বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতির ধারা অব্যাহত আছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো থাকায় দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি এখন অনেক কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪৪০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি মাত্র ৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে। সার্বিক লেনদেনেও ঘাটতি অনেক কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চভিত্তিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৩৮৭ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল তিন হাজার ৯৫ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৯৩ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। আমদানি বেড়েছে ২৬০ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৫৭৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলার বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আমদানিতে এখন আর আগের মতো কড়াকড়ি নেই। এখন আমদানিকারকরা ব্যাংকে গিয়ে ডলার পাচ্ছেন। ডলার সংকটের কারণে গত অর্থবছরে যেখানে আমদানি কমে যায় ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেই অবস্থা নেই। আমদানি আগামীতে আরও বাড়বে। 

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৭৩৭ কোটি ডলার। গত ৯ মাসে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৪৭১ কোটি ডলার বা ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ। সব মিলিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে ৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘাটতি ছিল ১৩০ কোটি ডলার। 

চলতি হিসাবের সামান্য ঘাটতি থাকলেও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে। মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১৩১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল মাত্র ৯০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৭৬ কোটি ডলার। আগের মাস ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘাটতি ছিল ১১১ কোটি ডলার।

বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতির কারণে আগে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। দীর্ঘ ২০ মাস পর গত ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছে। অবশ্য আকুতে পরিশোধের পর রিজার্ভ আবার ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দর ১২২ টাকায় স্থিতিশীল আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কড়াকড়ি করছে। নীতি দুর্বলতার সুযোগে আগে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে হুন্ডি কমে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি অনেক বাড়ছে। এ সময়ে আমদানি বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে তিনি আশা করেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল নদ ন ক ল নদ ন আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মাশুল (ফি) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত এপ্রিলে কাঁচা পাট রপ্তানিতে মাশুল সাড়ে তিন গুণ ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। গত ২৬ জুন সেই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করেছে। অর্থাৎ আগের মাশুলই তারা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ব্যাংকগুলোকে আগের হারেই মাশুল আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে।

গত এপ্রিলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে রাজস্ব বাড়িয়ে সাত টাকায় নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল দুই টাকা। অর্থাৎ এই মাশুল বাড়ানো হয় প্রায় সাড়ে তিন গুণ। আর পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে রাজস্ব ১০ পয়সা থেকে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ৫০ পয়সা করা হয়।

এর আগে ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২৬ জুন জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘৭ এপ্রিল জারি করা মাশুল নির্ধারণসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হলো। পাশাপাশি আগের মতো প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকার রাজস্ব হিসেবে দুই টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।’

কমছে নগদ সহায়তা, রপ্তানিতে ধাক্কা

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়। তখন বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে নগদ সহায়তা ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, কাঁচা পাট হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। একসময় বাংলাদেশি পাটপণ্যের বড় বাজার ছিল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর দেশটি অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় দেশটিতে পাট সুতা রপ্তানি কমে ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমেছে।

এদিকে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বছর বছর কমছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারের পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে হয় ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরও কমে হয় ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও কমে ৮২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল।

পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। ওই অর্থবছরে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি এসেছে ভারত থেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিলি কাস্টমসে রাজস্ব আদায় ৭১৯ কোটি টাকা 
  • কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না
  • শাবিপ্রবিতে ২০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
  • তিন কারণে হঠাৎ বরখাস্ত হলেন চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার
  • গত অর্থবছরে রপ্তানি ৯% বেড়েছে
  • অর্থবছরের প্রথম লেনদেনে সূচক ঊর্ধ্বমুখী
  • সোনারগাঁয়ে কৃষকদের ফলজ চারা ও সার বীজ বিতরণ
  • দুই কারণে জুনে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৭%
  • সরকারি অনুদানে মূলধারার সিনেমা উপেক্ষিত, ক্ষোভ প্রকাশ নায়ক-পরিচালকের
  • অনিশ্চয়তা আর চ্যালেঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কম