গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে চারদিক ওষ্ঠাগত। মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাপটায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও সময়টা গরমের। গরমের এই আবহাওয়ায় দেখা দেয় বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, রোগ-জরা।
গরমের কারণে এমনিতে এই সময়ে পরিশ্রমের কাজ করতে ইচ্ছে করে না। গরম বেশি পড়লে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত হাঁটতে চান না বা হাঁটতে পারেন না। আবার অতিরিক্ত গরমের ফলে অনেকে বিভিন্ন ধরনের জুস, শরবত খেয়ে থাকেন। ফলে ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে যে কোনো সাধারণ অসুখে রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।
এই গরমে ঘামের কারণে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে গিয়ে দেখা দেয় পানিস্বল্পতা। যে সব ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ রয়েছে বা ডায়ইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে এই পানিস্বল্পতা ভয়ংকর হতে পারে। সমস্যা বেশি হলে রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে– এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গরমের শুরুতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সাধারণত দূষিত পানি বা খোলা-বাসি খাবার থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে, কিডনি বৈকল্য দেখা দিতে পারে, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। এ অবস্থায় রোগীকে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। তবে বারবার বমি হলে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, মুখ- জিহবা শুকিয়ে গেলে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া পানিবাহিত অন্যান্য রোগ যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এগুলো হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হযন। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে সাধারণ এই সর্দি-জ্বর থেকে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, কানে ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা না হলে যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রখর রোদে ত্বকে ফোসকা পড়া, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, ফাংগাসের সংক্রমণ, ঘামাচি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এগুলো সংক্রমিত হয়ে ভোগান্তি বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীর ওপর অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রভাব
l অতিরিক্ত গরমে ঘামের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ঝুঁকি বাড়ায়।
l ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রণ থাকলে রক্তের ঘনত্ব এমনিতেই বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতা হলে এই ঘনত্ব আরও বাড়ে। এর ফলে হাইপার অসমোলার কোমার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
lঅতিরিক্ত গরমে ডায়াবেটিসের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে-কমে। রক্তে শর্করা কমানোর ওষুধ সেবনে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
সমস্যা এড়াতে করণীয়
lপর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফলের রস, আখের রস, চিনি-গুড়ের তৈরি শরবত, কোমল পানীয় খাওয়া বাদ দিতে হবে।
l ডায়রিয়াসহ যেকোনো পানিশূন্যতায় পরিমাণ মতো স্যালাইন খেতে হবে।
l সন্ধ্যার পরে অথবা খুব ভোরে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
lঅতিরিক্ত গরমে কায়িক পরিশ্রম থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে।
lবাইরে বের হলে প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
l হালকা, ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরতে হবে।
l নিয়মিত গোসল করতে হবে।
l চা, কফি, গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
lনিয়মিত রক্তের শর্করা পরিমাপ করে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। v
[ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
কনসালট্যান্ট, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ট স অন য ন ত র অন য ন ত র ত গরম র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
কেনিয়ায় কারা এই ‘ম্যাডাম’, কীভাবে শিশুদের বিপদগামী করেন তাঁরা
আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় শিশুদের যৌনবৃত্তিতে জড়াচ্ছেন কিছু নারী। সেখানে এসব নারীকে ‘ম্যাডাম’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। তাঁরা মাত্র ১৩ বছর বয়সী শিশুদের পর্যন্ত যৌনকর্মে জড়াতে বাধ্য করছেন। বিবিসি আফ্রিকা আই–এর এক অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
কেনিয়ার রিফট ভ্যালির ট্রানজিট শহর মাই মাহিউতে দিনরাত ট্রাক ও লরি চলাচল করে। পণ্য ও মানুষ নিয়ে এসব যানবাহন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এমনকি উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রের মতো অন্য দেশ পর্যন্ত যায়।
শহরটির অবস্থান নাইরোবি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরে। এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি আগে থেকেই যৌন ব্যবসার জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন এটি শিশুদের যৌন নিপীড়নের জায়গাও হয়ে উঠেছে।
চলতি বছরের শুরুতে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের দুজন নারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদক যৌনকর্মী সেজে ওই শহরের যৌন ব্যবসা চক্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ওই দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিক এমন ভাব করছিলেন, যেন কীভাবে ‘ম্যাডাম’ হওয়া যায়, তা তাঁরা শিখতে চান।
ওই দুই সাংবাদিক গোপনে কিছু ভিডিও ধারণ করেছেন। ভিডিওতে অন্য দুজন নারীকে কথা বলতে শোনা যায়। তাঁরা বলছিলেন, এটা যে বেআইনি কাজ, তা তাঁরা জানেন। এরপর ওই দুই নারী বিবিসির সাংবাদিকদের সঙ্গে যৌন পেশায় জড়িত কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের পরিচয় করিয়ে দেন।
আরও পড়ুনঅনলাইনে যৌন নিপীড়নের শিকার বছরে ৩০ কোটি শিশু ২৮ মে ২০২৪বিবিসি ওই ভিডিও এবং তাদের পাওয়া সব তথ্য গত মার্চে কেনিয়ার পুলিশকে দেয়। বিবিসির ধারণা, এরপর ‘ম্যাডামরা’ তাঁদের জায়গা বদলে ফেলেছেন। পুলিশ বলেছে, যেসব নারী ও মেয়েদের ভিডিওতে দেখা গেছে, তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কেনিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। মামলায় জিততে হলে পুলিশের ও সংশ্লিষ্ট শিশুর সাক্ষ্য দরকার হয়। কিন্তু বেশির ভাগ সময় শিশুরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়।
কেনিয়ার রিফট ভ্যালির ট্রানজিট শহর মাই মাহিউতে দিনরাত ট্রাক ও লরি চলাচল করে। পণ্য ও মানুষ নিয়ে এই যানবাহনগুলো দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এমনকি উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র পর্যন্ত যায়।বিবিসির রাতের আঁধারে গোপনে ধারণ করা ঝাপসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী নিজেকে ‘নিয়ামবুরা’ নামে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি হেসে হেসে বলছেন, ‘তারা তো এখনো বাচ্চা। তাই একটু মিষ্টি দিলেই সহজে কাবু করে ফেলা যায়।’
নিয়ামবুরা নামের ওই নারী বলেন, ‘মাই মাহিউতে যৌনবৃত্তি যেন নগদ ফসলের মতো। ট্রাকচালকেরাই এর মূল চালিকাশক্তি। আমরা সেখান থেকেই মুনাফা করি। মাই মাহিউতে এটা এখন একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।’
কেনিয়ার সাবেক যৌনকর্মী ‘বেবি গার্ল’ এখন জনসচেতনতামূলক কাজ করেন