মশার কামড় থেকে সৃষ্ট চুলকানি দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায়
Published: 5th, May 2025 GMT
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ শুধু মানুষকে কাঁদায়ই না, মশার কামড়ের ক্ষত সারাতেও সহায়তা করে। সদ্য কাটা কন্দ থেকে বেরিয়ে আসা পেঁয়াজের রস মশার কামড়ের ক্ষত এবং জ্বালা কমাতে পারে। পেঁয়াজের কিছু ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া দমনকারী বৈশিষ্ট্যও আছে, যা সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে পারে। একটি পেঁয়াজ টুকরা করে কেটে আক্রান্ত স্থানে বেশ কিছুটা সময় লাগিয়ে রাখুন। তারপর স্থানটি পানি দিয়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলুন।
রসুনহৃদ্রোগ থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ পর্যন্ত অনেক রোগনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে রসুনের নামডাক আছে। ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে মশাসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের কামড়ের স্থানে রসুন কেটে লাগালে আরাম মেলে। একটি রসুন চিকন চিকন টুকরা করে কাটুন। তারপর সুগন্ধবিহীন পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা লোশনের সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর একটি ঠান্ডা ওয়াশক্লথ কিংবা নরম কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থানে জলপট্টি দিন।
বরফঠান্ডা তাপমাত্রা এবং বরফ প্রদাহ কমায়। ঠান্ডা ত্বককে অসাড় করে দেয়। ফলে আপনি তাৎক্ষণিক স্বস্তি পেতে পারেন। যদিও এই স্বস্তি বেশিক্ষণ থাকে না। এ বিষয়ে আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির পরামর্শ হচ্ছে, আক্রান্ত স্থানে দিনের মধ্যে কয়েকবার ৫-১০ মিনিটের জন্য বরফ দিন। বরফের গুঁড়া কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে চেপে ধরুন। প্রয়োজনে আইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
গরম পানিগরম পানিতে ওয়াশক্লথ বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১০ মিনিট জলপট্টি দিন।
আরও পড়ুনভেষজ ওষুধে মরবে মশা, গবেষণায় সাফল্যের দাবি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের০৫ মে ২০২৪ভিনেগারঅ্যাপল সিডার ভিনেগার নানান সমস্যায় প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে সমাদৃত। সাধারণ ভিনেগারের গুণও এ ক্ষেত্রে কম নয়। মশার কামড়ে চুলকানি হলে এক ফোঁটা ভিনেগার (যেকোনো ধরনের) লাগিয়ে দিন। ভিনেগার চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে। তবে শুধু ভিনেগার লাগাবেন না। তার বদলে ঠান্ডা পানি ও ভিনেগারের মিশ্রণ তৈরি করে তাতে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিন। তারপর কাপড়টি আক্রান্ত স্থানে লাগান। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মশার কামড়ের ক্ষত থাকলে কুসুম গরম পানিতে দুই কাপ ভিনেগার মিশিয়ে বাথটাবে ২০ মিনিট গোসল করুন। সাবধান! পানি বেশি গরম হলে অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে।
তুলসী পাতাত্বকের সংক্রমণের ঘরোয়া ওষুধ হিসেবে তুলসীর সুনাম আছে। এর পাতার অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ কমাতে পারে। দুই কাপ পানিতে ১৪ গ্রাম শুকনা তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা করুন। একটা নরম কাপড় মিশ্রণটিতে ভিজিয়ে নিন। তারপর ভেজা কাপড়টি দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি মুছুন।
বেকিং সোডাবেকিং সোডা অনেকের রান্নাঘরেই থাকে। কেক-বিস্কুট বানানো থেকে শুরু করে রান্নাঘরের সিংকের ড্রেন পরিষ্কার করা পর্যন্ত বিভিন্ন কাজেই বেকিং সোডা ব্যবহার করা হয়। এর প্রকৃত নাম সোডিয়াম বাইকার্বোনেট। বেকিং সোডা মশার কামড় থেকে সৃষ্ট যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরামর্শ অনুযায়ী, এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে কোনো প্রকার অস্বস্তি হলে আর ব্যবহার করবেন না।
আরও পড়ুনপৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে মশা নেই এবং কেন নেই১৪ এপ্রিল ২০২৫মধুমধু অনেক শারীরিক সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। গলাব্যথা এবং ত্বকের শুষ্কতার মতো শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় শত শত বছর ধরে মধু ব্যবহার করা হচ্ছে। মেডিকেল-গ্রেড মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহরোধী উপাদান থাকে প্রচুর পরিমাণে। আক্রান্ত স্থানে এক ফোঁটা মধু লাগিয়ে রাখুন। এতে চুলকানি দূর হবে। আক্রান্ত স্থানে বারবার নখ দিয়ে চুলকালে স্থানটিতে আরও বেশি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মধু লাগিয়ে রাখলে চুলকাতেও আর ইচ্ছা করবে না। কারণ, তখন আপনি চুলকাতে গেলে ভাববেন, হাতটা যদি চটচটে হয়ে যায়!
অ্যালোভেরাঅ্যালোভেরা অতি পরিচিত ঔষধি গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা পোড়া ঘা এবং পোকার কামড়ের ক্ষত দূর করতে কার্যকর। এর কিছু পাতা কেটে ভেতরের জেল বের করে নিন। আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে শুকিয়ে ফেলুন। দিনের মধ্যে প্রয়োজনমতো কয়েকবার ব্যবহার করুন।
সূত্র: হেলথলাইন
আরও পড়ুনমশা তাড়াতে গিয়ে যেসব বিপদ ডেকে আনবেন না১৭ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ১০ ম ন ট চ লক ন ত রপর
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৯টি গ্রাম প্লাবিত
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর দুটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। এতে ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিক পাড়া গ্রামের সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ এবং গোসাইপুর এলাকা অংশে সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বিজয়পুর, বণিকপাড়া, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, করইয়া ও নীলক্ষী গ্রাম প্লাবিত হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়াল উপচে মুহুরী নদীর পানি বাজারে প্রবেশ করে। রাতভর ফুলগাজী বাজার হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত থাকলেও আজ শুক্রবার ভোর থেকে বাজারের পানি কমতে শুরু করে। সকালের মধ্যে পুরো বাজার থেকে পানি নেমে যায়।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি ১১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। গতকাল রাত ৯টার পর প্রবল পানির তোড়ে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বণিক পাড়ার মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধের একটি অংশে কয়েক মিটার ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, গতকাল বিকেল থেকে ভারী বর্ষণ বন্ধ থাকায় মুহুরী নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর বণিকপাড়া বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পুকুর ও মৎস্য খামার ভেসে গেছে। জমিতে এখন ফসল না থাকলেও কিছু জমিতে আগাম জাতের বীজ ধান রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী ফুলগাজী বাজারও হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ীদের। এ কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, দোকানে পানি ঢুকলে বেশির ভাগ মুদি মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর মতো ছোট-বড় শতাধিক দোকানের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি ১০ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেই মাটির বাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়া আশঙ্কা থাকে বলে পাউবো তাঁকে অবগত করেছে। নতুন করে বাঁধের আর কোনো অংশ যেন না ভাঙে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পাউবোর কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। মুহুরী বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে, সেটি আরসিসি ঢালাই করা। মাটির বাঁধের ওপর করা আরসিসি ঢালাইও ধসে পড়েছে। পানি না কমলে তাৎক্ষণিকভাবে এটি মেরামত করা সম্ভব নয়। নদীতে পানি কমলে দ্রুত ভাঙন অংশ মেরামত করা হবে।’ আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর ওপর ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করে নতুন বেড়িবাঁধ তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি তৈরি হলে এই অঞ্চলের মানুষের বন্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে আগামী কয়েক দিন ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উচ্চমান সহকারী) মজিবুর রহমান বলেন, ফেনীতে আজ সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।