আমাদের দেশে কাঠের জন্য বিখ্যাত যে কটি গাছ আছে, তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর ফুল গামারির। গাছটি কাঠের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় এর ফুলের সৌন্দর্য বরাবরই উপেক্ষিত। তবে কাঠের গাছের ক্ষেত্রে ফুলের সৌন্দর্য বিবেচনায় দ্বিতীয় প্রধান গাছ হিসেবে লোহাকাঠকে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ গাছের ফুলও সৌন্দর্য বিবেচনায় উপেক্ষিত রয়ে যায়। সবার আগ্রহ এবং আকর্ষণ মূলত কাঠের প্রতি, ফুল নিয়ে কাউকে খুব একটা উচ্ছ্বসিত হতে দেখি না। কাঠের গাছের মধ্যে সবচেয়ে সুগন্ধি ফুল সম্ভবত তেলশুর। ঢাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু তেলশুর দেখা যায়। ফুল ততটা উল্লেখযোগ্য না হলেও ফাল্গুন-চৈত্রে এর তীব্র সুগন্ধ ভেসে বেড়ায়।
লোহাকাঠ নামটি বেশ পরিচিত হলেও এ গাছের ফুলের সঙ্গে দেখা হলো অনেক দিন পর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ফুলভর্তি গাছটি দেখে প্রথমে চিনতে পারিনি। গাছে খুব একটা পাতা ছিল না। ডালপালাজুড়ে শুধুই ফুলের উৎসব। পরে গাছটিকে লোহাকাঠ হিসেবে শনাক্ত করি। বেশ বড়সড় কয়েকটি লোহাকাঠের গাছ দেখেছি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনেও এ গাছ আছে। কাঠের গাছ হিসেবে বিখ্যাত হলেও আমাদের চারপাশে খুব একটা দেখা যায় না।
লোহাকাঠের ইংরেজি নাম বার্মা আয়রন উড। এ গাছ (Xylia xylocarp) বড় আকারের পত্রমোচী গাছ, ২৫ মিটারের বেশি উঁচু হতে পারে। কাণ্ড ৬০ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। বাকল রুক্ষ, পুরু, ভঙ্গুর এবং বাদামি রঙের। পাতা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, ৩ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ থেকে ৬ সেন্টিমিটার চওড়া, চকচকে সবুজ, ছোট-বৃন্তযুক্ত, বিপরীত, ২ থেকে ৪ জোড়া, লম্বা ডাঁটায় বিন্যস্ত থাকে। সবচেয়ে ছোটগুলো একটি সূক্ষ্ম ডগাসহ ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। শেষ পাতাটি ৭ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। ডাঁটাহীন ছোট সাদা, গোলাকার এবং ২ সেন্টিমিটার ব্যাসের ফুলগুলো ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। ফুল সুগন্ধি, ছোট, ঈষৎ হলুদাভ এবং লম্বা বৃন্তযুক্ত। ফল শুঁটি ৯ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা, বাদামি, শুষ্ক, ৬ থেকে ১০ বীজবিশিষ্ট। কোথাও কোথাও বীজ সবজি হিসেবে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
লোহাকাঠ খুব শক্ত, ভারী এবং টেকসই। সারকাঠ গাঢ় লাল রঙের, ঘন এবং সূক্ষ্ম আঁশবিশিষ্ট, অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত। কাঠ অতি মূল্যবান এবং সেতু, ঘরের মেঝে, খুঁটি বা কড়িকাঠ এবং আসবাব নির্মাণের উপযোগী। গাছের বাকল ও বীজতেল ভেষজ গুণসম্পন্ন। এ গাছের বাকলের ক্বাথ কৃমিনাশক হিসেবে, কুষ্ঠ, আলসার, গনোরিয়া, বমি ও ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেল বাত, পাইলস এবং কুষ্ঠরোগে ব্যবহৃত হয়।
পাহাড়ি বনে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটে এ গাছ পাওয়া যায়। শুষ্ক চিরহরিৎ অরণ্য ও মিশ্র পাতাঝরা বন এ গাছের প্রিয় আবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এ গাছ ভালো জন্মে। দেশের বাইরে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে এই গাছ জন্মে। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দর
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় ৮ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি ধর্ষণ মামলার আসামি, উল্টো বাদীকে হুমকি
ফাইল ছবি