‎বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) আবু সাঈদ হত্যা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেল সাড়ে ৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে আবু সাঈদ চত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে আয়োজিত সমাবেশে তারা এ দাবি করেন।

মিছিলে তারা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মামলা নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অ্যকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে’, ‘জবাব চাই জবাই চাই, প্রশাসন জবাই চা ‘, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আরো পড়ুন:

৯ মাস পর আবু সাঈদ হত্যা মামলা করল বেরোবি প্রশাসন

জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা বেরোবি প্রশাসনের

সমাবেশে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আল ইমরান বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি মামলা নিয়ে তালবাহানা চলবে না। জড়িত সবাইকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তারপরেও প্রশাসন অনেকের নাম বাদ দিয়েছে। পোমেলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। কিন্তু যারা এদের মদদ দিয়েছে, মামলায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যার অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ কিভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে? আমরা ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।”

‎পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সিয়াম মন্ডল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করার আগে আমরা শুনেছি, আওয়ামী লীগের অনেক দোসরকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে আমরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করি এবং উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেই। তারপরও ৭১ জনের লিস্ট থেকে অনেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।”

তিনি বলেন, “পিছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছে, তারাও বাদ পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও বাদ পড়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে জড়িতদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

‎এ বিষয়ে জানতে আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

বুধবার (৭ মে) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্রলীগ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে, দাবি ভারতের

কাশ্মীরের জম্মু ও উদহামপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে ভারতীয় সেনাবাহিনী তিনটি অবস্থান লক্ষ্য করে পাকিস্তান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে ভারত। দেশটি বলেছে, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রয়টার্সের একজন সাংবাদিক জানান, সাইরেন বাজার পাশাপাশি জম্মুর আকাশে লাল শিখা ও ‘প্রজেক্টাইল’ দেখা যায়। সে সময় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ভারতীয় একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, জম্মুর বেশ কয়েক জায়গা এবং পাশের শহর আখনুর, সাম্বা ও কাঠুয়ায় হামলা হয়েছে।

তখন ভারতের একাধিক প্রতিরক্ষাসূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিশানায় আঘাত হানার আগেই মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মুর সাতওয়ারি, সাম্বা, আরএস পুরা ও আরনিয়ার দিকে ছোড়া হয়েছিল। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে সেগুলো মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে।

পরে বিবিসি লাইভে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতির উল্লেখ করা হয়। তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, কাশ্মীরের জম্মু ও উদহামপুর এবং পাঞ্জাব জেলার পাঠানকোটে ভারতীয় সেনাবাহিনী তিনটি অবস্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে পাকিস্তান। এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

তবে ভারতে হামলার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জম্মুতে হামলার যে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে, তা ‘ভুয়া ও মিথ্যা’। পাকিস্তানের কয়েকটি নিরাপত্তাসূত্র এই দাবি করেছে। সূত্রগুলোর বরাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিটিভি নিউজ এই খবর প্রচার করেছে।

পিটিভি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছে। এতে নিরাপত্তাসূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কাশ্মীরে হামলার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও মিথ্যা।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই ভুয়া খবর ছড়ানোর উদ্দেশ্য হলো এই ভ্রান্ত ও ব্যর্থ ধারণা তৈরি করা যে পাকিস্তানও ভারতের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এই হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি রাতে বিবিসিকে বলেছেন, পাকিস্তান যখন হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেবে, তখন সারা বিশ্ব তা জানবে।

এই হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চলমান বেপরোয়া অপপ্রচারের অংশ।

অবশ্য কাশ্মীরের অবস্থা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন। তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘জম্মুর জনগণ, বিশেষ করে যাঁরা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে শুক্রবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াদিল্লি দাবি করে, বুধবার দিবাগত রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ভারতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। তারা আরও দাবি করে, তাদের হামলায় লাহোরে পাকিস্তানের একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানে ২৯টি (আগে বলা হয়েছিল ২৫টি) ড্রোন পাঠিয়েছিল ভারত, যার সবগুলোই ধ্বংস করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার পর পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান। এরপর থেকে কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মঙ্গলবার রাতের হামলায় নারী-শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৭ জন আহত হন।

অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনীর তথ্য অনুসারে, হামলার পর থেকে সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৩ জন। গোলার আঘাতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ