বন্ধের পথে তিন হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপদ বাহন
Published: 10th, July 2025 GMT
যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তারা জানেন সন্তানকে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করা কতটা ঝক্কির ব্যাপার। এ ঝক্কি থেকে রেহাই দিতে উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সহায়তায় চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতিদিন ১০টি বিদ্যালয়ের তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আনা-নেওয়া করে দোতলা বাস। দুই বছর আগে চালু সে উদ্যোগ অর্থ সংকটে বন্ধ হওয়ার পথে।
বিআরটিসি-চট্টগ্রাম বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) জুলফিকার আলী বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়ার নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছিল দোতলা বাস। ২০২৪ সালে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ নিরাপদে আনা-নেওয়া করেছি। ২০২৫ সালে এসে অর্থ সংকটে পড়েছি। সাত মাস ধরে চালক-সহকারীর বেতন বন্ধ। প্রতিদিন গাড়ি চালানোর জন্য তেলের খরচ বহন করার মতো তহবিল নেই। অর্থের অভাবে এ সেবা আর বেশি দিন চালানো সম্ভব না।
এক প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আলী জানান, এ সেবার কারণে চট্টগ্রাম শহরের যানজট অনেকটা কমে এসেছে। কারণ একজন সন্তানের সঙ্গে আগে একজন অভিভাবককে যেতে হতো। এভাবে তিন হাজার জনকে নিয়ে আরও তিন হাজার অভিভাবক আসা-যাওয়া করতেন। এটা এখন হচ্ছে না। অভিভাবকদের সময়ও বাঁচছে।
এ উদ্যোগে অর্থায়নকারী ছিল জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি হেড অব ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড এস্টেট মো.
চট্টগ্রামে স্মার্ট বাস সেবা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এখন খুবই নিরাপদ ও জনপ্রিয়। কারণ বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, আইপি ক্যামেরা ছাড়াও ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস রয়েছে। বাসে উঠে শিক্ষার্থীরা কার্ড চাপ দিলে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে চলে যায় খুদে বার্তা। ঘরে বসে জিপিএস ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে বাস ও শিক্ষার্থীর অবস্থান দেখতে পারেন অভিভাবক। ফলে অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। প্রতিটি বাসে ৭৮টি আসন। বর্তমানে বাসগুলো বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে নিউমার্কেট হয়ে চকবাজার-গনি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদীঘি কোতোয়ালি এবং অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২ নম্বর গেট-জিইসি-টাইগার পাসসহ ১০টি রুটে চলছে।
প্রতিটি বাসে একটি বাক্স ছিল। এতে শিক্ষার্থীদের ৫ টাকা ভাড়া (বাধ্যতামূলক নয়) ফেলার কথা ছিল। কিন্তু বাক্সে শিক্ষার্থীরা টাকা ফেলত না। এক পর্যায়ে এই সেবা স্পন্সর-নির্ভর হয়ে পড়ে। জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চুক্তির আওতায় ২০২৪ ও ’২৫ সালে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা। এ অর্থ দিয়ে বাসের চালক-কর্মীদের বেতন ছাড়াও জ্বালানি খরচসহ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ২০২৪ সালের ৭২ লাখ টাকা পেলেও ২০২৫ সালের অনুদান পায়নি বিআরটিসি। এখন বিআরটিসি নিজস্ব অর্থায়নে বাস সচল রেখেছে। গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি এ খাতে ৪২ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এখন তাদের তহবিলে টান পড়েছে।
চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রইস উদ্দিন বলে, বাস বন্ধ হয়ে গেলে বাবা কিংবা মাকে স্কুলে আসতে হবে। এ সেবা বন্ধ না করার জন্য অনুরোধ করছি। মুরাদপুরে বসবাসরত কর্মজীবী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, আইপি ক্যামেরা এবং জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে বাস সেবাটি চালুর পর সন্তানকে একা বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তামুক্ত ছিলাম।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ৫ টাকা পরিশোধের বিষয়টি বাড়িয়ে কোনোভাবে তেল খরচ তোলা যায় কিনা, সেই আলোচনাও চলছে। এই সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ২ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম’
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলে কমতে থাকে দাম।
গত দুই বছরের মধ্যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানান।
সেখানে তিনি লেখেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সুচিন্তিত নীতি-কৌশলের ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে। জুন ২০২৫ মাসের উপাত্ত অনুযায়ী পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় ২ শতাংশ কম। খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়ে ৭.৩৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। খাদ্য-বহির্ভুত মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং আগামীতে তা খুব দ্রুত কমে আসবে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯.১৭% ছিল, যা মার্চ মাসের তুলনায় কিছুটা কম। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯.৩২ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ৯.৯৪ শতাংশ।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছে, যার ফলে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে ।
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেছেন যে, ২০২৫ সালের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫% এর নিচে নেমে আসবে।
ঢাকা/ইভা