ছিবগাতউল্ল্যাহ সিআইডির প্রধান ও রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকার ডিআইজি
Published: 7th, May 2025 GMT
পুলিশের দুজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি) ও চারজন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ উচ্চপর্যায়ের ১৫ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই বদলির কথা জানানো হয়।
এর মধ্যে শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্ব) মো.
রেজাউল করিম মল্লিককে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার পদ থেকে ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
অন্যান্য পদের মধ্যে পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীকে রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির (বিপিএ) অধ্যক্ষ পদে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেনকে পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্ব), সিআইডি থেকে ডিআইজি গাজী জসীম উদ্দিনকে শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্ব), পুলিশ অধিদপ্তরের ডিআইজি শোয়েব রিয়াজ আলমকে (বর্তমানে বিপিএ সারদা, রাজশাহী হিসেবে বদলির আদেশপ্রাপ্ত) ঢাকার স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নে (এসপিবিএনে) বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া পৃথক প্রজ্ঞাপনে নয়জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবালকে ১২ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক, ঢাকার টিডিএসের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম মোশাররফ হোসেন মিয়াজীকে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি), পুলিশ স্টাফ কলেজের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আবদুর রাজ্জাককে রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট ও সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদকে ৫ এপিবিএনের অধিনায়ক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এসবি ঢাকার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানকে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (পিটিসি) অতিরিক্ত ডিআইজি, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ জান্নাত আরাকে রংপুর পিটিসির অতিরিক্ত ডিআইজি, ৫ এপিবিএন ঢাকার অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) শামীমা আক্তারকে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি, এসবি ঢাকার অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানকে এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত ডিআইজি এবং এসবি ঢাকার অতিরিক্ত ডিআইজি এ এইচ এম আবদুর রকিবকে নোয়াখালীর পিটিসির অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন হাবিবুর
ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেসে (বেতারবার্তা) এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর মো. কামরুল হাসান।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল।
গত বছরের ১৭ জুলাই ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কামরুল। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওয়্যারলেসে (কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ান–১) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন হাবিবুর রহমান। তখন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বার্তাবাহক হিসেবে তিনি (কামরুল) ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।
হাবিবুর রহমানের সেই ওয়্যারলেস বার্তার অডিও রেকর্ড জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে সেই অডিওটি দুবার শোনানো হয়।
সাক্ষী কামরুল হাসান জবানবন্দি দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?’
জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক) জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এ বিষয়টি ম্যাটার অব আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আর্গুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।
এ মামলায় গতকাল আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এসআই (উপপরিদর্শক) কামরুল হোসাইন ও মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই মো. শাহেদ জোবায়েরের পুনঃ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আজ সাক্ষ্য দেবেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, হবে সরাসরি সম্প্রচারট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার (আজ) সাক্ষ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্তের সময় শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ জব্দ করেছেন, সেই ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হবে।
উত্তরা ও সিলেটের মামলায় প্রতিবেদন
দাখিলের সময় বাড়লগণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল–১। এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।