দুর্ভাগ্য কি অযোগ্যতা—না পারাকে অনেক সময় ভাগ্যের পাল্লায় তুলে মাপা হয়। ‘ভাগ্য সহায় না হওয়ায় অল্পের জন্য হলো না’—ব্যর্থতাকে বৈধতা দিতে পরাজিতদের এমন কথা বলতেও প্রায়ই শোনা যায়! দুর্ভাগ্য বা অযোগ্যতা দৃশ্যত আলাদা মনে হলেও আসলে খুব দূরের কিছুও নয়।

কখনো কখনো দুটির মধ্যে পার্থক্য এত সূক্ষ্ম হয় যে আলাদা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। আর ভাগ্যকে যখন ফুটবলের সবুজ মঞ্চে টেনে আনা হয়, সেটি অনেক সময় অযোগ্যতাকে ছাপিয়ে যায়। এমনকি তীব্র যন্ত্রণার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

ফুটবলে উদাহরণ হিসেবে কেউ চাইলে টাইব্রেকার–ভাগ্য পরীক্ষার কথা বলতে পারেন। কিন্তু কখনো কখনো সেই দুর্ভাগ্য চিরকালীন এক ‘অভিশাপ’ও হয়ে ওঠে। ফুটবলে আর্সেনাল ও পিএসজি তেমনই দুই দুর্ভাগা দল। লম্বা সময় ধরে চেষ্টা করেও ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি।

চলতি মৌসুমে দুই দলের সামনে সুযোগ এসেছে দুর্ভাগ্যকে কবর দেওয়ার। এই দুই দলের অন্তত একটি দল আজ রাতে নিশ্চিত করবে মিউনিখের ফাইনাল। প্যারিসে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হচ্ছে পিএসজি ও আর্সেনাল। আর্সেনালের মাঠে প্রথম লেগে ১–০ গোলে জেতায় এই লড়াইয়ে এগিয়ে আছে পিএসজি।

আরও পড়ুনআর্সেনাল–পিএসজির উত্থান, নাকি বার্সা–ইন্টারের পুনরুত্থান১২ এপ্রিল ২০২৫

ফুটবল–দুনিয়া আর্সেনালকে চেনে ‘অজেয়’ হিসেবে। ইংল্যান্ডের ফুটবল পরাশক্তির কথা বললে যে কয়েকটি নাম সামনে আসে, আর্সেনাল তার অন্যতম। অনেক বছর বড় কোনো শিরোপা না জিতলেও পরাশক্তির তকমাটা তাদের নামের সঙ্গে লেগে আছে আঠার মতো। কিংবদন্তি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের হাত ধরে আধুনিক ফুটবলের বিবর্তনেও আর্সেনালের অবদান অসামান্য। ক্লাবটির রোমাঞ্চকর ফুটবলের প্রেমে পড়ে বিশ্বব্যাপী বিশাল এক সমর্থক গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে।

কিন্তু ঐতিহ্যের ভার টেনে চলা দলটির চ্যাম্পিয়নস লিগে সাফল্য বলতে ওয়েঙ্গারের অধীনে ২০০৫–০৬ মৌসুমের ফাইনাল খেলা। ফাইনালে সেবার বার্সেলোনার কাছে হেরেছিল ‘গানার’রা। সেই হতাশার পর আর কখনো ফাইনালে খেলা হয়নি। এবারও প্রথম লেগে ঘরের মাঠে হেরে কাজটাকে কঠিন করে ফেলেছে আর্সেনাল। কিন্তু গল্প বদলানোর জন্য ৯০ মিনিট সময় তো হাতে আছেই।

ফাইনালে যেতে পারবে পিএসজি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর স ন ল ফ ইন ল প এসজ ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প চান, ভারত-পাকিস্তান থেমে যাক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে সংক্ষেপে মন্তব্য করেছেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি উভয় পক্ষকে খুব ভালোভাবে চিনি। আমি চাই তারা বিষয়টি মিটিয়ে নিক। আমি চাই তারা থেমে যাক।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি যদি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, তাহলে আমি অবশ্যই পাশে থাকব।”

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান কি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াচ্ছে?

শ্রীপুরে ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

এর আগে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর শোনামাত্রই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এটা দুঃখজনক। আমি চাই, এটি বন্ধ হোক।”

পাকিস্তানে হামলার পর ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা  মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছে। সেই সঙ্গে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানায় দেশটি।

৭ মে রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানের কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপরাশেন সিঁদুর’। কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়া ২৬ জন ব্যক্তির স্ত্রীরা বিধবা হওয়ায় ধর্মমতে তারা আর মাথায় সিঁদুর পরতে পারবেন না। এই নারীদের সম্মানে অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপরাশেন সিঁদুর।

হামলা নিয়ে দুই দেশের উত্তপ্ত বাক্য চালাচালির মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে তার দেশের সেনাবারা। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে তারা। এই ঘটনাকে জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করে সময়মতো প্রতিশোধ নিতে সামরিক বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছেন তিনি। 

এর আগে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বৈঠক করে সামরিক বাহিনীকে তাদের ‘নিজস্ব সময় ও পন্থায়’ ভারতকে জবাব দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ভারত সরকার বলেছে, পাকিস্তান যদি কোনো ধরনের পাল্টা হামলা চালায় তাহলে আরো কঠিন হামলা চালানো হবে।

যুদ্ধের ডামাডোলে দুই দেশে বহু বেসামরিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে; বন্ধ করা হয়েছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উভয় অংশের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, অনেক পরিবারকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেতে দেখা গেছে। 

বুধবারের রাতের হামলায় পাকিস্তানে ৭০ জন নিহতের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, নিহতের সংখ্যা ২৬ জন। আহত হয়েছেন ৫০ জনের মতো। 

এদিকে ভারত বলেছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে কাশ্মীরে ১৫ জন বেসামরিক ভারতীয় নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৬ জনের মতো। 

নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেওয়া না গেলেও দুই দেশের ভাষায় সেই ইঙ্গিত নেই। ভারত বলছে, হামলার মধ্য দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তাদের খতম করে দিয়েছে।

পাকিস্তান বলছে, তারা হামলার সমুচিত জবাব দিয়েছে, অভিযানের সময় ভারতের কয়েকটি বিমান ভূপাতিত করে এটি করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক বিশ্ব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চায় না বলে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশও একই বার্তা দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ