বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক, অধ্যাদেশের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
Published: 4th, May 2025 GMT
বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন সংক্রান্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার বিধান কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত, অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব এবং নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন খান জিয়াউর রহমান।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিশ্রুতি না রাখার কারণে শুধু পুরুষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের অভিযোগে নারীকে নির্বোধ বা লোভী হিসেবে চিত্রায়ন করা হয়, যা নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও সম্মানের পরিপন্থি। এটি নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি আইন। তাই এই অধ্যাদেশটি বাতিল হওয়া প্রয়োজন। হাইকোর্ট রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন।
গত ৭ এপ্রিল বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বিষয়ে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫‘–এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়। আইনজীবী মো.
গত মার্চে মাগুরায় আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের পর হাসপাতালে মারা যায়। এর প্রতিবাদে সরব হন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তখন ধর্ষণসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় করা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিরও দাবি ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ২০ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে পরে প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৫ মার্চ আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় সংশোধন এনে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি দৈহিক বলপ্রয়োগ ব্যতীত বিবাহের প্রলোভন দেখাইয়া ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম করেন এবং যদি উক্ত ঘটনার সময় উক্ত ব্যক্তির সহিত উক্ত নারীর আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক সাত বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’ এরই ধারাবাহিকতায় আইনের ওই ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল।
পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”
তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”
ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস