বর্তমানে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্ভর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। অন্য সব প্রযুক্তির তুলনায় এআই বেশ গতিশীল। তাই পুরো বিশ্ব এখন এআই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও এআইকে কাজে লাগাতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এআই সামিটে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন খাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি সময়ের সবচেয়ে বড় রূপান্তরমূলক শক্তি। আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক বৈশ্বিক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে, যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি কেবল প্রযুক্তির অনুসারী হব, নাকি এর পথপ্রদর্শক।’

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা, প্রশাসন থেকে দৈনন্দিন জীবন—সবখানেই এআই এনে দিচ্ছে দ্রুত সমাধান, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রগতির অশেষ সম্ভাবনা।’

প্যানেল আলোচনায় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, এআই এখন অনেক শক্তিশালী। এখন এই প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কাজ করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত কাজ হোক বা পেশাদার, সব কাজেই এআই উপস্থিত। এআই দিয়ে ভালো কাজ করতে হবে। নৈতিকতার বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে। এআই যেন ভালো ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ, ব্যবহারকারী ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত ভূমিকা থাকতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখন সবখানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কৃষি, সব ক্ষেত্রেই এআইয়ের উপস্থিতি রয়েছে। প্রযুক্তি আসলে এমন একটা মাধ্যম, যা মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। এ জন্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এআইকে ব্যবহার করতে হবে।

অন্যান্য প্যানেল আলোচনায় বক্তারা জাতীয় উন্নয়ন এবং আর্থিক সেবার পরিধি বাড়াতে এআইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে এআইয়ের মাধ্যমে সহজলভ্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিসহ উদ্ভূত নৈতিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গোপনীয়তা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সম্মেলন চলাকালে গত মার্চে অনুষ্ঠিত এআই হ্যাকাথনের সেরা ৩১টি দল নিজেদের তৈরি উদ্ভাবন প্রদর্শন করে। বিচারকেরা রায়ে এআই হ্যাকাথনে বিজয়ী হয়েছে ছয়টি দল। দলগুলো হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেশিন মাইন্ডসেট (উৎপাদন), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কিউআরএআরজি (স্বাস্থ্য), ফিনটেকে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির রানটাইম টেররস (ফিনটেক), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড ফারমার্স (কৃষি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) টিম—গ্লাইডার্স (সিটি ম্যানেজমেন্ট) ও রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (রুয়েট) বুরাক। বিজয়ী প্রতিটি দল পেয়েছে এক লাখ টাকা পুরস্কার।

ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এআই সামিট আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল আকিজ রিসোর্স ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’

‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’

ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর

পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’

তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।

অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি