কিছুটা কমেছে মূল্যস্ফীতি। গত এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগের মাস মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এপ্রিলে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি কমেছে। কমেছে গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই। তবে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরেই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতি মাসে মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে বিবিএস। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রণয়ন করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কতটা বাড়ল, তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এটির ১২ মাসের চলন্ত গড় হিসাব হচ্ছে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি।
বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা তিন মাস কমার পর গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ফের বাড়ে মূল্যস্ফীতি। তার আগে গত বছরের ডিসেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। এপ্রিলে তা আবারও কমলো। এপ্রিলে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। গ্রাম এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ থেকে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর শহরে ৯ দশমিক ৬৬ থেকে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিবিএসের হিসাব মতে, গত বছরের মে মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। ওই অর্থবছেরে গড় ৯ শতাংশের কিছু বেশি হয় মূল্যস্ফীতি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর পর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে মূল্যস্ফীতি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসে। আগস্টে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে আরও কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে তা ফের বেড়ে যায়। কমতে দেখা যায় ডিসেম্বর থেকে। যদিও ওই তিন মাসই দুই অঙ্কের ঘরে ছিল মূল্যস্ফীতি। ২০২৪ সালে সব মিলিয়ে পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে।
গত কয়েক অর্থবছর ধরেই মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে বাস্তবতার আলোকে সে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে রাখতে চাইছে সরকার।
এ দিকে মূল্যস্ফীতি যতটা বেড়েছে মজুরি বেড়েছে তার চেয়ে কম হারে। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মজুরি হার সূচক বেড়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। মার্চে ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এপ্রিলে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে মজুরি হার সূচক বেড়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪০, ৭ দশমিক ৮৭ ও ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। প্রতি মাসে ৬৪টি জেলা হতে ৬৩ ধরনের মজুরিসংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করে বিবিএস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ৯ দশম ক ৮ দশম ক ব ব এস বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি বেলিয়ার
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং পণ্যটির ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল। এছাড়াও সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত লিফট মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে আমদানি করা হতো। মূলধনি যন্ত্রপাতিতে আমদানি শুল্ক থাকে ন্যূনতম। কিন্তু হঠাৎ করে বিগত সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্য ক্যাটেগরিতে স্থানান্তর করে। এতে এর শুল্ক-কর অনেক বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সে প্রতিবাদ আমলে নেওয়া হয়নি।
বেলিয়ার নেতারা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্য ক্যাটাগরিতেই রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্যটির ওপর কর হার আরও বাড়ানো হয়েছে। লিফট খাতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয় কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং নতুন আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট শুল্ক-কর দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যা ছিল ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সংগঠনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান বলেন, লিফট বিক্রি ও চুক্তি সম্পাদনের পরে উৎপাদন ও আমদানি করা পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। চলতি জুন মাসের আগে লিফটের ক্রয়াদেশ, ঋণপত্র খোলা, প্রস্তুত পর্যায়ে, জাহাজীকরণ অবস্থায় এবং বন্দরে শুল্কায়ন পর্যায়ে সহস্রাধিক লিফট প্রক্রিয়াধীন। এই লিফটগুলো আগের ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্কহারে বিক্রি করা হয়েছে। এখন সেগুলোর জন্য নতুন ধার্য করা বাড়তি হারে অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ হারে শুল্ক-কর প্রদান করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে ক্রেতারা পণ্যটি পাওয়ার নিশ্চয়তা হারাবেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জুনের আগে লিফটগুলোর জন্য পূর্ববর্তী বাজেট অনুযায়ী শুল্ক-কর ধার্যের জন্য জোর দাবি জানান তিনি।
বেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, দেশের আবাসন খাতের উন্নয়নে লিফট একটি অন্যতম প্রধান উপকরণ। ২০২৫-২৬ বাজেটে অতিরিক্ত শুল্ক-কর আরোপের ফলে পণ্যটির দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং ভোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন। এতে সার্বিকভাবে আবাসন খাতের উন্নয়ন ঝিমিয়ে পড়বে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খাতটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার কর্মী। তাই প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের আগেই লিফটের ওপর বাড়তি এই শুল্ক-কর প্রত্যাহার এবং একে আগের মতো মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আমদানি পর্যায়ে লিফটকে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যায়নের ফলে অধিক পরিমাণ শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। লিফটের ওজনের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে তার ৬৫ শতাংশ যন্ত্রাংশই লোহা ও স্টিলের সংমিশ্রণে তৈরি, ২৫ শতাংশ কংক্রিটের ব্লক এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি। লোহা ও স্টিলের মূল্য কেজি প্রতি ১ ডলারের নিচে এবং কংক্রিট ব্লকের মূল্য অতি নগণ্য। তারপরও বিগত সরকারের সময় লিফটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি প্রতি ৩ ডলারে, যা বাস্তবসম্মত হওয়া অতি জরুরি।