চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার আত্মহত্যা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে চলছে মাতম। এলাকাবাসী পলাশের লাশ একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন। পরিবারের লোকজন পলাশের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রীকে দায়ী করে তার শাস্তির দাবি করেন।

র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে পলাশ সাহার অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। 

বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:

আশুলিয়ায় ইউপি সদস্যের ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রামে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার, পাশে ‘সুইসাইড নোট’

ওই চিরকুটে লেখা আছে, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’’

তারাশী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পলাশ সাহার লাশ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর লাশ বাড়ির উঠানে রাখা হয়। এ সময় মা রমা রাণী সাহা ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। রমা রাণী সাহা আহাজারি করতে করতে বার বার ছেলের উপর বৌমার নির্যাতনে কথা বলছিলেন। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পলাশ সাহা তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে পলাশ সবার ছোট। কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পলাশ ঢাকায় চলে যান উচ্চ শিক্ষার জন্য। জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। আরো ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসেন পলাশ সাহা। যেখানে পরীক্ষা দেন সেখানেই চাকরি হয়ে যায় তার। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও কোনোটায় যোগ দেননি তিনি। ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন।

পলাশ সাহার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না গ্রামবাসী। পলাশের মতো নিরীহ ও মেধাবী ছেলে এই গ্রামে ছিল না। তার এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই শোকাহত।

দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার লাশে শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পলাশ সাহার বড় ভাই লিটন সাহা জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তারা বাবাকে হারান। মেধাবী ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে তিনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরেন। পলাশ এসবি সদর দপ্তরে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিয়ে করে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। 

স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন তার মেঝ ভাই নন্দ লাল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে পলাশের স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা টিনটিন মাকে দেখতে পারতেন না। মা পলাশের সঙ্গে থাকুক টিনটিন তা চাইতেন না। এ নিয়ে সবসময় কলহ লেগে থাকতো। পলাশ মাকে খুব ভালোবাসতেন। পলাশ চাইতেন না মা তাকে ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসুক। কয়েক মাস হলো পলাশ র‌্যাবে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে গেলে সেখানেও স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে যান। এ নিয়ে পলাশের সঙ্গে স্ত্রীর ঝগড়া হয়। আমরা মাকে গ্রামে রাখতে চাইলে তিনিও পলাশকে ছাড়া থাকতে নারাজ ছিলেন। মা ও স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতেন পলাশ। এই ভালোবাসা আজ কাল হলো। সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর উপর অভিমান করে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।’’

ঢাকা/বাদল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ পল শ স হ র র জন য পল শ র

এছাড়াও পড়ুন:

সোহান-অঙ্কনের জোড়া সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে বাংলাদেশ

নুরুল হাসান সোহান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ব্যাটে ভর করে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ৩৪৪ রান তোলে স্বাগতিকরা।

ইনিংসের শুরুটা অবশ্য আশানুরূপ ছিল না। মাত্র ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ’। ১০ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। এরপর হাল ধরেন নাঈম শেখ ও এনামুল হক বিজয়। দ্বিতীয় উইকেটে এই জুটি যোগ করেন ৭৩ রান। বিজয় ৩৪ বলে ৩৯ এবং নাঈম ৪১ বলে ৪০ রান করে ফিরে গেলে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন সোহান ও অঙ্কন।

এরপর থেকেই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। চতুর্থ উইকেটে এই দুই ব্যাটার গড়েন ২২৫ রানের রেকর্ড জুটি। দুইজনই তুলে নেন সেঞ্চুরি। সোহান খেলেন ১০১ বলে ১১২ রানের ঝড়ো ইনিংস, যেখানে ছিল ৭টি চার ও ৭টি ছয়। সোহানের বিদায়ের পর অঙ্কনও শেষ ওভারে আউট হন। ১০৮ বলে ১০৫ রানের ইনিংসে তিনি মারেন ৭টি চার ও ৫টি ছয়। 

ক্রিজে এসে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৩ রান করে। ক্রিজে নামলেও মাত্র ১ বল ব্যাট করার সুযোগ পান শামীম হোসেন পাটোয়ারি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৪৪ রান। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েটে ‘ভালো কিছু হতে যাচ্ছে’, তবে আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা
  • প্রধান শিক্ষককে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে গাছে
  • প্রধান শিক্ষককে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে গাছের মাথায়
  • বড় স্বপ্ন পূরণে কীভাবে এগিয়ে যাবেন
  • কেরানি থেকে প্রধান শিক্ষক অবশেষে বরখাস্ত
  • এএসপি পলাশের আত্মহত্যার কারণ জানালেন তার ভাই
  • সোহান-অঙ্কনের সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে বাংলাদেশ
  • হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর বিচারককে ৩ বার ‘ধন্যবাদ’ বললেন তাপস
  • সোহান-অঙ্কনের জোড়া সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে বাংলাদেশ