কম খরচ এবং সহজে ভিসার কারণে উচ্চশিক্ষায় বেছে নিতে পারেন এই ৫ দেশ
Published: 8th, May 2025 GMT
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে ভিসা পেতে বিলম্ব এবং পড়াশোনার খরচ বেশি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিকল্প দেশ খোঁজেন। বিকল্প দেশের প্রতি ঝোঁকার অন্যতম কারণ সাশ্রয়ী মূল্যের শিক্ষার সঙ্গে দ্রুত এবং আরও সহজলভ্য শিক্ষার্থী ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) প্রক্রিয়া। এমন পাঁচটি দেশ আছে, যেখানে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং দ্রুত। দেখুন তালিকা—
পোল্যান্ড
সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা, নিরাপদ পরিবেশ ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে পোল্যান্ড। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হওয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশটির প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই ভিসা পেয়ে যান। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য অধ্যয়নের গন্তব্যগুলোর মধ্যে এটি একটি হতে পারে।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডের এআইটি স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, জেনে নিন সব তথ্য০৪ মে ২০২৫জার্মানি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চমানের শিক্ষাব্যবস্থা এবং টিউশন মুক্ত নীতির কারণে জার্মানি অনেকটাই এগিয়ে অন্য অনেক দেশের চেয়ে। দেশটিতে স্টুডেন্ট ভিসা গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি। স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত) প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সহজেই ভিসা পেয়ে যান। এ ছাড়া জার্মানি ১৮ মাসের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা প্রদান করে, যা স্নাতকদের তাঁদের পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি খুঁজতে সাহায্য করে।
ফ্রান্স
ফ্রান্সও সহজলভ্য ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের কাছে। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিসা পেয়ে থাকেন। ন্যূনতম ডকুমেন্টেশন ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণ তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয়ে থাকে। ফ্রান্স জনপ্রিয় অধ্যয়নের গন্তব্য হওয়ার পেছনে ব্যবসা, আতিথেয়তা এবং ফ্যাশনও একটি কারণ মনে করা হয়।
আরও পড়ুনজাপানের স্টাডি সাপোর্ট স্কলারশিপ, ইংরেজি ও জাপানিজ দুই ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন৪ ঘণ্টা আগেসংযুক্ত আরব আমিরাত
ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়িক প্রোগ্রামে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সঙযুক্ত আরব আমিরাত পছন্দের একটি গন্তব্য হয়েছে উঠেছে। দেশটি সাধারণত ৩০ দিনেরও কম সময়ে স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া করে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রদান করে। ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ ভিসা গ্রহণের হার এবং সামগ্রিক শিক্ষার খরচ কম থাকায় মধ্যপ্রাচ্যর দেশটির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে।
ফিলিপাইন
ফিলিপাইন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত শিক্ষা প্রোগ্রামের জন্য বেশ পরিচিত। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং টিউশন ফি পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ভিসা গ্রহণের হার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শোভাময় দুই ম্যুসেন্ডা
দেশের তিন পার্বত্য জেলা এবং বৃহত্তর সিলেটের অনুচ্চ টিলাগুলোতে বুনো ঝোপঝাড়ের ভেতর রূপান্তরিত পাতার একধরনের গুল্ম চোখে পড়ে। সবুজের পরিবর্তে হঠাৎ সাদা রঙের দু–এক গুচ্ছ পাতাভরা ডালপালা দেখে ফুলও মনে হতে পারে। প্রথম দিকে আমারও তাই মনে হয়েছে।
১৯৮৭ সালে প্রথম রাঙ্গামাটি গিয়ে এ গাছ দেখে বারবার ভেবেছি, সাদা রঙের এই ফুলগুলোর নাম–পরিচয় কী? কিন্তু গাছগুলো পাহাড়ের ঢালে থাকায় কাছে গিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ভুল ভাঙে। এটা আসলে গাছটির রূপান্তরিত পাতা। বইপুস্তক ঘেঁটে নিশ্চিত হই এটিও ম্যুসেন্ডা বা নাগবল্লীরই আত্মীয়া। তবে পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। প্রচলিত ইংরেজি নাম ডোয়ার্ফ ম্যুসেন্ডা, হোয়াইট উইং ইত্যাদি। স্থানীয়ভাবে চাত্তরি-চাউনরি, শিলচাঔনরি, শিলচাওরি, শিরদাউরা, রানীরাতাক, পাত্তো মরমইজ্জা, শেওদিমা (চাকমা), রানীতাগো গাছ (ত্রিপুরা), রানীর্তাক (তঞ্চঙ্গ্যা), শিচাম্বা (মারমা) ইত্যাদি নামে পরিচিত। আমাদের বন-পাহাড়ে ম্যুসেন্ডা বা নাগবল্লীর যে কটি রকমফের দেখা যায়, এটি তার মধ্যে অন্যতম। এ গাছ সংখ্যায় বেশি এবং সহজলভ্য।
চাওরি বা শিলচাওরি (Mussaenda roxburghii) খাড়া ধরনের গুল্ম। কখনো কখনো অর্ধখাড়াও হতে পারে। পাতা উপপত্রযুক্ত এবং বৃন্তক, উপপত্র প্রশস্তভাবে ত্রিকোণাকার থেকে বল্লমাকার, শীর্ষ দ্বিখণ্ডিত, খণ্ডক সোজা, রোমশ, পত্রবৃন্ত বলিষ্ঠ, ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতার ফলক উপবৃত্তাকার বা আয়তাকার। পুষ্পবিন্যাস ঘন ও ডালের আগায়। সাধারণত গোড়া থেকে তিন শাখাবিশিষ্ট, পৃথক করা নয়, ফুলের সংখ্যা অনেক। ফুলের বৃতি দন্তকসহ ফল পাকা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে থেকে যায়। পাপড়ি নল ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা, সরু, বাইরের দিক সরু রেশমি রোমে আবৃত। ফল আয়তাকার বা উপবৃত্তীয়, ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। ফুল ও ফলের মৌসুম মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে এই গাছ সহজলভ্য। দেশের সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাতজ্বর ও অন্যান্য জ্বরের চিকিৎসায় এই গাছ ব্যবহার করেন।
হলুদ ফুলের ম্যুসেন্ডাআশির দশকে সাভারে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেশ কয়েক বছর ক্যালেন্ডারের পাতায় এই স্মৃতিসৌধটির ছবি ছাপা হয়েছিল। তখন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের লালচে রঙের সুদৃশ্য কিছু পুষ্পঝাড়ের ছবি আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। একসঙ্গে অনেকগুলো সারিবদ্ধ পুষ্পস্তবক সত্যিই যেন সেখানে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে রেখেছিল। পরে জেনেছি, সিঁদুরে লাল বৃত্যংশের এ ফুলগুলোর নাম ম্যুসেন্ডা অ্যারিথ্রোফাইলা। দেশি গাছ নয়। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আলংকারিক হিসেবে আমদানি করা হয়। আদি আবাস আফ্রিকা। আলংকারিক গুল্ম হিসেবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আগে খুব একটা দেখা যেত না। দীর্ঘদিন বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান এবং পথপাশে রূপান্তরিত পাতার সিঁদুরে লাল ও সাদা রঙের ম্যুসেন্ডা দেখেই সন্তুষ্ট থেকেছি। প্রায় একদশক আগে ঢাকায় রমনা পার্ক নার্সারিতে দাঁতরাঙার পাশে আরেকটি গাছ দেখে ধাঁধায় পড়ি। পাতার বর্ণগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য প্রায় অভিন্ন। আবার ম্যুসেন্ডা নিয়ে মনোযোগী হই। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ও রাঙ্গামাটিতে দেখা গাছগুলোর কথা মনে পড়ে। রমনা পার্কের গাছটির পরিচয় চিহ্নিত করি। আগে উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ছিল ম্যুসেন্ডা লুটিয়া। এখন পরিবর্তিত উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pseudomussaenda flava। এই প্রজাতির ফুলের রং হলুদ।
হলুদ রঙের ম্যুসেন্ডা। রাজধানীর রমনা পার্ক নার্সারি থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি।