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া হক মিথি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসটা বরাবরই সুন্দর। তবে গ্রীষ্মের সময়টা যেন আলাদাভাবে চোখে পড়ে। প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার পথে জারুল-সোনালুর রঙ দেখে মনটাই ভালো হয়ে যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন রোডে ছবি তুলছেন ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থী। কথা হয় রাজশাহী শহর থেকে আসা আদিবা জান্নাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমি অনেক সময়ই সুযোগ পেলে আসি এখানে। অনেক বিশাল আর সুন্দর এরিয়া। জারুল ফুলগুলোও দেখতে অনেক ভালো লাগছে। এ জায়গার সৌন্দর্য সবসময় আমাকে মুগ্ধ করে।”
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মারুস হোসেন বলেন, “সোনালুর হলুদ ঝাঁক আর কৃষ্ণচূড়ার টকটকে লাল ফুল—এই রঙের কনট্রাস্টটাই দারুণ লাগে। বিকেলে হাঁটতে বের হলেই মনের ভেতরে এক শান্তি কাজ করে।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।