ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রান্সক্রিপ্ট, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট প্রদানসংক্রান্ত সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীরা তাঁদের সমস্যা বা অভিযোগ ই-মেইল ([email protected]) অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (০১৭৯৭-৪৯০৫৭৫, শুধু খুদে বার্তার জন্য) যোগাযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ পাওয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ও ই-মেইলের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানো হয়। এ–সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ ৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা শুধু বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোয় ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো নগদ টাকা গ্রহণ করা হয় না। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সোনালী ব্যাংক অথবা অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে পারেন। তবে অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্ষেত্রে এখনো অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়নি বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিমধ্যেই অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্টের আবেদনপ্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। তবে ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের সত্যায়ন এখনো অনলাইনে শুরু হয়নি। এ প্রক্রিয়াকে সহজ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দুই মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অনলাইন সেবা আরও উন্নত ও সহজতর করা হবে বলে জানানো হয়।

আরও পড়ুনজাপানের মেক্সট বৃত্তি, মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন, একাদশ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ১২ ঘণ্টা আগে

বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (২ কার্যদিবসের মধ্যে) ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট উত্তোলনসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি ট্রান্সক্রিপ্টের হার্ডকপি দ্রুত পাঠাতে কুরিয়ার সার্ভিসের সহায়তায় একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আরও স্বাচ্ছন্দ্য দিতে ট্রান্সক্রিপ্ট বিভাগকে অপেক্ষাকৃত বড় কক্ষে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্যকেন্দ্রকেও আরও শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঁধাই করা খাতায় আর কতকাল ফল সংরক্ষণ

কিছুদিন আগের ঘটনা। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল ছোট করে একটি সংবাদ ছাপে। সেখানে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান দীর্ঘ ৬৫ বছর পর তাঁর বাবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল খুঁজে পেয়েছেন। খবরটি ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পুরোনো নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেট খুঁজে পাওয়া বাস্তবপক্ষেই দুষ্কর।

ফল খুঁজে পাওয়ার কথা উপাচার্য তাঁর ফেসবুকে আবেগময় ভাষায় লিখে জানান। তাঁর বক্তব্য এমন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো আর্কাইভাল রেকর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতায় অনেক চেষ্টার পর আমার বাবার ১৯৬০ সালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল খুঁজে পেলাম। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। ফজলুল হক মুসলিম হলে সংযুক্ত ছিলেন। সন্তান হিসেবে ভালো লাগছে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

বোঝাই যাচ্ছে, পুরোনো নম্বরপত্র ও ফল খুঁজে পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। এই সমস্যা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; দেশের পুরোনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সমস্যা। বিশাল বিশাল কাগজে লেখা মোটা খাতা বাঁধাই করে ফল সংরক্ষণ করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই এসব কাগজ ও কাগজের লেখা বা ছাপা নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। এর ওপর আছে বিভিন্ন পরীক্ষার হাজার হাজার খাতা সংরক্ষণের জটিলতা। ফলে কেউ এসে পুরোনো নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেটের কপি চাইলেই তা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

পুরো ব্যাপারটিই এমন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর ফল খুঁজে বের করতে বেগ পেতে না হয়। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে রেজাল্ট সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার কাজটি সহজ করা দরকার

কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদ্‌যাপন করে বেশ আড়ম্বরে। তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সে সময় বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষকের কাছ থেকে নতুন গবেষণা ও প্রকল্পও আহ্বান করেছিল। কিন্তু জরুরি এই বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। একটি প্রকল্পের অধীন শত বছরের ফলাফলকে স্ক্যান করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল।

মাঝেমধ্যে পুরোনো রেজাল্টের অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তখন অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য পুরোনো ফলবিন্যাসপত্র দেখতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে একজন ব্যক্তির পুরোনো সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রের প্রয়োজন হয়। বিদ্যমান সংরক্ষণপদ্ধতির কারণে তাঁকে দ্রুততম সময়ে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বরপত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

সাধারণত সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির দুজন শিক্ষক পরীক্ষার ফল তৈরি করেন। তাঁরা আলাদা আলাদাভাবে দুটি ফলবিন্যাসপত্র বানান। পরে দুজনে সেটি মিলিয়ে দেখেন। কোনো অসামঞ্জস্য থাকলে সেখানে কেটে সংশোধন করেন। ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে হাতে লিখে আর রেজাল্ট তৈরি করা হয় না। এখন কম্পিউটারে সফটকপিতে রেজাল্ট তৈরি করে তারপর প্রিন্ট দেওয়া হয়। ফলে কাটাকাটি কম হয়।

এর মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী ফেল করলে তাঁর আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষার্থী নম্বর কম পেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে ফলোন্নয়নের জন্য আবার পরীক্ষা দেন। তখন ফলবিন্যাসপত্রে কেটে নতুন করে নম্বর বসাতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলবিন্যাসপত্র একত্রে বাঁধাই করে রাখা হয়। পোকামাকড় ও প্রাকৃতিক নানা কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে পুরোনো ফলাফল স্ক্যান করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন পর্যন্ত বড় বড় কাগজে টেবুলেশন বা চূড়ান্ত ফলবিন্যাসের কাজ করা হয়। এসব কাগজ নিখুঁতভাবে স্ক্যান করাও কঠিন। তা ছাড়া অতীতের সব ফলাফল সংরক্ষণ করা হলেও সেগুলো জীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেশি আগের কাগজগুলো ধরার আগেই ছিঁড়ে যায়। তা ছাড়া আগের দিনের কালিও অনেক জায়গায় মুছে গেছে বা অস্পষ্ট হয়ে গেছে।  

মাঝেমধ্যে পুরোনো রেজাল্টের অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তখন অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য পুরোনো ফলবিন্যাসপত্র দেখতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে একজন ব্যক্তির পুরোনো সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রের প্রয়োজন হয়। বিদ্যমান সংরক্ষণপদ্ধতির কারণে তাঁকে দ্রুততম সময়ে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বরপত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

অদূর ভবিষ্যতে অবশ্য আরও ভালো পদ্ধতির খোঁজ করা দরকার। যেমন ফলবিন্যাসের কাজটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় আনা যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একেকটি কোর্সের শিক্ষক নিজেই তাঁর নম্বর অনলাইনে আপলোড করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে তাঁর নিজস্ব ড্যাশবোর্ড থেকে সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ইনপুট দেবেন। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষক নিজ নিজ নম্বর এভাবে আপলোড করবেন।

এসব নম্বর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব হয়ে চূড়ান্ত ফল তৈরি করবে। শিক্ষার্থী তাঁর নিজের ড্যাশবোর্ড থেকে পরীক্ষার নম্বর ও ফল জানতে পারবেন। প্রয়োজনে তাঁর নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেট প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কোনো টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপার থাকলে সেই সুযোগও সেখানে রাখা যায়।

মোদ্দাকথা, পুরো ব্যাপারটিই এমন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর ফল খুঁজে বের করতে বেগ পেতে না হয়। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে রেজাল্ট সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার কাজটি সহজ করা দরকার।

 ● তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঁধাই করা খাতায় আর কতকাল ফল সংরক্ষণ