দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতদের গুলিতে রবিউল ইসলাম রনি (৫০) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। নিহত রবিউল ইসলাম রনি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুদিয়া গ্রামের গোলজার মোল্লার ছেলে।

সোমবার (৫ মে) বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রবিউল ইসলাম রনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহতের ভাইয়ের জামাতা তানভীর হোসেন জানান, ঘটনার সময় একটি ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন রবিউল ইসলাম রনি। এসময় ডাকাতরা নিকটস্থ একটি ব্যাংক ডাকাতি করে এলোপাথাড়ী গুলি ছোড়ে। ওই সময় ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফিরছিলেন রবিউল ইসলাম রনি। ড্রাইভিং সিটে থাকা রনি ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

রনির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম রনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পরিবারসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করে আসছেন। সেখানে তার ব্যবসাও আছে। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ মে) রনির মরদেহ দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নিহত রনির ভাইয়ের জামাতা তানভীর হোসেন আদনান। 

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, “এমন কোন খবর এখনো পাইনি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/শাহরিয়ার/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের নোবেল দাবি

সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার দুই পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছে।

২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তাঁর বিশেষ দূত মারফত শক্ত ও স্পষ্ট বার্তা ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চান’ পৌঁছানোর পর ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৬ মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ঘটবে। তিনি তাঁর উদ্যোগ ও ঘোষণার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মানবিক বিপর্যয় থামাতে পারলে নোবেল পুরস্কার দাবি করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিশ্ববাসী যুদ্ধ বন্ধ বা শান্তি নয়, বরং যুদ্ধের বিস্তৃতি এবং বিশ্বকে অশান্ত করারই যত প্রয়াস দেখেছে। 

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করলে নতুন করে ৩৩ হাজার ৫১০ জন হতাহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, ৩০ জুন পর্যন্ত মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৬ হাজার ৫১৩ এবং আহত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২, যার ৯০ শতাংশই বেসামরিক মানুষ। তবে যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, আইডিএফের নির্বিচারে হামলায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু। 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিল– দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি। কিন্তু অদ্যাবধি যুদ্ধবিরতির কোনো আভাস দৃশ্যমান নয়। এদিকে প্রায় ৩০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ হতাহত, যার বেশির ভাগ বেসামরিক। দৃশ্যত এ যুদ্ধ বন্ধ করতেও তিনি ব্যর্থ। 

দুটি যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস) চলমান অবস্থায়ই ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানে আক্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ থামানোর পরিবর্তে ২১ জুন তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণ করে, যার নাম দেয় ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৪ জুন রাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তার আগেই ১২ দিনের যুদ্ধে উভয় পক্ষের ৯৬৫ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৯৮৪ জন আহত হন। এ ক্ষেত্রেও ট্রাম্প শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ।

দুটি যুদ্ধ দীর্ঘদিন চলমান থাকায় হতাহতের ঘটনা ছাড়াও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ও উদ্বাস্তু। উপরন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসন ও ভিসানীতি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতি, বৈদেশিক সাহায্য নীতি, করনীতি ইত্যাদি প্রয়োগের ফলে নিজ দেশ এবং বিশজুড়ে এক অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজমান। বুধবার সমকালে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে মেডিকেল জার্নালে দ্য ল্যানসেট প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদেশে মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন তহবিলের বেশির ভাগ অংশ হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু। গবেষণায় বলা হয়, এর ফলে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য যে ধাক্কা আসবে, তা বিশ্বব্যাপী মহামারি বা বড় সশস্ত্র সংঘাতের কারণ হতে পারে। 

এ সত্ত্বেও ট্রাম্প তাঁর স্বভাবসূলভ ভাষায় দাবি করেছেন, ‘আমি বিশ্বে শান্তি এনেছি। আমার কমপক্ষে চার-পাঁচবার নোবেল পাওয়া উচিত ছিল!’ তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সফলতার পর বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ, বিশেষত ইসরায়েল-হামাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি এবং তার সরকারের বিভিন্ন বিতর্কিত নীতি ও আদেশ রহিত করে বিশ্বময় শান্তি ও অস্থিরতা প্রশমন করতে সক্ষম হলে তিনি ২০২৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দাবি করতে পারতেন।

এম এ হালিম: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং দুর্যোগ, জলবায়ু ও মানবিকবিষয়ক বিশ্লেষক 
halim_64@hotmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ