প্রযুক্তিভিত্তিক নেতৃত্ব ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দেশের সব বয়সের স্কুলশিক্ষার্থীর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–বিষয়ক পাঠ্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। দেশটির কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

কিন্ডারগার্টেন পর্যায় থেকে সব ধরনের সরকারি স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষে শুরু হচ্ছে এআই বিষয়ে পাঠদান। দুবাইয়ের শাসক ও আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এই তথ্য জানিয়ে খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সে একটি বার্তা দিয়েছেন।

গতকাল রোববার এক্সে দেওয়া ওই বার্তায় শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কারিগরি দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনে শিশুদের এআইয়ের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে জানানো এবং একই সঙ্গে তাদের এই নতুন প্রযুক্তির নৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত করা। বর্তমান যুগে আমাদের দায়িত্ব হলো শিশুদের পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারা শেখানো।’

আরও পড়ুনজাপানের মেক্সট বৃত্তি, মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন, একাদশ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ১১ ঘণ্টা আগে

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের অর্থনীতিকে অপরিশোধিত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বৈচিত্র্যময় করতে এআইকে অন্যতম কৌশলগত খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এআই মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে। ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজধানী আবুধাবিতে একটি এআই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে দেশটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমিরাত তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি ইউরো খরচে ফ্রান্সে একটি সুবিশাল এআই ডেটা সেন্টার নির্মাণের অঙ্গীকারও করেছে।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ফরম পূরণের সময় আবার বাড়ল৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ত

এছাড়াও পড়ুন:

মণিপুরে জমি ঘিরে সংঘাত, ‘ক্রসফায়ারে’ কুকি গ্রামপ্রধান নিহত

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে কুকিদের সঙ্গে মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাত আবার বাড়ছে। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলার লাংচিয়াংমানবি নামের একটি গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ কুকিদের লাংচিয়াংমানবির গ্রামপ্রধানের স্ত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম হৈখোলহিং হাওকিপ।

মণিপুর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের ওপরে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। এতে হাওকিপ নিহত হন।

কুকি-জো সম্প্রদায়ের বক্তব্য

তবে এই মুহূর্তে মণিপুরে আদিবাসীদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) জানিয়েছে, হৈখোলহিং হাওকিপ গ্রামপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন না। তিনি নিজেই লাংচিয়াংমানবি গ্রামে কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন।

আইটিএলএফ বলছে, হাওকিপের একমাত্র অপরাধ, তিনি কুকি-জো সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় ‘ধর্মঘটের’ ডাক দিয়েছে আইটিএলএফ। কুকি-জো নাগরিক সংগঠন নামে আদিবাসীদের একটি সংগঠন ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে।

আইটিএলএফ বলেছে, এ জঘন্য কাজটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আরেকটি লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে হামলা। এটি কুকি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের জাতিগত নির্মূলের পদ্ধতিগত একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সরাসরি দায়ী করছে আইটিএলএফ।

কী কারণে সংঘাত

কুকি-জো ও মেইতেইরা পাশাপাশি বসবাস করে। ফলে তাদের বসবাস বা চাষের জমিও পাশাপাশি। ফলে জমি বা জমির সীমানা নিয়ে কুকি-জো ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। দুই জমির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে এখন সীমান্তের মতো ‘বাফার জোন’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে যাতে জমি নিয়ে বিবাদ না হয়, তা মাথায় রেখে সরকারের তরফে এই ‘বাফার জোন’ তৈরি করা হয়েছিল।

ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে এই ধরনের বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০২৩ সালের মে মাসে যখন মেইতেইদের সঙ্গে কুকি-জোসহ অন্যান্য আদিবাসীর সংঘাত শুরু হয়, তখন জমি নিয়ে বিবাদের নানা ঘটনা ঘটেছিল। তখন সরকার দুই পক্ষকে আলাদা রাখতে ‘বাফার জোন’ তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে বিবাদ হয়নি।

গত এক সপ্তাহে অন্তত দুবার ফুবালা গ্রামে কৃষকদের মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ১৫ জুন এক দফায় সংঘর্ষ হওয়ার পরে আবার হলো গতকাল, যার জেরে একজনের মৃত্যু হলো। এলাকায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।

আইটিএলএফ গতকালের এ ঘটনার জন্য মেইতেইদের দায়ী করেছে। তারা বলেছে, মেইতেইরা ‘বাফার জোনে’ নিয়মিত আক্রমণ চালাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিরাপত্তাবাহিনী জানে। কিন্তু তারা দুর্বল সম্প্রদায়কে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণেই আরও একজনের প্রাণ গেল।

এই ‘বাফার জোনে’ সংঘাত দিয়েই গতকাল নতুন করে লড়াই শুরু হয়। মণিপুর পুলিশ গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার ফুবালা গ্রামের চাষি নিংথৌজাম বীরেন সিংকে বেলা ৩টার দিকে একজন অজ্ঞাত ও সশস্ত্র দুষ্কৃতি বাম হাতে গুলি করে। তিনি ধানখেতে কাজ করার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। পরে তাঁকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইম্ফলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ দাবি করছে, এ ঘটনার জেরে গতকাল বিকেলে নিরাপত্তা বাহিনী লাংচিয়াংমানবি, হেইচাংলোক, ফুবালা গ্রামের পশ্চিমাঞ্চলে এবং তার আশপাশে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে ‘গুলি’ চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়, যাতে হৈখোলহিং হাওকিপ নিহত হন।

হাওকিপের মরদেহ চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর কুকিপ্রধান জেলা। ফলে হাওকিপের মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই জেলাসহ মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

মেইতেই সম্প্রদায়ের অভিযোগ

মেইতেই সম্প্রদায়ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে।

মেইতেইরা বলছে, কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ ‘বাফার জোনে’ সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, অথচ সব জেনেও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী চুপচাপ রয়েছে। এই ঘটনার জেরে মেইতেইরা তাদের নিয়ন্ত্রিত রাজধানী ইম্ফল এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আজ শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকালের ঘটনার পরে তারা বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুরের মধ্যবর্তী জাতীয় সড়কও দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এতে মেইতেই নিয়ন্ত্রিত ইম্ফল ও বিষ্ণুপুর এবং কুকি-জো নিয়ন্ত্রিত চূড়াচাঁদপুর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসতায় মণিপুরে ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ