নারীর প্রতি অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারের নিন্দা গণসংহতির
Published: 6th, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের প্রতি অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলেছে, তারা যেকোনো নাগরিকের প্রতি যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ শারীরিক, মানসিক ও ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান এ কথা বলেন।
নারীর জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ, মানবিক ও নিরাপদ করার জন্য নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন দুই নেতা। পাশাপাশি তাঁরা সুপারিশগুলো নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা এবং আরও যেসব প্রস্তাবনা এতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, সে বিষয়েও সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নারীর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, সংস্কারের সব সিদ্ধান্ত যাতে প্রতিনিধিত্বমূলক হয় এবং দেশের সব মানুষ যাতে এই সংস্কারের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মব সৃষ্টির (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা) মানসিকতা সব সময়ই অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পদ্ধতি বলেও মনে করে দলটি।
গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য কমিশন যেমন বাতিলের প্রশ্ন আসে না, তেমনি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনও বাতিলের প্রসঙ্গ না এনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটিকে সবার জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক করে তোলার ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্যান্য কমিশনের মতোই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশই যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি বেশ কিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে, দ্বিমত এসেছে। দ্বিমত ও বিতর্কের জায়গা থাকাটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মাধ্যমেই সব অংশীদারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশে বহু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে এই মুহূর্তে অসংখ্য নারী কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং কর্মজীবন ও অবসরকালীন জীবনের কোনো নিশ্চয়তার বিধান আজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। একই কথা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত পুরুষদের ক্ষেত্রেও খাটে। তবে সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা বলয়ের বিবেচনায় নারীই সর্বক্ষেত্রে অধিকতর অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে পেছনে ফেলে আসার সুযোগ পাওয়া গেছে বলেও মনে করে গণসংহতি আন্দোলন। বিবৃতিতে দলটি বলেছে, বহুবার বহুভাবে এ দেশের মানুষকে বিভাজিত করে পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যার পরিণতি হলো ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন। তাঁরা কোনোভাবেই এই ধরনের বিভাজনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না।
যাঁরা সংঘবদ্ধভাবে নারীর প্রতি সহিংস ভাষা প্রয়োগ করছেন, তাঁরা যেন নতুন করে দেশের মানুষকে বিভাজিত না করেন, সেই আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, বরং গঠনমূলক আলোচনার পথ তৈরি করুন। নারীর প্রতি সহিংস ভাষা ও মনোভাব কখনোই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্মেলনে ৪৪ জেলার চাষি ও উদ্যোক্তা
আম উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাষি, উদ্যোক্তা ও গবেষকদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম আম সম্মেলন। গতকাল মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ক্লাব স্টেডিয়ামে এ আয়োজন করে ম্যাংগো ডেভেলপমেন্ট ফোরাম। দিনব্যাপী সম্মেলনে দেশের ৪৪ জেলার প্রায় ৩৫০ জন আমচাষি ও উদ্যোক্তা অংশ নেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তৌফিক আজিজের সভাপতিত্বে সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ। সম্মেলনে বক্তারা আম উৎপাদন ও বিপণনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী জোন চিহ্নিতকরণ, প্রশিক্ষিত রপ্তানিকারক তৈরি, আধুনিক প্যাকিং হাউস স্থাপন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ আম পরিবহন, ওজন পদ্ধতি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা চাষিদের কাছে শোনেন এবং তা নিরসনে উদ্যোগের কথা জানান।
ঢাকার উত্তরা থেকে সম্মেলনে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তা সাইয়েদুল বাশার বলেন, তিনি অনলাইনে আম কেনাবেচার উদ্যোগ নেন তিন বছর আগে। এ সম্মেলনে এসে স্থানীয় বেশকিছু আমচাষির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম সম্পর্কে জানতে পেরে খুশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা আমের দাম নিয়ে হতাশ। রপ্তানিতেও আছে নানা বাধা। এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. জি এম মোরশেদুল বারী বলেন, রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়লেও কীটনাশক, আধুনিক প্যাকেজিং, হ্যান্ডলিং সমস্যা, শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম ও পরিবহনের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া অনেক উদ্যোক্তার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভালো জাতের আম, জিআই সনদপ্রাপ্ত আম ও গবেষণায় উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের রপ্তানিযোগ্য আম নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। এসব বিষয় তুলে ধরতেই তিনিসহ কয়েকজন গবেষক এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল হক হায়দারী শহিদ মিয়া বলেন, আম উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও এর সমাধান পেতে এবং সারা দেশের আম উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করতেই আজকের সম্মেলন।