‘আমি যদি মরেই যাই/ তুমি বেঁচে থাকবে/ আমার গল্পটি বলো/ যদি মরেই যাই/ এতে কিছু আশা ফিরে আসুক/ নতুন এক উপাখ্যান হোক।’– কবিতার পঙক্তিতে কথাগুলো বলছিলেন ফিলিস্তিনের কবি রিফাত আলারির। এটি ছিল তার শেষ কবিতা। মৃত্যুর মাস খানেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্টটি করেছিলেন তিনি। কবিতাটি এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬০ লাখ বার পঠিত হয়েছে।

ফিলিস্তিনের আরেক কবি মোসাব আবু তোহা গত সোমবার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন। তারপরই বন্ধু আলারিরের কবিতার পঙক্তি দিয়ে এক্স-এ পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, ‘ধারাভাষ্যে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ের খবর মাত্র পেলাম। এতে কিছু আশা ফিরে আসুক/ নতুন এক উপাখ্যান হোক।’

রিফাত আলারির গাজার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। তরুণদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের পর গাজায় ইসরায়েল তীব্র হামলা শুরু করলে ১ নভেম্বর এক্স-এ তিনি কবিতাটি পোস্ট করেন। বোমা বৃষ্টির মধ্যে উত্তর গাজার সুজাইয়ায় নিজ বাড়ি থেকে পালাননি আলারির। এক মাস পর ডিসেম্বরে তার বাড়িতে হামলা হয়। স্বপরিবারে নিহত হন ৪৪ বছরের আলারির।

গাজার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ-কষ্ট নিয়ে ধারাভাষ্য তৈরি করে পুলিৎজার পেয়েছেন মোসাব আবু তোহা। স্মৃতি থেকে তুলে ধরেছেন বিপর্যস্ত মানুষের জীবন-বাস্তবতা। ২০২৩ সালে ইসরায়েল তাকে আটক করে। পরে মিসরের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে তোহা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানেও তার পথ মসৃণ ছিল না। মার্কিন মুল্লুকে ইসরায়েলপন্থিদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তারা তাকে বিতাড়নের চেষ্টা চালান। তবে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।

দ্য নিউ ইয়র্কার কনট্রিবিউটর ছিলেন আবু তোহা। গাজার গণহত্যা প্রতিনিয়ত তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। নিজের লেখায় তিনি এসব তুলে আনতেন। দ্য নিউ ইয়র্কারে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তোহা লিখেন, ‘বিগত বছরে আমি স্মৃতির বেশ কিছু সতেজ অংশ হারিয়েছি। সেসব লোক, স্থান, জিনিসপত্র হারিয়েছি, যেগুলো আমাকে স্মরণে সহায়তা করতো।’ তিনি লিখেন, ‘ভালো করে অনেককিছু স্মরণ করতে পারছিলাম না। গাজার প্রত্যেক বিধ্বস্ত বাড়ি এক ধরনের অ্যালবাম; এগুলোতে হয়তো কোনো ছবি নেই, আছে বাস্তবের লোকজন; মৃত্যু এর পাতায় পাতায় হানা দিয়েছে।’

কবি রিফাত আলারির যেন আবু তোহার মর্মে গাঁথা এক নাম। নিজে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি তাঁর কবিতা আওড়ান। মাহমুদ দারবিশের মতো মহান ফিলিস্তিনি কবির উত্তরসূরি আলারির ছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর। তার অনুরাগী আহমেদ নেহাদ বলেন, কবি আলারির উত্তরাধিকার চিরকাল টিকে থাকবে। তিনি ফিলিস্তিন নিয়ে লিখতে গিয়ে গাজার শত শত তরুণ-তরুণীর হৃদয়ের কথা প্রতিধ্বনিত করে গেছেন। নেহাদ বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর আগে তাকে নিয়ে আমার কবিতার প্রথম পঙক্তি লিখি। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে কবিতাটি শুনেছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের সহযোগিতা করতেন।’

গাজার ইসায়েলের অব্যাহত হামলা, খাবারকে অস্ত্র বানিয়ে অভুক্ত রেখে হত্যায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ তালিকায় রিফাত আলারির কেবল একটি সংখ্যা হয়ে যাননি। তিনি এক উপাখ্যান হয়ে আছেন, থেকে যাবেন। সূত্র: আল জাজিরা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ফ ত আল র র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বে বাংলাদেশি শরণার্থী পাঁচ বছর ধরে বাড়ছে

বিশ্বের নানা দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশিদের শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা বাড়ার হার ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৪ সালে ২৮ হাজার ৪৭৩ জন বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। একই বছর ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বাংলাদেশিদের সিংহভাগই ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের লোকজনের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এসব বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির পাশাপাশি ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সাইপ্রাস, বসনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতেও নিবন্ধন করেছেন। আর উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পাপুয়া নিউগিনির মতো দেশগুলোতে শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন। এশিয়ার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকংয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও বাংলাদেশিরা নিবন্ধিত হয়েছেন। এমনকি ২০২৪ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়াতেও ৬ জন বাংলাদেশি নিজেকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশিদের সিংহভাগই উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়ে নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে গেলে নিজ দেশে জীবনের ঝুঁকি থাকতে হয়। আবেদনকারী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই ওই সময়কালে (২০২০–২৪) দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। তবে যাঁরা শরণার্থী হয়েছেন, তাঁদের একটি অংশ প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায়, এদের বেশির ভাগই সুযোগসন্ধানী বা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন। ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ১২৬ বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালে ২৩ হাজার ৯৩৫ জন, ২০২১ সালে ২২ হাজার ৬৭২ জন এবং ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯৪৮ জন বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী দাবি করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি ২০১৯ সালে শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৭৬৬, ২০১৮ সালে ২১ হাজার ২২ এবং ২০১৭ সালে ১৬ হাজার ৭৮০।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে এক শ্রেণির তরুণদের ভেতরে যেকোনো পন্থায় বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা তীব্র হয়েছে। আর এ সুযোগই নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্র। গত কয়েক বছর অব্যাহতভাবে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও ইতালির উপকূল থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যুর খবর নিয়মিত ঘটনা। ইউরোপগামী পাচারের বিভিন্ন রুট থেকে প্রতিনিয়তই উদ্ধার করা হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সবশেষ ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের লোকজনের অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা। ইউরোপে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছেড়ে যাওয়া লোকজন নিজেদের গন্তব্য দেখছেন এখন যুদ্ধের মাঠে। মানব পাচারকারীরা ইউরোপগামী লোকজনকে পাচার করে রুশ বাহিনীতে যুক্ত হতে বাধ্য করছে।

২০২৩ সালে ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালে ৬১ হাজার ২৯৮ জন, ২০২১ সালে ৬৫ হাজার ৪৯৫ এবং ২০২০ সালে ৬৪ হাজার ৬৩৬ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৬২ হাজার ৮৬০ জন এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ৮৬০ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

কূটনীতিকেরা বলছেন, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী হিসেবে বিদেশে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছেন। করোনা মহামারির সময় দেশে আয়ের সুযোগ কমে যাওয়া ও বৈধ পথে বিদেশে যাওয়া সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিও এ প্রবণতা বাড়িয়েছে বলে তাঁদের মত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্টার্টআপ বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে হলে
  • শিশুদের ওপর মারাত্মক সহিংসতার জন্য আবারও জাতিসংঘের কালোতালিকায় ইসরায়েল
  • বিশ্বে বাংলাদেশি শরণার্থী পাঁচ বছর ধরে বাড়ছে
  • সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে
  • বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩%
  • ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সংকটে থাই সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমাপ্রার্থনা
  • সরাসরি: যুদ্ধ বাধলে ইরান-ইসরায়েলের অর্থনীতির কী হাল হবে?