বার্কশায়ারের সিইওর পদ ছাড়ছেন ওয়ারেন বাফেট
Published: 4th, May 2025 GMT
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেন ওয়ারেন বাফেট। চলতি বছরের শেষ দিকে সিইওর দায়িত্ব ছাড়বেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই ধনী। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কায় বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় উত্তরসূরির নামও জানান ৯৪ বছর বয়সী বাফেট। সিওই হিসেবে দায়িত্ব নেবেন কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যাান গ্রেগ অ্যাবেল।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। অবসরের ঘোষণা আাসর পর সবাই দাড়িয়ে করতালি দিয়ে সম্মান জানান কিংবদন্তীতূল্য এই বিনিয়োগকারীকে। স্টেজে বাফেটের পাশে থাকা অ্যাবেলকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনিও বাফেটের ঘোষণায় অনেকটা বিস্মিত হয়েছেন। চার বছর আগে বাফেট নিজেই অ্যাবেলকে তার উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেন। তবে তখন তিনি অবসর নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
সিইওর পদ ছাড়ার বিষয়ে অনুষ্ঠানে বাফেট জানান, সিদ্ধান্তটি কেবল তার দুই সন্তান হাওয়ার্ড ও সুসি বাফেট জানতেন। তবে বার্কশায়ারের কোনো শেয়ার বিক্রির কোনো পরিকল্পনাো নেই তার। বাফেট বলেন, ‘আমি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের একটি শেয়ারও বিক্রির কোনো ইচ্ছা রাখি না- একেবারে শূন্য। এগুলো দান করে দেওয়া হবে।’ বাফেটের এমন সিদ্ধান্তকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান সবাই।
ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত। বিবিসি জানায়, ১৯৬৫ সালে বার্কশায়ার প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত আছেন বাফেট। ১৯৭০ সাল থেকে বার্কশায়ারের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। একটি ব্যর্থ টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান থেকে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েকে ১ দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি 'জায়ান্ট' প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন ওয়ারেন বাফেট।
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ৬০টিরও বেশি কোম্পানির মালিক। যার মধ্যে রয়েছে বীমা সংস্থা গেইকো, ব্যাটারি নির্মাতা ডিউরাসেল এবং রেস্টুরেন্ট চেইন ডেইরি কুইন। এ ছাড়া অ্যাপল, কোকা-কোলা, ব্যাংক অব আমেরিকা, আমেরিকান এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা কোম্পানিতে বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে তাদের। গত মাসে প্রকাশিত ব্লুমবার্গের তালিকা অনুসারে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট। ওই তালিকা অনুসারে বাফেটের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫৪ বিলিয়ন ডলার।
ওয়ারেন বাফেট মাত্র ছয় বছর বয়সে প্রথম উপার্জন করেন। প্রথম শেয়ার কেনেন ১১ বছর বয়সে। ১৩ বছর বয়সে প্রথম কর রিটার্ন জমা দেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়েও ওয়ারেন বাফেট গত ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেব্রাস্কা রাজ্যের শহর ওমাহায় সাধারণ একটি বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। বিশ্বের অন্যতম জনহিতৈষী ব্যক্তিও তিনি। দান করেছেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। তাকে ‘ওরাকল’ বা ‘ওমাহার দূরদর্শী’ নামেও ডাকেন অনেকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১১ দাবিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করাসহ ১১টি দাবি জানিয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার (২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান মজুমদার, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দা শাহিনা পারভিন প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছে। এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা জানি, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, একই কারিকুলাম ও সিলেবাসে পাঠদান করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা পেয়ে থাকেন। অবসরে যাওয়ার পর ৩-৪ বছরেও অবসর-সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাচ্ছেন না। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ করার কথা থাকলেও ধারাবাহিকভাবে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের আশপাশে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এই বরাদ্দ ন্যূনতম ৪ শতাংশ করলেই শিক্ষা খাতের বিরাজমান সমস্যার বিরাট অংশ সমাধান করা সম্ভব।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবিগুলো হলো:
১। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও শতভাগ উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা দিতে হবে।
২। ১১টি বিষয়ের ওপর গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের মতো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৩। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে আগের মতো সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু করতে হবে।
৪। বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ করা শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করাসহ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করতে হবে।
৫। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো অবসর-সুবিধা দিতে হবে। এ বিধান না হওয়া পর্যন্ত অবসরে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর তহবিলের টাকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৬। বেসরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে হবে।
৮। শিক্ষা প্রশাসনে বেসরকারি শিক্ষকদের আনুপাতিক হারে পদায়ন করতে হবে।
৯। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
১০। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগও শিক্ষক নিয়োগের মতো এনটিআরসিএ বা অন্য যেকোনো বিকল্প শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে করতে হবে।
১১। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা ও চাকরিতচ্যুতি বন্ধ করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।
ঢাকা/এএএম/রফিক