কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা মধ্যপাড়ায় একটি পুরোনো সেতুর নিচ দিয়ে চলাচলের সময় আটকে যায় বালু বোঝাই বাল্কহেড। দীর্ঘদিন ধরে এমন ভারী নৌযান চলাচলের কারণে সেতুটির কয়েকটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে ফের এ ধরনের একটি বাল্কহেড আটকে গেলে স্থানীয়দের নজরে আসে। পরে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্কহেডটি জব্দ করে। জরিমানার অর্থ সঙ্গে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় সম্ভব হয়নি।

বিকেলে বাল্কহেডের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সাগর হোসেন গিয়ে জরিমানার ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। মেঘনা থানা পুলিশের সহায়তায় এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার শারমীন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত সাগর হোসেনকে সরকারি স্থাপনার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি তাঁকে সতর্ক করা হয় এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার বিষয়ে মুচলেকা নেওয়া হয়। সাগরের ভাষ্য, বাল্কহেডটি নরসিংদীর মরিচাঘাট এলাকা থেকে মেঘনার শিবনগর কবরস্থানের দিকে যাচ্ছিল। প্রায় ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির নিচ দিয়ে চলাচলের সময় বাল্কহেডটি আটকে পড়ে, এতে সেতুর নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভাওরখোলা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এই সেতুর পিলার আগে থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এর নিচ দিয়ে ইট, বালু ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রলার চলাচল করে আসছে। একাধিকবার নৌযানের ধাক্কায় পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া সেতুটি সংস্কার না করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। সেতুর নিচ দিয়ে ভারী নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন।

ভাওরখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসান মাহমুদ মুক্তি বলেন, এই সেতু অনেক পুরোনো এবং সেতুর পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। যদি এখন সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মেঘনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুৎফুন নাহার শারমীনের ভাষ্য, ভাওরখোলা গ্রামের সেতুর পিলারগুলো বাল্কহেডের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত। বুধবার সকালে একটি বাল্কহেড সেতুর নিচে আটকে পড়ে। গ্রামবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। সরকারি স্থাপনার ক্ষতি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। নিয়ম লঙ্ঘন করে বারবার সেতুর নিচ দিয়ে ভারী নৌযান চলাচল করতে পারে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেতুর নিচ দিয়ে যে কোনো বড় ধরনের মালবাহী নৌযান চলাচল করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বাল্কহেড চলাচল করলে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। যে ধরনের বাল্কহেড এইদিক দিয়ে গেলে সেতুর পিলারের ক্ষতি হবে না, সেগুলোকে আমরা অনুমতি দেব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির

বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।

অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।

কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’

গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ