সমুদ্রে মাছ শিকার করতে গিয়ে নানা কারণে জাল হারান জেলেরা। অনেকে আবার নষ্ট জাল সাগরে ফেলে দেন। নৌকা থেকে পড়ে অথৈ জলে হারিয়ে যায় মাছ শিকারের বিভিন্ন সরঞ্জামও। পরবর্তী সময়ে এই জাল ও সরঞ্জামই হয়ে ওঠে সামুদ্রিক প্রাণীর নীরব ঘাতক। কারণ, সবার অজান্তে এসব ফাঁদে আটকে প্রতিবছর মারা পড়ে বিপন্নপ্রায় ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপ, মাছ, সংকটাপন্ন রাজকাঁকড়াসহ বিপুল সংখ্যক সামুদ্রিক প্রাণী। এ জন্য বিজ্ঞানীরা একে বলেন, ‘ঘোস্ট ফিশিং’ বা ভূতুড়ে শিকার। বাংলাদেশ উপকূলে শুধু ২০২৩ সালেই এভাবে মারা পড়েছে অন্তত ৩৩০টি সামুদ্রিক প্রাণী। 

বিশ্বব্যাংকের ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভার অ্যান্ড সি ফর সাউথ এশিয়া’ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। তত্ত্বাবধানে ছিল ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) এবং সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালে মে মাস পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে চবির সমুদ্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগের গবেষক দল।

গবেষকরা বলছেন, পরিত্যক্ত জাল সমুদ্রে না ফেলতে জেলেদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া জাল উদ্ধার ও পুনর্ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় ঘোস্ট ফিশিং বাড়বে। এতে হ্রাস পাবে মাছের মজুত। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়ায় হুমকির মুখে পড়বে জেলেদের জীবিকা। 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিভিন্ন আকৃতির ১৮ হাজার ৬৯৫টি নৌকা এবং ২৬৫টি বাণিজ্যিক ট্রলার মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়া শিকার করে। এসব নৌযানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার ১১০ টন মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ফেলে দেওয়ার কারণে এর মধ্যে বছরে ২ হাজার ৭৪০ টন জাল ও মাছ ধরার সরঞ্জাম সাগরে থেকে যায়; নৌযানপ্রতি হিসাব ধরলে এর পরিমাণ ১৪৪ কেজি। গবেষকরা এগুলোকে বলেন, এএলডিএফজি (অ্যাবান্ডান্ড, লস্ট ও ডিসকার্ডেড ফিশিং গিয়ার)। এগুলোই পরবর্তী সময়ে সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য ভূতুড়ে ফাঁদে পরিণত হয়।

সামুদ্রিক বর্জ্যের মধ্যে পরিত্যক্ত জালের জন্য বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে টেকনাফ উপকূল ও সন্দ্বীপ চ্যানেলকে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এ ছাড়া ব্যবহার অনুপযোগী জাল ব্যবহারের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও পটুয়াখালী উপকূলকে। 

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক বর্জ্যের মধ্যে পরিত্যক্ত, হারানো ও ফেলে দেওয়া জাল এবং মাছ ধরার সরঞ্জাম জীববৈচিত্র্যের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই প্রাণীগোষ্ঠীর প্রায় ৬৬ শতাংশ এসব বর্জ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক পাখির জন্যও হুমকি এমন বর্জ্য। এ ছাড়া সব প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টারও যত্রতত্র মারা পড়ে।

গবেষক দলের সদস্য চবির ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের অধ্যাপক এসএম শরীফুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিনে বিরল প্রজাতির অলিভ রিডলি সামুদ্রিক কচ্ছপ রয়েছে। ঘোস্ট ফিশিংয়ের কারণে প্রজাতিটি বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া বিপন্ন প্রায় ডলফিন ও হাঙর প্রায়ই মারা পড়ছে। এ জন্য জেলেদের সচেতন করতে হবে, যাতে যত্রতত্র মাছ ধরার জাল না ফেলে। ব্যবহার অনুপযোগী জালসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম উপকূলে এমন স্থানে ফেলা নিশ্চিত করতে হবে, যেখান থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহকারীরা পুনর্ব্যবহারের জন্য নিয়ে যেতে পারেন।

তবে এক যুগ ধরে সাগরে মাছ শিকার করা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা গ্রামের মো.

ইকবাল জানান, পরিত্যক্ত জাল সাগরে ফেললে পরিবেশের ক্ষতি হয়– এ বিষয়ে তাদের কখনও সচেতন করা হয়নি। অবশ্য তারা সাধারণত পরিত্যক্ত জাল উপকূলে নিয়ে এসে কম দামে বিক্রি করে দেন। মানুষ বেড়া দিতে এসব জাল ব্যবহার করেন। তবে সাগরে ফেলা জাল দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো কারণে ছিঁড়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যায় না।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, সাগরে পাওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের ১০ শতাংশের বেশি এএলডিএফজি। সারাবিশ্বে প্রতিবছর ৬ লাখ ৪০ হাজার টন মাছ ধরার সরঞ্জাম সমুদ্রে হারিয়ে যায় অথবা ফেলা হয়। সাগরে এসব বর্জ্য টিকে থাকবে প্রায় ৬০০ বছর পর্যন্ত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর জ য র ব যবহ র র জন য উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভুল মন্তব্য করায় মোসাদ্দেককে ‘সরি’ বলেছেন লিপু

প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ওয়ানডে সিরিজ থেকে দলের সঙ্গেই আছেন। তিনি মাঠে বসেই ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখছেন। গতকাল ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে কঠিন সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। প্রথম ম্যাচে কেন লিটন কুমার দাসকে চার নম্বরে খেলানো হয়েছে তার জবাবটাই দিতে পারলেন না লিপু। 

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জাতীয় দলে জায়গা নেই বলে মন্তব্য করে ভীষণ সমালোচিত হয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক। সেই ইস্যু শ্রীলঙ্কায়ও তাঁর পিছু ছাড়েনি। যদিও গতকাল জানালেন, মোসাদ্দেকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভুল মন্তব্য করার কারণে।

বর্তমান নির্বাচক প্যানেলের দল নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিসিবির ভেতরেই লিপুর দল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা হয়। ওয়ানডে এবং টি২০ দল থেকে সৌম্য সরকারকে বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ভালো খেলতে না পারা নাঈম শেখের ব্যাটিং ইনটেন্টের প্রশংসা করে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তিনি। জাতীয় দলে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের নিবেদনের ঘাটতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে লিপু বলেন, ‘সে খুবই ভালো একজন বোলার। এই সিরিজটা একটু খারাপ গেলেও শিগগিরই ভালো করবে।’

লিটন টপঅর্ডার ব্যাটার হিসেবেই ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলেন। লিপু চাওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। টপঅর্ডারে খেলা একজন ব্যাটারকে হঠাৎ চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নামলে খেই হারিয়ে ফেলা খুবই সম্ভব। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেটিই ঘটেছে। অথচ লিটনকে দ্বিতীয় সুযোগ না দিয়ে একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে করে নিজেকে ছন্দে ফেরানোর সুযোগ দেওয়া হলো না অভিজ্ঞ এ ব্যাটারকে। যদিও লিপু জানান, এই জায়গায় লিটনকে পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ায় মিডলঅর্ডারে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা লিটন ও মিরাজকে দিয়ে পূরণ করার পরিকল্পনা টিম ম্যানেজমেন্টের। এই পরিকল্পনা যে ভুল ছিল, সেটা বোঝা গেছে প্রথম ম্যাচেই। সেখানে দ্বিতীয় ভুল হয়েছে তাঁকে পরের দুই ম্যাচে না খেলিয়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ