আবেগগত অপরিপক্বতার এই ৮ লক্ষণ মিলিয়ে নিন
Published: 8th, May 2025 GMT
১. কখনো নিজের ভুল স্বীকার না করা
আবেগগত অপরিপক্বরা কখনো নিজের ভুল স্বীকার করেন না। এতে তাঁদের ‘ইগো হার্ট’ হয়। অথচ নিজের ভুল বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বীকার করার মাধ্যমে ভুল সংশোধন করে নেওয়া সহজ হয়। তা ছাড়া ‘সরি’ বলার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
২. সব সময় কথায় জিততে চাওয়াআবেগগত অপরিপক্বরা ভিন্নমতকে সম্মান জানাতে পারেন না। নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁরা সব সময় কথায় জিততে চান।
আরও পড়ুনযে ৮ লক্ষণ দেখে বুঝবেন সঙ্গী প্রতারণা করছে২০ জানুয়ারি ২০২৫৩.প্যাসিভ অ্যাগ্রেশন
আবেগগত অপরিপক্বরা তাঁদের কথা ও কাজে নানাভাবে অন্যকে ছোট দেখাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আদতে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তাই অন্যকে ছোট করে মনে মনে নিজে বড় হতে চান।
৪. হুটহাট রেগে যাওয়াচট করে রেগে যাওয়ার অর্থ হলো আবেগ আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা আবেগগত অপরিপক্বতার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৫. সমালোচনা নিতে না পারাঠিক এ কারণেই আবেগগত অপরিপক্বরা প্রতিনিয়ত নিজেদের শুধরে নিয়ে সামনে এগোতে পারেন না। কেননা তাঁরা সমালোচনা নিতে পারেন না।
আরও পড়ুনএই ১২ লক্ষণ থাকলে আপনি সম্ভবত এডিএইচডিতে আক্রান্ত৩০ জানুয়ারি ২০২৫৬. প্রতিনিয়ত সমর্থন চাওয়াআবেগগত অপরিপক্বরা তাঁদের আশপাশে ‘ইয়েস ম্যান’ নিয়োগ দেন বা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কেননা তাঁরা নিজেদের আবেগ বা কর্মকাণ্ড নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নন। এ কারণে ‘পাওয়ার পজিশন’–এ থাকলে বা ক্ষমতাধর হলে, তাঁদের আশপাশে তোষামোদেরা ঘুরঘুর করে।
৭. কঠিন কথোপকথন এড়িয়ে যাওয়াআবেগগত অপরিপক্বরা ‘সিচুয়েশন ফেস’ করতে ভয় পান। কঠিন কথোপকথন এড়িয়ে চলেন।
৮. গিল্ট ট্রিপিংঅন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে তাঁরা গিল্ট ট্রিপিংয়ের মতো ইমোশনাল ম্যানিপুলেশনের আশ্রয় নেন। ধরুন, তিনি আপনাকে বলবেন, ‘তুমি যদি আসলেই আমার ভালো বন্ধু হতে তাহলে কাজটা করে দিতে।’ কিংবা ‘তোমার জন্য আমাকে আজ কতগুলো কথা শুনতে হলো!’ ইত্যাদি। এককথায়, আপনাকে প্রতিনিয়ত অপরাধী অনুভব করান। পুরোনো ভুলের কথা মনে করিয়ে দেন। নিজে ‘ভিকটিম কার্ড’ প্লে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড
আরও পড়ুনযেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনাদের বিচ্ছেদ অনিবার্য ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে চট্টগ্রামে বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার
দুটি তথ্য—জার্নাল অব কমার্সের মতে, বাংলাদেশ প্রতিবছর চট্টগ্রাম বন্দরের অদক্ষতা এবং জটের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা না হলে আমাদের জিডিপি বাড়ত ২ শতাংশ। এদিকে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীকে একটা কথা প্রায়ই শুনতে হয়, কেন বিনিয়োগ আসছে না। এখন তিনি একবারেই যদি ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসেন, তাহলে?
বাংলাদেশের মানুষ আসলে ভুল ধারণা এবং ভুল তথ্যের ওপরে যুদ্ধ করছে। আমি চেষ্টা করব মানুষের ভুল ভাঙানোর।
ডিপি ওয়ার্ল্ড কেডিপি ওয়ার্ল্ড হলো সম্পূর্ণ সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি বৈশ্বিক বন্দর ও লজিস্টিকস কোম্পানি। এটি ৭০টির বেশি দেশে পোর্ট, কনটেইনার টার্মিনাল, রেল, ওয়্যারহাউস ও কাস্টমস ব্যবস্থাপনার কাজ করে। ২০২৩ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের শীর্ষ কনটেইনার টার্মিনাল অপারেটরের মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিল। তারা বিশ্বব্যাপী কনটেইনার ট্র্যাফিকের প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ পরিচালনা করে। তাদের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা প্রায় ৮১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টিইউ (বিশ ফিট কনটেইনারের ইকুইভেলেন্ট ইউনিট)।
আরও পড়ুনবন্দর পরিচালনা বিদেশিদের দেওয়া কতটা যৌক্তিক১৯ মে ২০২৫চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবস্থা কীবিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের পোর্ট কনটেইনার ইনডেক্স অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর ৪০৫টি বন্দরের মধ্যে ৩৩৭তম। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর এশিয়ার সবচেয়ে অদক্ষ বন্দর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজের গড় আনলোডিং টাইম প্রায় ৩ দশমিক ২৩ দিন, যেখানে কলম্বো বন্দরে মাত্র শূন্য দশমিক ৮৬ দিন। জাহাজের গড় বন্দরে অবস্থানকাল প্রায় ১১ দশমিক ৫ দিন। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি ঘণ্টায় একটি ক্রেন ১৫-২০টি কনটেইনার লোডিং–আনলোডিং করে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি ২৫+। বার্থ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩৫টি কনটেইনার পরিচালনা করে, যেখানে কলম্বো বন্দরে এটি ৮০-১০০টি। তবে বিগত সরকার পতনের পর পারফরম্যান্স আগের তুলনায় ৫ দশমিক ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউমুরিং টার্মিনালের বর্তমান অবস্থা কীসাইফ পাওয়ারটেক ২০০৭ সাল থেকে এই টার্মিনালের দায়িত্বে আছে। ২০১৫ সাল থেকে তাদের সঙ্গে যোগ হয় এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স এবং এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড। তিনটি কোম্পানিকেই বিগত লীগ সরকারের স্নেহধন্য বলা হয়ে থাকে। এই টার্মিনাল বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনাল, যেখানে ৫টা জেটির জন্য ১৪টা গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে।
নিউমুরিং টার্মিনাল কি খুব ভালো চলছেগত মে মাসের তিনটি টার্মিনালের কনটেইনার আনলোডিংয়ের ডেটা বিশ্লেষণ দেখা গেছে, যেখানে ৬টি জেটির দায়িত্বে আছে ৬টা কোম্পানি এবং পুরোই ম্যানুয়ালভাবে চলে। চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) যাদের দায়িত্বে আছে সেই সাইফ পাওয়ারটেক এবং এখানে ৪টা গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে, তারা আনলোডিং করেছে মাত্র ৭৫৭টি এবং নিউমুরিং টার্মিনাল করেছে ৮৪৯টি। অন্যদের ইকুইপমেন্ট নেই বলেই নিউমুরিংকে আসলে সফল দেখায়। বাস্তবে সব কটিই ব্যর্থ। চট্টগ্রাম বন্দর নিজের টাকায় পোর্ট ইকুইপমেন্ট কেনে। সেটার লোকাল এজেন্ট, সাপ্লায়ার, মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্ট সাইফের। ইকুইপমেন্ট ব্যবহারও করছে সাইফ। নষ্ট হলে পোর্টের টাকায় পুনঃসরবরাহও করে তারা।
ডিপি ওয়ার্ল্ড কীভাবে আমাদের বন্দর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে১. এখন গড়ে একটা জাহাজকে ১১ দিন অপেক্ষা করতে হয় (যা কোনো কোনো সময়ে ২০ দিনও হয়ে যায়), এটা তারা কমাতে বার্থের দক্ষতা বাড়াবে। সোমালিল্যান্ডের বারবেরা বন্দরে ৪৫০ শতাংশ পর্যন্ত দক্ষতা বাড়িয়ে সময় কমিয়েছিল তারা।
২. আমাদের পোর্টের সেরা সক্ষমতা ২১ কনটেইনার প্রতি ঘণ্টায়। তা বাড়িয়ে ৩০-৩৫ কনটেইনার প্রতি ঘণ্টায় করতে পারবে তারা। পেরুর পোর্ট কালাওতে তারা ইতিমধ্যেই ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দক্ষতা বাড়িয়েছে।
৩. একটি জাহাজ ১ দিন অপেক্ষা করলে প্রতিদিন ১২ থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ড্যামারেজ চার্জ দিতে হয়। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি জাহাজ এংকরেজে অপেক্ষা করে। এক দিন করে কমলেও কত টাকা আমাদের কমবে নিজেরাই হিসাব করে দেখতে পারেন?
৪. কর্মদক্ষতা যদি বাড়ে, অবশ্যই সরকারের আয় বাড়বে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের জন্য ডমিনিকান রিপাবলিকের এক বছরে আয় বেড়েছিল প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার।
৫. ডিপি ওয়ার্ল্ড তার প্রস্তাবে পুরোনো ক্রেন বাদ দিয়ে নতুন ও আধুনিক ক্রেন এবং আইটি সিস্টেম নিয়ে আসবে বলেছে। তারা ফিলিপাইনে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস) বসিয়েছে, যা কাস্টমসেরও দক্ষতা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া অটোমেটেড গেট, রিয়েল টাইম পারফরম্যান্স ডেটা, কেপিআই অ্যানালাইসিস করে টার্মিনালকে ডিজিটালাইজেশন করা সম্ভব। অটোমেটেড ডকুমেন্ট হলে কাস্টমসের সাইডে কিছু কাজ কমে যাবে। যা সময় কমাবে এবং ডিক্লেয়ার না করে কোনো জিনিস বের করাও যাবে না।
আরও পড়ুনবিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ব্যবস্থাপনার ইজারা দেওয়ার ঝুঁকিগুলো কী১৪ জুন ২০২৫৬. বাংলাদেশের মানুষের একটা ধারণা, বিদেশি কোম্পানি এলে বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসে। ভারতীয় ও চায়নিজরা ছাড়া বাকিরা অল্প কিছু মানুষ আনে এবং বাংলাদেশের বহির্বিশ্বে যা ইমেজ, খুব বেশি লোক এখানে এসে থাকতেও চায় না। এখন আমাদের যেহেতু টার্গেট ঘণ্টায় ৩০–৩৫ কনটেইনার, অবশ্যই নতুন লোক নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে তারা ১২ হাজার ৫০০ জন নতুন মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। তাই শ্রমিকেরা যে আন্দোলন করছেন, তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই; বরং বিদেশি কোম্পানি সাধারণত আগের তুলনায় বেশি বেতন দেয়। তবে সরকারকে চুক্তিতে অবশ্যই শর্ত দেওয়া উচিত ভারতীয়দের যেন আধিক্য না থাকে।
৭. নিজেদের স্বার্থেই এখন সব বন্দরকে গ্রিন পোর্টে যেতে হচ্ছে। পেরুতে ডিপি ওয়ার্ল্ড বছরে ২০০০ টন কার্বন সাশ্রয় করছে তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে। বাংলাদেশেও তাদের বৈশ্বিক বাজারে শেয়ারমূল্য বাড়ানোর জন্য হলেও করতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো গ্রিন পোর্টের যুগে প্রবেশ করবে।
বাংলাদেশের আরও কী কী লাভ হতে পারে১. আমাদের লজিস্টিক খরচ দেশের জিডিপির ১৫-১৬ শতাংশ, যা উন্নত বিশ্বে হয় ৮-৯ শতাংশ। এলডিসি থেকে বাংলাদেশের শিগগিরই উত্তরণ হবে। সে ক্ষেত্রে বিশেষ অনেক সুযোগ-সুবিধা আমরা হারাব। বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ধরে রাখতে আমাদের লজিস্টিক খরচ কমাতেই হবে।
২. এই চুক্তি হবে জিটুজি পদ্ধতিতে। ফলে বাংলাদেশের আমিরাত সরকারের কাছে আরও কিছু চাওয়ার আছে। মিনা ও আফ্রিকান অঞ্চলে পণ্য পরিবহন হয় আরব আমিরাত দিয়ে। ডিপি ওয়ার্ল্ড ইতিমধ্যেই দুবাইয়ে বাংলাদেশের পণ্যের জন্য পারমানেন্ট ডিসপ্লে সেন্টার করে দিতে চেয়েছে, যাতে আমরা ওই এলাকার মার্কেট ধরতে পারি।
৩. ডিপি ওয়ার্ল্ড আরব আমিরাতের জেবেল আলি পোর্টের ইকোসিস্টেম অনুসারে বাংলাদেশের বন্দরের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে চেয়েছে। আরব আমিরাতের অর্থনীতির ৩৫ শতাংশ নির্ভর করে জেবেল আলি পোর্টের ওপর। এটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর একটি হাবে পরিণত হতে পারে। আরাকানের যুদ্ধাবস্থা এবং শ্রীলঙ্কা হয়ে ঘুরে যাওয়ার ফলে পরিবহণ খরচ অনেক বাড়ে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য সুযোগ কিন্তু তার জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি দরকার।
৪. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন। আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্য আরব আমিরাত প্রথম দিকের। আমাদের থেকে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে অলরেডি ডিপি ওয়ার্ল্ড সাহায্য এবং মধ্যস্থতা করবে বলেছে।
৫. যত বড় কোম্পানি আসবে, তত অন্য বড় কোম্পানি এই দেশে আসার আস্থা পাবে। আমাদের বিনিয়োগে র্যাঙ্কিং বাড়বে। বিশ্বে সবাই কোনো না কোনোভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে যুক্ত। এখন নির্বাচনের পর অনেকেই বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করছে। আমরা ২০ কোটির মার্কেট—এই সুযোগ আমাদের নেওয়া উচিত।
৬. সরকার চুক্তির সময় ডিপি ওয়ার্ল্ড যেন চট্টগ্রামে একটা উন্নত মানের হাসপাতাল করে দেয়, সে ব্যাপারে দর কষাকষি করতে পারে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের এ রকম কাজের উদাহরণ অন্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আছে এবং চট্টগ্রামে একটা ভালো মানের হাসপাতাল খুব দরকার।
কারা বিরোধিতা করছে এবং কেনআমি মনে করি যারা বিরোধিতা করছে—এরা কেউই বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনার কাছে ভুক্তভোগী না। এখানে এক পক্ষ আছে বর্তমান ইজারাদারদের পক্ষের। তারা চায় না, সোনার ডিম পাড়া হাঁস চলে যাক। এক পক্ষ আছে, যারা আশা করছে ভবিষ্যতে অন্য রাজনৈতিক দল এলে এই সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে দখল করতে পারবে। বামপন্থী রাজনীতির অনেকেই তাদের চিরায়ত রাজনীতির কারণে এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধী অবস্থান নেয়, সেটি কারণে–অকারণে হোক বা বাস্তবতা না বুঝে হোক।
তবে ভারতেও চট্টগ্রামে বন্দরে ডিপি ওয়ার্ল্ডের এই বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের ভারতের সঙ্গে বন্দর শেয়ারের একটা চুক্তি আছে, যেখানে তাদের জাহাজ এলে আগে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার ধারা আছে। এখন সেই বিশেষ সুযোগের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে কী না আমরা জানি না। ডিপি ওয়ার্ল্ডের মতো বিদেশি কোম্পানি এখানে যুক্ত হলে সেসব জায়গায় আরও বেশি নজরদারি ও তৎপরতা বাড়বে, ফলে এখানে ভারতের রুষ্ট হওয়ার কারণও থাকতে পারে। এ অঞ্চলে অন্য কোনো হাব হোক, সে ব্যাপারেও তাদের আপত্তি থাকতে পারে। যে কারণে আমরা সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্রবন্দর করতে পারিনি এবং এই জোনের গভীর সমুদ্রবন্দর চলে গেছে আরাকানে।
এখন চুক্তির বিপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি সার্বভৌমত্বের হুমকি। একটা টার্মিনাল দিয়ে দেশ বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব? যেখানে পুরা বন্দরের দায়িত্ব থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। যারা এ বিষয়গুলো সামনে আনছেন তাদের আসলে বন্দর ও টার্মিনাল নিয়ে কোনো ধারণাই নেই।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের দায়িত্ব শুধু একটা টার্মিনালের কনটেইনার হ্যান্ডলিং, বাকি সবকিছুই থাকবে বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে। এ ব্যাপারে আমরা অতীতের পরিসংখ্যানগুলো দেখতে পারি। এর আগেও পতেঙ্গা টার্মিনাল বিদেশি সৌদিভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের কাছে দিয়েছি। তারা তো কোনো হুমকি দেখাচ্ছে না? তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ হবে মাত্র ১৭০ মিলিয়ন ডলার। ডিপি ওয়ার্ল্ড বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় ২০১৮ সালে। তখন কিন্তু আরাকান নিয়ে কোনো কথা ছিল না। এদিকে ডিপি ওয়ার্ল্ড ৪০টিন বেশি দেশে থাকলেও কোথাও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির কথা শোনা যায়নি। তাহলে কারা কোন যুক্তিতে এই প্রশ্ন তুলেছে?
এই চুক্তি নিয়ে আমি বন্দরে যারা কাজ করে এমন বেশ কিছু লজিস্টিক কোম্পানি, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, জাহাজের ক্যাপ্টেন, বিদেশি কোম্পানিসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের কারও কারও বিভিন্ন দেশে ডিপি ওয়ার্ল্ডের বন্দরে কাজ করারও অভিজ্ঞতা আছে আবার এই দেশের বন্দরেও। এখনো একজনও এই বিনিয়োগের বিপক্ষে বলেনি। সবাই এক বাক্যে এ দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম বিরক্ত এবং আধুনিকায়নের পক্ষে।
চুক্তি কোনো পর্যায়ে আছেচুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন এখনো ঠিক হয়নি যে আমরা বলতে পারব এটা দেশবিরোধী। এই চুক্তি দেখভালের সঙ্গে যুক্ত আছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের উপদেষ্টা হিসেবে। তাদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত টিম লিডার এখনো টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন জমা দেয়নি। যদিও তাদের জমা দেওয়ার দিন ছিল গত এপ্রিলের মাঝামাঝি। সেটি এতদিনেও কেন হয়নি সে প্রশ্ন থাকতে পারে।
আমলারাও প্রথম আলোচনার পর থেকে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় নষ্ট করেছে। এর মধ্যে এই চুক্তির ব্যাপারে এক সংগঠন আদালতে রিট করেছে। আগামী মাস মানে জুলাইয়ের ৭ তারিখে সাইফ পাওয়ার টেকের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার কথা। এদিকে ডিপি ওয়ার্ল্ডও সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি না হলে, এই বিনিয়োগ অন্য কোথাও করবে বলেছে। এরপর তারা আগামী বছর জুনের আগে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারবে না। এই বিনিয়োগ চলে গেলে বিদেশে আসলেই একটা বাজে বার্তা যাবে আমাদের নিয়ে, যা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত?অবশ্যই। কারণ, ভবিষ্যৎ দেশ পরিচালনা করবে তারা। এই চুক্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা আছে। প্রস্তাবিত ধারাগুলো সরকারের উচিত সবাইকে জানিয়ে তারপরই এগোনো। বিগত সরকার আমাদের কাছে সব লুকিয়ে রেখে এখন সবার মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে পারলে মানুষ অন্তত বুঝবে এখানে দেশের ক্ষতি হওয়ার কিছু নেই এবং দেশের ভালো হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই সাহায্য করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ, এই সুফল ভোগ করবে আসলে পরের সরকারই।
দেশের এই স্থবির সময়ে ডিপি ওয়ার্ল্ড যদি তাদের প্রস্তাবিত ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসে এবং তারা যদি শ্রমবাজারে আমাদের সহায়তা করে, এই দেশের অর্থনীতি আবার চলা শুরু করবে। এই চুক্তির অঙ্ক এককভাবে কোনো কোম্পানির জন্য এই দেশে তৃতীয়। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে আমাদের রিফাইনারি প্রজেক্ট আসা সহজ হবে (যা জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আমাদের এখন খুব দরকার) এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
দেশের জন্যই সরকার, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মচারী, দেশের মানুষ—সবারই চেষ্টা থাকতে হবে। আমাদের যেমন চেষ্টা থাকতে হবে, তেমনি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই দেশবিরোধী কোনো শর্ত যেন আমাদের ওপর চেপে না বসে। তবে হ্যাঁ, শুধু কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি বাড়ালেই হবে না, আমাদের কাস্টমসেও গতি বাড়ানোর দিকে সবার নজর দেওয়ার সময় হয়েছে; যা আসলে করতে হবে সরকারকেই।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
*মতামত লেখকের নিজস্ব