গাজীপুরে কৃষকদের জন্য ব্যতিক্রমী ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’
Published: 6th, May 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় প্রান্তিক কৃষক-কৃষাণীদের দক্ষ করে তুলতে ব্যতিক্রমী শিক্ষা কার্যক্রম ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’ চালু হয়েছে। বই-খাতার পরিবর্তে কৃষকরা মাঠে হাতে-কলমে শিখছেন টেকসই ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আধুনিক কৌশল।
শ্রীপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাঠভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষক-কৃষাণীরা শিখছেন পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ, রোগ-বালাই দমন এবং পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করার উপায়। তারা অংশ নিচ্ছেন ধান, গম, তেলবীজ ও পুষ্টিকর ফসল চাষের মৌসুমভিত্তিক প্রশিক্ষণে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১০টি ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’ পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি স্কুলের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি সাতটি চলমান রয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের সম্মানী ভাতা ও মানসম্পন্ন নাশতা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষকদের কৃষকসেবা কেন্দ্র ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের মৃত্যু
ধানের বাম্পার ফলনে ঈদ আনন্দ হাওর পাড়ের কৃষকের ঘরে
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা জানান, পিএফএসের মাধ্যমে কৃষকদের নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এটি ভোক্তা এবং কৃষি শ্রমিক উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ঢাকা/রফিক/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষকদ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা
মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।
নতুন জীবন নতুন সংগ্রামউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।
মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।
সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দেরমালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।
এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।
মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।
মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা