বোরোর ‘মেগা স্টোর’ হাকালুকিতে বাম্পার ফলন
Published: 6th, May 2025 GMT
মৌসুমের শুরুতে খরা আর মাঝে ঝড়, বৃষ্টির শঙ্কা। শেষটায় ছিল অকাল বন্যায় ফসলহানির ভয়। এর সবকিছু পেছনে ফেলে দেশের বৃহত্তম বোরো উৎপাদন ক্ষেত্র হাকালুকি হাওরে হয়েছে বাম্পার ফলন।
হাকালুকি হাওরের বোরো ধান এখন কৃষকের গোলায়। প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে হাওরতীরের কৃষকের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে অবস্থিত বিশাল এ হাওরে উৎপাদিত ধানই কৃষকের সারাবছরের খোরাক।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মোট ধান ও চালের চাহিদার সিংহ ভাগই পূরণ হবে হাকালুকির উৎপাদিত ধান থেকে।
কুলাউড়া উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন জানান, কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওর অংশে এ বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর। জুড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, আবাদের ক্ষেত্রে ৬ হাজার ৯০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। বড়লেখায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। সাড়ে ২২ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা ছাড়িয়ে যাবে।
ছাতকেও সোনার ধানে ভরছে গোলা
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সব হাওরে বোরো ধান কাটার মহোৎসব চলছে। বোরো ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৬৩টি ছোট-বড় বিল-হাওরে চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ২ হাজার ১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। হাওর এলাকায় ধান কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪৩টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন।
নাইন্দার হাওরপারের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে সরকারিভাবে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় অতিদ্রুত ফসল কেটে নিতে কৃষকদের সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ উপজ ল র ষ হয় ছ উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সম্মেলনে ৪৪ জেলার চাষি ও উদ্যোক্তা
আম উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাষি, উদ্যোক্তা ও গবেষকদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম আম সম্মেলন। গতকাল মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ক্লাব স্টেডিয়ামে এ আয়োজন করে ম্যাংগো ডেভেলপমেন্ট ফোরাম। দিনব্যাপী সম্মেলনে দেশের ৪৪ জেলার প্রায় ৩৫০ জন আমচাষি ও উদ্যোক্তা অংশ নেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তৌফিক আজিজের সভাপতিত্বে সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ। সম্মেলনে বক্তারা আম উৎপাদন ও বিপণনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী জোন চিহ্নিতকরণ, প্রশিক্ষিত রপ্তানিকারক তৈরি, আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ আম পরিবহন, ওজন পদ্ধতি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা চাষিদের কাছে শোনেন এবং তা নিরসনে উদ্যোগের কথা জানান।
ঢাকার উত্তরা থেকে সম্মেলনে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তা সাইয়েদুল বাশার বলেন, তিনি অনলাইনে আম কেনাবেচার উদ্যোগ নেন তিন বছর আগে। এ সম্মেলনে এসে স্থানীয় বেশকিছু আমচাষির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম সম্পর্কে জানতে পেরে খুশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা আমের দাম নিয়ে হতাশ। রপ্তানিতেও আছে নানা বাধা। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. জি এম মোরশেদুল বারী বলেন, রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়লেও কীটনাশক, আধুনিক প্যাকেজিং, হ্যান্ডলিং সমস্যা, শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম ও পরিবহনের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া অনেক উদ্যোক্তার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভালো জাতের আম, জিআই সনদপ্রাপ্ত আম ও গবেষণায় উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের রপ্তানিযোগ্য আম নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। এসব বিষয় তুলে ধরতেই তিনিসহ কয়েকজন গবেষক এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল হক হায়দারী শহিদ মিয়া বলেন, আম উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও এর সমাধান পেতে এবং সারা দেশের আম উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করতেই আজকের সম্মেলন।