বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি
Published: 9th, May 2025 GMT
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রেনাটাকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন)। এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তিটির আওতায় রেনাটাকে ৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএফসি, যা বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ওষুধশিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। এই খাত রপ্তানি ও দক্ষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ক্রমাগত অবদান রেখে চলেছে।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে অন্যতম বড় চুক্তি এটি। এই অর্থায়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহের সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারবে রেনাটা। পাশাপাশি এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করছে। এর পাশাপাশি ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বাজারেও কার্যক্রম প্রসারিত করছে। আইএফসির এই অর্থসহায়তা রেনাটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সহায়ক হবে, যা কোম্পানিটির সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ছাড়া এই অংশীদারত্ব রেনাটার নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও রপ্তানি কার্যক্রমেও নতুন গতি আনবে।
আইএফসি ও রেনাটা মনে করে, তাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জেনেরিক ওষুধ খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে আরও দৃঢ় করা সম্ভব হবে।
রেনাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কাইসার কবির বলেন, ‘ডলার সরবরাহে ঘাটতি, বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন ও দেশে অর্থায়নের উচ্চ খরচের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রেনাটার পাশে আইএফসির দাঁড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করছি।’
দক্ষিণ এশিয়ায় আইএফসির আঞ্চলিক পরিচালক ইমাদ এন ফাখুরি বলেন, ‘রেনাটার সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব ওষুধশিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। এই শিল্পে প্রবৃদ্ধি হবে, সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানও বাড়বে। রেনাটা যাতে শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখতে পারে, সেই চেষ্টা আমরা করব।’
এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের ওষুধশিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে বলে জানান ইমাদ এন ফাখুরি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক জেনেরিক ওষুধের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্ত হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।