গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত নারী কর্মী
Published: 8th, May 2025 GMT
চাকরি ফেরতের দাবিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএমএসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলার সামনে আন্দোলন করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এই মনসুর অনুষ্ঠান শেষ করে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি আটকিয়ে অবরোধ করেন তারা। এ সময় একজন নারী কর্মী গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। পরে নিরাপত্তা সদস্যরা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে বাংলা একাডেমির গেটে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কয়েকজন জানান, ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা সকাল থেকে বাংলা একাডেমির সামনে অবস্থান করেন। গভর্নর বের হওয়ার সময় তারা তার গাড়ির চারদিকে ঘিরে চাকরি ফিরিয়ে দিতে স্নোগান দেয়। এ সময় চাকরিচ্যুত একজন নারী কর্মী গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। এ সময় অন্যান্য নারীর সহায়তায় নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে সরিয়ে নেন। পরে গভর্নর বাংলা একাডেমি এলাকা ত্যাগ করেন।
আরো পড়ুন:
এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন এমডি ড.
এপ্রিলে রেমিট্যান্স এলো ২৭৫ কোটি ডলার
আন্দোলনরত কর্মীদের একজন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের সেবা দিয়ে আসছি। আমাদের পরিশ্রমের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক আজ এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমাদের কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করেছে। আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই।”
ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা জানান, করোনা ও করোনা পরবর্তী সময়ে আড়াই হাজারের বেশি কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্রাক ব্যাংক। ওই সময় কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এর আগে, চাকরি ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও আন্দোলন করেন তারা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত ২ হাজার ৬৬৮ জন কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন হয়।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র চ কর চ য ত কর ম র এক ড ম র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।