বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছোট দুটি শপিং ব্যাগ পান মো. মিজানুর রহমান (৬০)। ব্যাগ খুলে ভেতরে দেখেন একটি মোবাইল ফোন ও একটি ওয়ালেট। সেই সঙ্গে একটি এনআইডি। এর সূত্র ধরে ব্যাগের ভেতর থাকা ৫২ হাজার ৫০০ টাকাসহ সবকিছু ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সদরে ঘটে এই ঘটনা।
মিজানুর রহমান আখাউড়া পৌর শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন তিনি। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আখাউড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের সামনের সড়কে মঙ্গলবার সকালে ব্যাগ দুটি পাই। মোবাইলের সঙ্গে টাকাভর্তি ওয়ালেট ছিল। ভেতরে এনআইডিতে পাওয়া ঠিকানা অনুযায়ী মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শামসু মিয়ার ছেলে মো.
পরে মিজানুর রহমান আখাউড়া পোস্ট অফিসের সামনে আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন। আলমগীর দুটি ব্যাগের রংসহ ভেতরে কী কী ছিল তা বর্ণনা করেন। সব তথ্য মিলে যাওয়ার পর মিজানুর রহমান তাঁকে টাকা, মোবাইল ফোনসহ দুটি শপিং ব্যাগ বুঝিয়ে দেন।
এ সময় মিজানুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র সিয়াম সরকার। তিনি বলেন, ‘মিজান আঙ্কেল ব্যাগ দুটি পেয়ে আমাকে ডেকে বলার পর আমি ছবি তুলে ফেসবুকে দিই। পরে এনআইডির ঠিকানা অনুযায়ী অটোরিকশা করে আলমগীর মিয়ার বাড়িতে যাই। পরে তাঁর সবকিছু বুঝিয়ে দিই। মিজান আঙ্কেল খুব ভালো মনের মানুষ।’
টাকা হারিয়ে পাগলপ্রায় আলমগীর মিয়া। তিনি হারানো টাকা, মোবাইল ফেরত পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আখাউড়ার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করছিলাম। এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসে। এই সময়ে মিজানুর রহমানের মতো লোকের অভাব। তিনি সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ম জ ন র রহম ন আলমগ র
এছাড়াও পড়ুন:
খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন জেলার তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ আলমগীর হোসেন (৪০)। আজ সোমবার ভোরে চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন মিজি বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আলমগীর হোসেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি হত্যা ও দুটি মাদক মামলা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন।
আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, নোমান ও রাকিব খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আলমগীর হোসেন। ওই মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে গ্রেপ্তার হন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আর আদালতে হাজিরা দেননি।
আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন। কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। নোমান ও রাকিব হত্যার ২৩ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আলমগীরের বিরুদ্ধে আজাদ হোসেন ওরফে বাবলু (২৫) নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত ২ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আজাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাদক বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বশিকপুর, চাটখিল ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবিচাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদ আলম ভূঁইয়া আলমগীরের লোকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি ও তাঁর সহযোগী তারেক রহমানকে আলমগীর হোসেনের লোকজন অপহরণ করেন। রাত ১০টার দিকে শামসুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী সময় ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করা হয়।
মোরশেদ আলম আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পর পরদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহরণের সময় তাঁদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও তাঁরা তাঁর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নয়তো জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এই আশঙ্কা তাঁদের।