হেফাজতের বিরুদ্ধে ২৫ মামলার সত্যতা মেলেনি
Published: 5th, May 2025 GMT
রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ যৌথ অভিযান চালায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় হাসিনা সরকার রাজধানীর চারটি থানায় হেফাজত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪৮টি মামলা করে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর ২৫টি মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ২১টি মামলা তদন্তাধীন ও দুটি মামলায় স্থগিতাদেশ রয়েছে।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা গেছে, শাপল চত্বরের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি পল্টন মডেল থানায় ৩৬টি মামলা হয়। এগুলোর ২২টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অপর ১৪টি তদন্তাধীন রয়েছে। মতিঝিল থানায় করা ছয়টি মামলার মধ্যে দুটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অপর দুটি তদন্তাধীন ও দুটি মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। রমনা মডেল থানার দুই মামলার মধ্যে একটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। অপর মামলাটি তদন্তাধীন। এ ছাড়া শাহবাগ থানার চার মামলা তদন্তাধীন আছে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সমকালকে বলেন, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। পরে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এখনও কিছু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সেগুলো তদন্ত সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।
শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় গত ১৮ আগস্ট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) জাকী আল ফারাবীর আদালতে এই মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মতিঝিল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া গত ২৬ নভেম্বর একই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত ধ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর ৪৫ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের পর ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার তাঁদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ (ডিবি) থানা-পুলিশের সদস্যরা তাঁদের গ্রেপ্তার করেন। শনিবার দুপুরে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বুড়িচং উপজেলার কালাকচুয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেলে ঝটিকা মিছিলের ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে ওই ঝটিকা মিছিল করতে দেখা যায়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পাপন লাল, বুড়িচং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর নুর তুষার, কুমিল্লা উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শের এ আলম, দাউদকান্দি উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহাগ মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মুকবিল হোসেন, মুরাদনগরের পূর্ব ধইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ উদ্দিন, মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. সম্রাট, লাকসামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজী ইয়াছিন, নাঙ্গলকোটের একটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মশিউর রহমান ভূঁইয়া, পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বি মজুমদার, কুমিল্লা নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুল হালিম, লালমাইয়ের বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অভি আহমেদ, বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, দেবীদ্বারের জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়ন ও বরকান্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুলসহ ৪৫ জন।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বুড়িচংয়ের কালাকচুয়া এলাকায় বেলা ১টা ৩০ মিনিট থেকে ৩১ মিনিট পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল হয়। ওই ঘটনার পরপরই জেলা ডিবি ও থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযুক্তদের আটক করেছে।
গ্রেপ্তার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিদেশে পলাতক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ কিছু নেতা গোপনে অর্থ পাঠিয়ে সরকারবিরোধী কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন। তাঁদের অর্থায়নেই কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করে এনে স্বল্প সময়ের ঝটিকা মিছিল করা হয়। মিছিলের বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী মুখ ঢেকে রেখেছিলেন, যাতে তাঁদের পরিচয় গোপন থাকে। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
জেলা ডিবির ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।