মৌসুমের শুরুতে খরা আর মাঝে ঝড়, বৃষ্টির শঙ্কা। শেষটায় ছিল অকাল বন্যায় ফসলহানির ভয়। এর সবকিছু পেছনে ফেলে দেশের বৃহত্তম বোরো উৎপাদন ক্ষেত্র হাকালুকি হাওরে হয়েছে বাম্পার ফলন।
হাকালুকি হাওরের বোরো ধান এখন কৃষকের গোলায়। প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে হাওরতীরের কৃষকের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে অবস্থিত বিশাল এ হাওরে উৎপাদিত ধানই কৃষকের সারাবছরের খোরাক।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মোট ধান ও চালের চাহিদার সিংহ ভাগই পূরণ হবে হাকালুকির উৎপাদিত ধান থেকে। 
কুলাউড়া উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন জানান, কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওর অংশে এ বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর। জুড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, আবাদের ক্ষেত্রে ৬ হাজার ৯০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। বড়লেখায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। সাড়ে ২২ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা ছাড়িয়ে যাবে।
ছাতকেও সোনার ধানে ভরছে গোলা
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সব হাওরে বোরো ধান কাটার মহোৎসব চলছে। বোরো ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৬৩টি ছোট-বড় বিল-হাওরে চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ২ হাজার ১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। হাওর এলাকায় ধান কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪৩টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। 
নাইন্দার হাওরপারের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে সরকারিভাবে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় অতিদ্রুত ফসল কেটে নিতে কৃষকদের সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ উপজ ল র ষ হয় ছ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটির স্বাস্থ্য পরামর্শ মানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি এখন দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করছেন অনেকেই। কেউ আবার চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির পরামর্শে দৈনন্দিন খাবার থেকে লবণ প্রায় পুরোপুরি বাদ দিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা ৬০ বছরের এক ব্যক্তি। এরপর বাধ্য হয়ে হাসপাতালে তিন সপ্তাহ চিকিৎসা নেন তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রোগী কয়েক সপ্তাহ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে সোডিয়ামের মাত্রা প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনেন। এতে তাঁর শরীরে ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’ নামের বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

ওই ব্যক্তির পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই তিনি সম্পূর্ণভাবে এআইভিত্তিক হেলথ প্ল্যানের ওপর নির্ভর করেছিলেন। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর তিনি সুস্থ হন । ঘটনাটি সম্প্রতি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, সোডিয়ামের মতো অপরিহার্য খনিজ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া এআইয়ের পরামর্শ অনুসরণ করা গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কীভাবে খাবার থেকে সম্পূর্ণভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা সাধারণত খাবার লবণ বাদ দেওয়া যায়, তা ওই ব্যক্তি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে চ্যাটজিপিটি তাঁকে বিকল্প হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। চ্যাটজিপিটির পরামর্শ মেনে তিনি অনলাইনে সোডিয়াম ব্রোমাইড কিনে প্রায় তিন মাস রান্নায় ব্যবহার করেন। এর ফলে ধীরে ধীরে বিভ্রম, সন্দেহপ্রবণতা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, এমনকি পানি পান করতে অনীহার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন এবং পানিকে দূষিত মনে করতেন।

চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরে ‘ব্রোমাইড টক্সিসিটি’ বা ব্রোমিজম ধরা পড়েছে, যা এখন অত্যন্ত বিরল হলেও একসময় উদ্বেগ, অনিদ্রা ও নানা স্নায়বিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। তাঁর শরীরে ব্রোমিজমের অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়। এর ফলে ত্বকে ব্রণের মতো ফুসকুড়ি এবং ‘চেরি অ্যাঞ্জিওমা’ নামে পরিচিত লাল দাগ দেখা যায়। চিকিৎসায় গুরুত্ব দেওয়া হয় শরীরে পর্যাপ্ত পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ওপর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ তথ্য জানার ক্ষেত্রে এআই কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তাদের শর্তাবলিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে, ‘আমাদের সেবার আউটপুটকে একমাত্র সত্য বা নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয় এবং এটি কখনোই পেশাদার পরামর্শের বিকল্প হতে পারে না। এই সেবা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তৈরি করা নয়।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ