৫ আগস্টের পর ৮ দিনে ৬ কোটি টাকার মালামাল চুরির অভিযোগে মামলা
Published: 6th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক প্রকল্প এলাকার ১৪টি স্থান থেকে ছয় কোটি টাকার মালামাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের পক্ষ থেকে করা মামলায় বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত এই চুরির ঘটনা ঘটে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের উন্নীতকরণের কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সদর উপজেলার রামরাইল এলাকায় প্রকল্পের কার্যালয় অবস্থিত।
আরও পড়ুনআশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পে ফিরেছেন ভারতীয় ঠিকাদার, কাজ শুরুর আশ্বাস২৮ অক্টোবর ২০২৪মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তারা ভারতে চলে যান। কোম্পানির কাজে নিযুক্ত বাংলাদেশি শ্রমিকেরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এই সুযোগে গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা দুইটা থেকে ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা প্রকল্প এলাকার সদর উপজেলার উজানিসার তিতাস সেতু, সুলতানপুর, রাধিকা, রামরাইল ক্যাম্প (প্রকল্পের কার্যালয়), রামরাইল বাজার, নয়নপুর, পুনিয়াউট, পৈরতলা, বিরাসার, ঘাটুরা, সুহিলপুর, নন্দনপুর, বিশ্বরোড খাঁটিহাতা, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া নির্মাণাধীন চার লেন সড়ক এবং চলমান কাজের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্মাণকাজের জন্য রাখা মালামাল চুরি করে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, চুরি হওয়া মালামালের মধ্যে ২ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার ৯৫ টাকার মূল্যের শাটারিং ম্যাটেরিয়ালস, ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ২০২ টাকা মূল্যের মাইনর অ্যাসেট, ২ কোটি ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৬৪৩ টাকার ভোগ্যপণ্য, ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার রেইনফোর্সমেন্ট চুরি হয়েছে। প্রকল্পের এসব এলাকা থেকে মোট ৬ কোটি ২০ লাখ ৪২ হাজার ৫৪০ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সওজ ও প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা দেবে সরকার। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে।
পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ছয় কোটি টাকার মালামাল চুরির ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া চুরির ঘটনায় আরও তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। তারা কী কী মালামাল এনেছিল, কী কী চুরি হয়েছে, এসব খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে কারাভোগ শেষে ফিরলেন ১৪ বাংলাদেশি
কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে আটক হওয়া ১৪ বাংলাদেশি কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তারা দেশে ফেরেন। দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ছয়জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন, ইসমাইল, হারুন মজুমদার, পাপিয়া আক্তার, লিজা খানম, লিজা খাতুন, আশা মণি, মফিজুল ইসলাম, তাহিয়াতুন নেসা, আঁখি ইসলাম, সঞ্জয় সরকার, স্বপন সরকার, যিশু কান্তি দাস, বিপুল দাস ও সুশেন দাস। তাদের বাড়ি ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, চাঁদপুর, খুলনা, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলায়।
আরো পড়ুন:
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় যুবলীগ নেতা
চরমপন্থি নেতা নাসিমকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় মামলা
ভারতের আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের মধ্যস্ততায় দেশে ফেরেন তারা। পরে স্থলবন্দরে শূন্যরেখায় এসব বাংলাদেশিদের তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম, বন্দরের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তারসহ বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন পর স্বজনদের ফিরে পেয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের শূন্য রেখায় আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভারত ফেরত খুলনার মাহফজুল ইসলামের মা আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে, ছেলের বউ, নাতনি ১১ মাস আগে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয় যায়। পরে খবর পাই ভারতে গিয়ে আটক হয়েছে। সরকারি প্রক্রিয়া শেষে আজকে ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে।’’
ভারত ফেরত সুনামগঞ্জের স্বপন দাসের ভাই তপন দাস বলেন, ‘‘দালালের খপ্পড়ে পড়ে ভারতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন তার ভাই। আজ আইনি প্রক্রিয়ার শেষে ভাইকে ফেরত পেয়ে ভালো লাগছে। পরে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নগদ ৩ হাজার টাকা ও খাবার দেয়া হয়।’’
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শায়লা শারমিন জানান, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আর্থিক প্রণোদনা ও জরুরি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মাইগ্রেশন বিভাগ।
আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার অ্যাসিস্টেন্ট ওমর শরীফ জানান, কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারত গিয়ে আটক হন ১৪ বাংলাদেশি। পরে আদালতের আদেশে কারাভোগ শেষে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। আগরতলায় ক্ষণস্থায়ী কারাগারে আটক আরো ৩৩ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা/পলাশ/বকুল