কুয়েটে ‘ভালো কিছু হতে যাচ্ছে’, তবে আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা
Published: 8th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা কাটেনি। শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় শিক্ষকেরা। আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো তাঁরা কর্মবিরতিতে থাকায় কোনো ক্লাস হয়নি।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, শিগগিরই অচলাবস্থার নিরসন হবে। শিক্ষক সমিতির নেতাদের কণ্ঠেও একই রকম আশার সুর শোনা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। মূলত এখন থেকে অচলাবস্থা নিরসনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত, তবে ক্লাস হচ্ছে না। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের কোনো মুভমেন্ট নেই। উভয় পক্ষ চুপচাপ। মনে হয়, ভালো কোনো কিছু হতে যাচ্ছে।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভায় গত রোববার থেকে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষকদের অনীহার কারণে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এসব কারণে আড়াই মাসের বেশি সময় কুয়েটে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
গত ৫ মে সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ ছাড়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার বুলিং, সামাজিক অবমাননা ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপপ্রচারে যুক্ত পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বন্ধসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
ওই সাধারণ সভার পর শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছু শিক্ষার্থী ১০–১৫ জন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাস ও পরীক্ষা নেবেন না।
১৫ মে শিক্ষকদের দেওয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা সাত কর্মদিবসের কথা বলেছিলাম। তবে আশা করছি, এর আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি নবনিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় সিন্ডিকেট সভা করেছেন। আশা করি, খুব দ্রুতই আমরা সমাধানের দিকে যাব।’
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হযরত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয় পক্ষকে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শুরুতে ফল আসেনি। ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার পর থেকে শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। জানা গেছে, ওই সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সভায় সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সহিংসতার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আবারও শাস্তি পেতে যাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিন্ডিকেটের ওই সদস্য বলেন, আগে সিন্ডিকেটের এক সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিন্ডিকেটের আরেক সভায় ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করা হয়। শাস্তি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি এখন শৃঙ্খলা কমিটি দেখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বারবার ডিন স্যার, বিভাগীয় প্রধান স্যারসহ অন্য স্যারদের কাছে যাচ্ছি। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যেকোনো ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি, বিচারপ্রক্রিয়া চলতে থাকুক, পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক।’
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ভিসি মহোদয় সিন্ডিকেট সভা করেছেন। সিন্ডিকেটে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক শ ক ষকদ র উপ চ র য ন ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙা বউয়ের সন্ধানে
দুর্লভ ও বিরল পাখির খোঁজে ১১ জানুয়ারি ২০২৫ রাতে হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের উদ্দেশে ফটিকছড়ির বাসে চড়লাম। সকালে হাজারিখিল পৌঁছে দ্রুত গাইড নাহিদুল ইসলামের গেস্টহাউসে নাশতা সারলাম। এরপর পাখির খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। পাক্কা দুই ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে একটি নতুন ও একটি দুর্লভ পাখিসহ ১৮ প্রজাতির পাখির ছবি তুললাম। এরপর পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।
পাহাড়টি মোটামুটি উঁচু। কয়েক বছর আগে পরিচিত একজন পক্ষী আলোকচিত্রী এখান থেকে পা পিছলে পড়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। পা ঠিক হতে বেশ সময় লেগেছিল। আমার হাঁটুতে সমস্যা, তাই পাহাড়ে উঠতে ভয় লাগছিল। কিন্তু নতুন পাখি পাওয়ার আশা এবং সঙ্গী ইমরুল হাসান ও ডা. আশিকুর রহমানের অনুরোধে পাহাড়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাখি খোঁজার সময় কিছুটা বিশ্রাম পাওয়ায় কষ্ট কম হলো। যাত্রাপথে আরও ছয় প্রজাতির পাখি দেখলাম।
প্রায় ৫০ মিনিট হাঁটার পর চমৎকার এক জায়গায় এসে পৌঁছালাম। পাহাড়টি এখানে বেশ খাড়া। নাহিদ আমাকে ফোল্ডিং টুল পেতে বসতে বলে তামাটে লাল দুর্লভ পাখিটি খোঁজা শুরু করল। কয়েক দিন ধরে এখানেই ওটিকে দেখা যাচ্ছে। পাখিটি আমাদের তিনজনের জন্যই নতুন। মাত্র সাত মিনিট খোঁজার পর একটি স্ত্রী পাখিকে সেগুনপাতার আড়ালে পোকামাকড় খুঁজে বেড়াতে দেখা গেল। ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ১৯টি ক্লিক করলাম। এরপর হঠাৎ সেটি উড়ে গেল।
খানিকক্ষণ পর অতি সুন্দর এক নতুন পাখির দেখা মিলল। ওটির ছবি তুলে পাহাড়ের আরও ওপরে উঠতেই দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে আবারও তামাটে লাল পাখিটিকে দেখা গেল। এবার ৯ মিনিট সময় দিল। পাহাড়ের একবারে চূড়ায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পাখি খুঁজে ফিরতি পথে কিছুটা নামতেই আমাদের মাথার ঠিক ওপরে আবার ওটির দেখা পেলাম। কিন্তু লতাগুল্মের আড়ালে থাকায় কাছে পেয়েও ভালো ছবি তোলা গেল না। সর্বশেষ বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে শেষবারের মতো দেখলাম আকাশমণিগাছের বাকলের ভেতর থেকে রস খেতে। এবার খোলা জায়গায় পেয়ে কিছু ভালো ছবি তোলা গেল, তবে পাখিটি বেশ উঁচুতে ছিল। আড়াই মিনিটে ৪৯টি ছবি তুলে পাহাড় থেকে নামা শুরু করলাম।
অভয়ারণ্যের পাহাড়ে লাগানো আকাশমণিগাছের রস খেতে ব্যস্ত রাঙা বউ