আজ ৮ মে। বেঁচে থাকলে আজ ৭৮ বছরে পা দিতেন শর্মিলী আহমেদ—ঢাকাই বিনোদনজগতের এক উজ্জ্বল, নির্ভরযোগ্য ও মমতাময়ী মুখ। ২০২২ সালের ৮ জুলাই না–ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা, অভিনয়ের স্মৃতি আর জীবনের গভীর মানবিক অধ্যায় আজও ছুঁয়ে যায় আমাদের হৃদয়। জন্মদিনে ভক্তরা তাঁকে স্মরণ করছে—একজন মা, শিল্পী ও সংগ্রামী নারীর প্রতীক হিসেবে

শৈশবেই অভিনয়ে
শর্মিলী আহমেদের প্রকৃত নাম ছিল মাজেদা মল্লিক। ১৯৪৭ সালের ৮ মে জন্ম রাজশাহীতে। মাত্র চার বছর বয়সেই তাঁর অভিনয়জগতে পা রাখা। রাজশাহী বেতারের শিল্পী হিসেবে তাঁর প্রথম শিল্প-পরিচয় তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে রেডিও ও ১৯৬৪ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। যদিও তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঠিকানা’ (উর্দু ভাষায় নির্মিত) মুক্তি পায়নি, এরপর তিনি দ্রুতই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সুভাষ দত্তের পরিচালনায় নির্মিত ‘আলিঙ্গন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ও ‘আবির্ভাব’-এর মতো চলচ্চিত্রে। স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে উর্দু ভাষার কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর বাংলা চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতেও তাঁর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ‘রূপালী সৈকতে’, ‘আগুন’, ‘দহন’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন।

ক্যামেরার সামনে শিল্পী, বাইরে এক মা
শর্মিলী আহমেদের অভিনয়জীবন কেবল সিনেমাকেন্দ্রিক ছিল না। টেলিভিশনের পর্দায়, বিশেষ করে ৮০ ও ৯০ দশকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে পরিচিত মা চরিত্রের প্রতীক। মায়াবী মুখ, শান্ত অথচ দৃঢ় উপস্থিতি, আবেগের সূক্ষ্ম প্রকাশ—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন মা, দাদি, ভাবি কিংবা পরিবারপ্রীতির প্রতিচ্ছবি। তবে বাস্তব জীবনের ‘মা’ চরিত্রটি ছিল তাঁর আরও গভীর। জীবনকালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে পরিবার আগে, তারপর কাজ।’ এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই মা হওয়ার পর তিনি কিছু সময় অভিনয় থেকে বিরত থাকেন। মেয়েকে মানুষ করতে অভিনয়ের কাজ কমিয়ে দেন। ঢাকার বাইরে শুটিং একরকম এড়িয়ে যেতেন। কখনো যেতে হলেও রাত যতই হোক ফিরতেন বাসায়। যদি ফিরতে না পারতেন, তাহলে বোনকে বাসায় নিয়ে এসে মেয়েকে দেখাশোনা করার ব্যবস্থা করতেন। মেয়ে তনিমা আহমেদ, যিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী, একসময় মায়ের ব্যস্ততা ও ত্যাগ বুঝতে শেখেন। মা–মেয়ের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শর্মিলী আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি জানি না মা হিসেবে কতটা পেরেছি, কিন্তু এটুকু জানি, ব্যস্ততার কারণে মেয়েকে অবহেলা করিনি।’

শর্মিলী আহমেদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে 
  • যে ৪ ‘মানি রুল’ ধনীরা কাউকে বলেন না
  • নিউ ইয়র্ক-এর ফাস্ট লেডি ‘রামা দুয়াজি’
  • রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
  • ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
  • এক কাপ কফি খাও, তারপর লিখতে বসো—মতি ভাই বললেন
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা মাতাল ব্যক্তির
  • দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ