Prothomalo:
2025-07-03@10:15:24 GMT

দুর্লভ লোহাকাঠের ফুল

Published: 5th, May 2025 GMT

আমাদের দেশে কাঠের জন্য বিখ্যাত যে কটি গাছ আছে, তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর ফুল গামারির। গাছটি কাঠের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় এর ফুলের সৌন্দর্য বরাবরই উপেক্ষিত। তবে কাঠের গাছের ক্ষেত্রে ফুলের সৌন্দর্য বিবেচনায় দ্বিতীয় প্রধান গাছ হিসেবে লোহাকাঠকে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ গাছের ফুলও সৌন্দর্য বিবেচনায় উপেক্ষিত রয়ে যায়। সবার আগ্রহ এবং আকর্ষণ মূলত কাঠের প্রতি, ফুল নিয়ে কাউকে খুব একটা উচ্ছ্বসিত হতে দেখি না। কাঠের গাছের মধ্যে সবচেয়ে সুগন্ধি ফুল সম্ভবত তেলশুর। ঢাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু তেলশুর দেখা যায়। ফুল ততটা উল্লেখযোগ্য না হলেও ফাল্গুন-চৈত্রে এর তীব্র সুগন্ধ ভেসে বেড়ায়।

লোহাকাঠ নামটি বেশ পরিচিত হলেও এ গাছের ফুলের সঙ্গে দেখা হলো অনেক দিন পর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ফুলভর্তি গাছটি দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। গাছে খুব একটা পাতা ছিল না। ডালপালাজুড়ে শুধুই ফুলের উৎসব। পরে গাছটিকে লোহাকাঠ হিসেবে শনাক্ত করি। বেশ বড়সড় কয়েকটি লোহাকাঠের গাছ দেখেছি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনেও এ গাছ আছে। কাঠের গাছ হিসেবে বিখ্যাত হলেও আমাদের চারপাশে খুব একটা দেখা যায় না।

লোহাকাঠের ইংরেজি নাম বার্মা আয়রন উড। এ গাছ (Xylia xylocarp) বড় আকারের পত্রমোচী গাছ, ২৫ মিটারের বেশি উঁচু হতে পারে। কাণ্ড ৬০ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। বাকল রুক্ষ, পুরু, ভঙ্গুর এবং বাদামি রঙের। পাতা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, ৩ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ থেকে ৬ সেন্টিমিটার চওড়া, চকচকে সবুজ, ছোট-বৃন্তযুক্ত, বিপরীত, ২ থেকে ৪ জোড়া, লম্বা ডাঁটায় বিন্যস্ত থাকে। সবচেয়ে ছোটগুলো একটি সূক্ষ্ম ডগাসহ ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। শেষ পাতাটি ৭ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। ডাঁটাহীন ছোট সাদা, গোলাকার এবং ২ সেন্টিমিটার ব্যাসের ফুলগুলো ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। ফুল সুগন্ধি, ছোট, ঈষৎ হলুদাভ এবং লম্বা বৃন্তযুক্ত। ফল শুঁটি ৯ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা, বাদামি, শুষ্ক, ৬ থেকে ১০ বীজবিশিষ্ট। কোথাও কোথাও বীজ সবজি হিসেবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

লোহাকাঠ খুব শক্ত, ভারী এবং টেকসই। সারকাঠ গাঢ় লাল রঙের, ঘন এবং সূক্ষ্ম আঁশবিশিষ্ট, অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত। কাঠ অতি মূল্যবান এবং সেতু, ঘরের মেঝে, খুঁটি বা কড়িকাঠ এবং আসবাব নির্মাণের উপযোগী। গাছের বাকল ও বীজতেল ভেষজ গুণসম্পন্ন। এ গাছের বাকলের ক্বাথ কৃমিনাশক হিসেবে, কুষ্ঠ, আলসার, গনোরিয়া, বমি ও ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেল বাত, পাইলস এবং কুষ্ঠরোগে ব্যবহৃত হয়।

পাহাড়ি বনে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটে এ গাছ পাওয়া যায়। শুষ্ক চিরহরিৎ অরণ্য ও মিশ্র পাতাঝরা বন এ গাছের প্রিয় আবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এ গাছ ভালো জন্মে। দেশের বাইরে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে এই গাছ জন্মে। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।

মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র আশুরা ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: ডিএমপি

পবিত্র আশুরা ঘিরে ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি।

ডিএমপি ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বলেন, আগামী ০৬ জুলাই (১০ মহররম) পবিত্র আশুরা। ২৭ জুন থেকে ০৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া ও অনেক সুন্নি সম্প্রদায়ও শোক পালন করছেন। ঢাকা মহানগরীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থান যেখানে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র আশুরা পালিত হয় সেখানে ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সমূহ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এছাড়াও যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটসমূহ প্রস্তুত থাকবে। 

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সর্ববৃহৎ তাজিয়া মিছিল আগামী ৬ জুলাই সকাল ১০টায় হোসেনি দালান ১নং গেইট হয়ে বকশি বাজার লেন, লালবাগ চৌরাস্তা মোড়, শহীদ মাজার রোড, এতিমখানা মোড়, আজিমপুর চৌরাস্তা, নীলক্ষেত মোড়, মিরপুর রোড, ঢাকা কলেজ, সাইন্সল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, বিজিবির ৪নং গেইট, সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি লেক কারবালায় মিলিত হবে। এসময় তাজিয়া মিছিল চলাকালীন সময়ে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস. এন. মো নজরুল ইসলাম,  ১০ই মহররমের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং একই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথ যাত্রার অনুষ্ঠানও রয়েছে বিধায় সংশ্লিষ্ট সকলকে পুলিশি নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ