ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতায় যেন এক দুঃস্বপ্নে আটকে গেছে শিশুরা। দখলদার দেশটির আগ্রাসনে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার শিশু। প্রতিদিন চোখের সামনে প্রতিবেশী-সহপাঠীদের মৃত্যুর বিভীষিকা, পঙ্গুত্ববরণ, অনাহার ও বাস্তুচ্যুতির মতো ঘটনাগুলো বেঁচে যাওয়া শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে। হারিয়ে গেছে তাদের শৈশব-কৈশরের দুরন্তপনা। এতে গাজার জীবন আর আগের মতো থাকবে না, চিরতরে বদলে গেছে। জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
১৮ মার্চ গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে দখলদার দেশটির হামলা শুরুর পর পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক হয়েছে। আরও বেশি যন্ত্রণা ও ট্র্যাজেডি দেখা দিয়েছে। চলমান নির্বিচার বোমাবর্ষণ এবং জরুরি খাবার সরবরাহ পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখায় সেখানে মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
পূর্ব গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণের মধ্যে দুটি গোলা এসে পড়ে শিশু মরিয়মের বাড়িতে। এতে তার মা ও ভাই-বোন নিহত হয়। ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া মরিয়ম ও তার বোনের শরীরে একাধিক আঘাত লাগে। তার দাদি বলেন, ‘মরিয়ম ঠিক অন্য শিশুদের মতোই দুরন্ত ছিল। সে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। মা ও ভাইবোনকে হারিয়ে সে এখন পাগলপ্রায়। আমরা আর কাউকে হারাতে চাই না। এ যুদ্ধ বন্ধ করো।’
গাজা শহরে বাড়ির পাশে হামলায় গুরুতর আহত হয় আরেক শিশু খালেদ। তার বাবা সেই মর্মান্তিক মুহূর্তটি বর্ণনা করেন, তিনি খালেদকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় খালেদকে হারিয়েই ফেলেছিলাম। তার সুস্থতার জন্য এখন দিনরাত দোয়া করছি।’
ইসরায়েল হামলা করে অনেক হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ায় এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘটতিতে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র বোমাবর্ষণ, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সাহায্য বন্ধ থাকায় ইউনিসেফও কার্যক্রম কমাতে বাধ্য হয়েছে। এতে শিশুরা তাদের চারপাশের ধ্বংসযজ্ঞ এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতারা চুপ করে থাকতে পারে না এবং শিশুদের হত্যা, পঙ্গুত্ব ও দুর্ভোগ অব্যাহত রাখতে পারে না। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা, জিম্মিদের মুক্তি, সাহায্য অবরোধ প্রত্যাহার, বাণিজ্যিক পণ্য গাজায় প্রবেশের অনুমতি এবং যুদ্ধ বন্ধে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
এদিকে ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকার ওপর থেকে অবরোধ অবিলম্বে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। বুধবার এক বিবৃতিতে ২৭ দেশের এ জোট বলেছে, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো মানবিক সরবরাহ প্রবেশ করেনি, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। সেখানে খাদ্য মজুত শেষ হয়ে গেছে এবং বেশির ভাগ পরিবারে নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে। ইইউ গাজার ওপর থেকে অবরোধ অবিলম্বে তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি জরুরি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছে।
কমিশন বলেছে, আমাদের বার্তা স্পষ্ট, মানবিক সাহায্যকে কখনোই রাজনীতিকরণ বা সামরিকীকরণ করা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সরবরাহকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
এদিকে গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে দেখলদার দেশটি। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।