জাতীয় রাজস্ব আদায়ে নারায়ণগঞ্জের স্থান দ্বিতীয় হলেও এটি জেলা হিসেবে ‘বি’ শ্রেণির। এই ‘অন্যায্য’ শ্রেণীকরণে আটকে আছে উন্নয়ন। তারা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত উন্নয়ন বরাদ্দ। তাই এ জেলাকে বিশেষ শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জাতীয় রাজস্বের ২০ ভাগের জোগান দেয় নারায়ণগঞ্জ। রাজস্ব জোগানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে নারায়ণগঞ্জ, প্রথম চট্টগ্রাম। কখনও ১ নম্বরে উঠে আসে এই জেলা। রাজস্ব আদায়ে নারায়ণগঞ্জের পেছনে থাকলেও ছয়টি বিশেষ শ্রেণির জেলার একটি গাজীপুর। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের স্থান ‘বি’ শ্রেণিতে। নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্টজনরা বলছেন, এ জেলা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব নিলেও ‘বি’ শ্রেণির হওয়ায় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাচ্ছে খুবই কম। নারায়ণগঞ্জকে দ্রুত বিশেষ শ্রেণির জেলায় উন্নীত করে পর্যাপ্ত উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কুতুবপুর। ইউনিয়ন হলেও এটি অত্যন্ত শিল্পসমৃদ্ধ। নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি, সেনা ক্যাম্প, বিজিবি কার্যালয়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এখানে। প্রধান সড়ক জালকুড়ি-পাগলা। এই সড়ক দিয়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে কমপক্ষে তিনটি বিভিন্ন শিল্প কারখানার ভারী যানবাহন চলাচল করে। অথচ এই রাস্তার পাশে নেই কোনো নালা। বৃষ্টি হলেই উঁচু রাস্তার পানি ঢোকে আশপাশের বাড়িঘর-দোকানপাটে। এই সড়ক ছাড়া ইউনিয়নের বাকি রাস্তাগুলো বেহাল। বৃষ্টি হলে কুতুবপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ পানির নিচে ডুবে যায় নালার অভাবে।
কুতুবপুর ইউনিয়নের দেলপাড়ার বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান তোতা। তিনি জানান, প্রতি বর্ষাতে তাঁর বাসার সামনে পানি জমে। কারণ রাস্তার পাশে নালা নেই। রাস্তার তুলনায় বাড়ি নিচু। বেশি বৃষ্টি হলে পানি নিচু জায়গায় জমা হয়। এই ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িঘরের একই অবস্থা।
নালার বিষয়ে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ইউনিয়নের জন্য জেলার বরাদ্দ থেকে বছরে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকার মতো পান। এলজিএসপি প্রকল্প থেকে হয়তো বছরে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ছিল ২৭ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের রাস্তা করলেই পাশে অবশ্যই গভীর নালা করে। বহু বছরের পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারে। কিন্তু তারা স্বল্প বরাদ্দ দিয়ে তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। জেলা ‘বি’ শ্রেণির। তাই ইউপির বরাদ্দ খুব কম। এটাকে যদি বিশেষ শ্রেণিতে নেওয়া হতো তাহলে বরাদ্দ বাড়ত। তারা অনেক কাজ করতে পারতেন। জনগণ উপকৃত হতো।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ। সব ইউনিয়ন পরিষদেরই একই চিত্র। নারায়ণগঞ্জ ‘বি’ শ্রেণির জেলা হওয়ায় উন্নয়ন কাজের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ মিলছে না।
২০২০ সালে জারি করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র থেকে জানা যায়, বিশেষ শ্রেণির ছয়টি জেলা হলো– ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী। গাজীপুর ছাড়া বাকি সবগুলো বিভাগীয় জেলা। উপজেলার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বাকি জেলাগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। আট বা এর বেশি সংখ্যক উপজেলা যে জেলায় তাকে ‘এ’, পাঁচ থেকে সাতটি উপজেলা যে জেলায় সেগুলোকে ‘বি’ এবং পাঁচটির কম উপজেলা যেসব জেলায় সেগুলোকে ‘সি’ শ্রেণিতে রাখা হয়। নারায়ণগঞ্জে উপজেলার সংখ্যা পাঁচটি হওয়ায় এটি ‘বি’ শ্রেণির জেলা।
নারায়ণগঞ্জকে বিশেষ শ্রেণির জেলায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিন ধরেই করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এখানে একটা মেডিকেল কলেজ নেই, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই, ভালো হাসপাতাল নেই, ভালো স্কুলের সংকট, ভালো কলেজ নেই। দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদানকারী জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ দ্বিতীয়। নারায়ণগঞ্জবাসী শুধু দিয়েই যাবে এটা হতে পারে না। আমাদের বিশেষ শ্রেণির জেলায় উন্নীত করে পর্যাপ্ত উন্নয়ন বরাদ্দ আদায় করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, ‘বি’ শ্রেণির জেলার তুলনায় বিশেষ শ্রেণির জেলায় সরকারি বরাদ্দ, বিভিন্ন দপ্তরের শাখা ও জনবল বেশি থাকে। উপজেলার হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে শ্রেণীকরণ করলে ভুল হবে। রাষ্টীয় বাজেটের ২০ ভাগ নারায়ণগঞ্জ থেকে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট গার্মেন্ট থেকে তিন হাজার ৬১৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আয় করে অন্য জেলার উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু তারা শুধু জেলার শ্রেণিতে পিছিয়ে থাকায় পর্যাপ্ত উন্নয়ন বাজেট পাচ্ছেন না।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাথাপিছু আয় অন্য যে কোনো জেলার চেয়ে বেশি। রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তারা অনেক বছর ধরে দ্বিতীয়। কখনও কখনও প্রথম স্থানে চলে আসে। নারায়ণগঞ্জ কোনোভাবেই দ্বিতীয় শ্রেণির জেলা হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জকে দ্রুত বিশেষ শ্রেণির জেলায় উন্নীত করার দাবি জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জোনের কর কমিশনার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও করদাতার ফাইল ঢাকায়। হয়তো তাদের করপোরেট অফিস ঢাকায় বা ঢাকার কোনো জোনে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিশাল সিমেন্ট কারখানাগুলোর ফাইল সব ঢাকার ৬ নম্বর জোনে। তাই নারায়ণগঞ্জ কর অফিস থেকে পাওয়া হিসাব দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে কত টাকা কর দেওয়া হয় তার প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব না।
নারায়ণগঞ্জ কর অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে গত অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জোনের আওতায় ১৭টি কর অফিস রয়েছে। কিন্তু দরকার অন্তত ৩০টি। প্রয়োজন আরও জনবল, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সহায়তা (লজিস্টিক সাপোর্ট)। নিজস্ব ভবন না থাকায় তাদের ভাড়া ভবনে কাজ চালাতে হয়।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র আয়কর আইনজীবী এ বি সিদ্দিক বলেন, নারায়ণগঞ্জ বিশেষ শ্রেণির জেলায় উন্নীত হলে সব দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নতি হবে। সরকারি অফিসের জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়বে। ফলে এ জেলা থেকে সরকারের আয়ও বাড়বে। নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোপলিটন শহর করা সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, নারায়ণগঞ্জকে বিশেষ শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবিটি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ জ ন র য়ণগঞ জ র উপজ ল র বর দ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ
অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নির্দেশনায় রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ করেছেন, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
৩ নং ওয়ার্ডবাসীর দাবি আমরা অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বিকল্প কাউকে দেখছি না বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন প্রত্যেক প্রতিনিধি আধিপত্য বিস্তার করেছেন ।
অধ্যাপক মামুন মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্বে আসার পর নারায়ণগঞ্জ এখন শান্তির শহর শান্তির জেলায় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উনার মত ভাল মানুষ আজকে দায়িত্বে আশায় মহান আল্লাহ আমাদের উপর শান্তি বর্ষিত করেছে।
তাই বিএনপির সর্বোচ্চ হাই কমান্ডের কাছে দাবি আমরা যেন আগামীতে অবশ্যই অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কে এমপি হিসেবে দেখতে পাই। নারায়ণগঞ্জের কল্যাণে নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যাণে তার বিকল্প কেউ নেই।
লিফলেট বিতরণ অংশগ্রহণ করেন ইফতেখার হোসেন ঋতু সাবেক সদস্য, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, মো. শাহিন যুগ্ম আহ্বায়ক নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল, লুৎফর রহমান রাসেল যুগ্ম আহ্বায়ক স্বেচ্ছাসেবক দল সিদ্ধিগঞ্জ থানা, ইঞ্জিনিয়ার আজাদ মুনতাসির সহ-সভাপতি ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি, মোঃ আলমগীর হোসেন শ্রমিকদল নেতা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, জামাল হোসেন ভূঁইয়া সহ-সভাপতি ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি, লিটন আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেনও ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, নেতৃবৃন্দ।