Samakal:
2025-05-06@00:43:08 GMT

গরমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

Published: 5th, May 2025 GMT

গরমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

গ্রীষ্মের  প্রচণ্ড তাপদাহে চারদিক ওষ্ঠাগত। মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাপটায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও সময়টা গরমের। গরমের এই আবহাওয়ায় দেখা দেয় বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, রোগ-জরা। 
গরমের কারণে এমনিতে এই সময়ে পরিশ্রমের কাজ করতে ইচ্ছে করে না। গরম বেশি পড়লে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত হাঁটতে চান না বা হাঁটতে পারেন না। আবার অতিরিক্ত গরমের ফলে অনেকে বিভিন্ন ধরনের জুস, শরবত খেয়ে থাকেন। ফলে ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে যে কোনো সাধারণ অসুখে রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। 
এই গরমে ঘামের কারণে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে গিয়ে দেখা দেয় পানিস্বল্পতা। যে সব ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ রয়েছে বা ডায়ইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে এই পানিস্বল্পতা ভয়ংকর হতে পারে।   সমস্যা বেশি হলে রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে– এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গরমের শুরুতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সাধারণত দূষিত পানি বা খোলা-বাসি খাবার থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও  ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে, কিডনি বৈকল্য দেখা দিতে পারে, এমনকি  মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। এ অবস্থায় রোগীকে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। তবে বারবার বমি হলে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, মুখ- জিহবা শুকিয়ে গেলে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া পানিবাহিত অন্যান্য রোগ যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এগুলো হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেকে  জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হযন। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে সাধারণ এই সর্দি-জ্বর থেকে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, কানে ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা না হলে যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 
প্রখর রোদে ত্বকে ফোসকা পড়া, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, ফাংগাসের সংক্রমণ, ঘামাচি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এগুলো সংক্রমিত হয়ে ভোগান্তি বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীর ওপর অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রভাব
l অতিরিক্ত গরমে ঘামের সঙ্গে অতিরিক্ত  পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ঝুঁকি বাড়ায়।
l ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রণ থাকলে রক্তের ঘনত্ব এমনিতেই বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতা হলে এই ঘনত্ব আরও বাড়ে। এর ফলে হাইপার অসমোলার কোমার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
lঅতিরিক্ত গরমে ডায়াবেটিসের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে-কমে। রক্তে শর্করা কমানোর ওষুধ সেবনে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
সমস্যা এড়াতে করণীয়
lপর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফলের রস, আখের রস, চিনি-গুড়ের তৈরি শরবত, কোমল পানীয় খাওয়া বাদ দিতে হবে। 
l ডায়রিয়াসহ যেকোনো পানিশূন্যতায় পরিমাণ মতো স্যালাইন খেতে হবে। 
l সন্ধ্যার পরে অথবা খুব ভোরে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
lঅতিরিক্ত গরমে কায়িক পরিশ্রম থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। 
lবাইরে বের হলে প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। 
l হালকা, ঢিলেঢালা, সুতির পোশাক পরতে হবে। 
l নিয়মিত গোসল করতে হবে। 
l চা, কফি, গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 
lনিয়মিত রক্তের শর্করা পরিমাপ করে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। v

[ডায়াবেটিস,  থাইরয়েড ও হরমোন বিশেষজ্ঞ 
কনসালট্যান্ট, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।]
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ট স অন য ন ত র অন য ন ত র ত গরম র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থ থাকার গাইডলাইন

গরমে ঘরে-কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। এই সময়ে পানিশূন্যতা তৈরির ঝুঁকি বেশি। তাই অতিরিক্ত গরম আবহাওয় এবং পানিশূন্যতা দুইই অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থতার জন্য বড় বাধা। হবু মায়েরা তাই কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন, সেই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ জেনে নিন। 

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ হবু মায়েদের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। পানির ঘাটতি পূরনের জন্য পরিমাণ মতো পানি মেপে পান করতে পারেন। বেশি পানি পান করতে হবে তার অর্থ এই  নয় যে অতিরিক্ত পানি পান করবেন। অতিরিক্ত পানি পান করলে উল্টো শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে। দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করুন। যাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয় তারা আরেকটু বেশি পানি পান করতে পারেন।’’

পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিয়ে  এর প্রভাব ভ্রুণের ওপরও পড়ে। মায়ের শরীরের অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড কমে যেতে থাকে। ফলে সময়ের আগেই সন্তান জন্মের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে হবু মায়ের বমি ভাব, ক্লান্তি, মাথাযন্ত্রণা এবং পেশিতে টান ধরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হতে পারে খিঁচুনির মতো সমস্যাও। দেখা দিতে পারে বদহজমের সমস্যা। পানির ঘাটতি থেকে একজন হবু মা মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন।’’

আরো পড়ুন:

ফিট থাকতে সকালে নাস্তা গ্রহণের আগে-পরে পাঁচটি কাজ করতে পারেন

যে ভুলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করা সম্ভব না

করণীয় কী

এক. কমলালেবুর রস খেতে পারেন।

দুই. লেবু, চিনি ও পানি সহযোগে শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন।

তিন. পানিতে শসার টুকরো, আদাকুচি ও পুদিনা পাতা এক ঘণ্টার জন্য ভিজিয়ে রেখে ওই পানি পান করতে পারেন। 

চার. খেতে পারেন শসার শরবত।

পাঁচ. মৌসুমী ফল তরমুজ বা তরমুজের শরবতও খেতে পারেন। 

ছয়. নিয়মিত খাবারে যোগ করতে পারেন পাতলা ডাল, সবজির ঝোল, কম মশলা দেওয়া মাছের ঝোল, সবজি দিয়ে চিকেন স্ট্যু। 

উল্লেখ্য, ক্ষুধা না পেলে জোর করে খাবেন না। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একবারে অনেক খাবার না খেয়ে সারা দিন অল্প অল্প করে খেতে পারেন। চা-কফি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আরও বিস্তারিত জানতে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সুস্থ থাকার গাইডলাইন