দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রেনাটাকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন)। এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তিটির আওতায় রেনাটাকে ৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএফসি, যা বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ওষুধশিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। এই খাত রপ্তানি ও দক্ষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ক্রমাগত অবদান রেখে চলেছে।

এদিকে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে অন্যতম বড় চুক্তি এটি। এই অর্থায়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহের সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারবে রেনাটা। পাশাপাশি এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করছে। এর পাশাপাশি ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বাজারেও কার্যক্রম প্রসারিত করছে। আইএফসির এই অর্থসহায়তা রেনাটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সহায়ক হবে, যা কোম্পানিটির সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ছাড়া এই অংশীদারত্ব রেনাটার নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও রপ্তানি কার্যক্রমেও নতুন গতি আনবে।

আইএফসি ও রেনাটা মনে করে, তাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জেনেরিক ওষুধ খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে আরও দৃঢ় করা সম্ভব হবে।

রেনাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কাইসার কবির বলেন, ‘ডলার সরবরাহে ঘাটতি, বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন ও দেশে অর্থায়নের উচ্চ খরচের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রেনাটার পাশে আইএফসির দাঁড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করছি।’

দক্ষিণ এশিয়ায় আইএফসির আঞ্চলিক পরিচালক ইমাদ এন ফাখুরি বলেন, ‘রেনাটার সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব ওষুধশিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। এই শিল্পে প্রবৃদ্ধি হবে, সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানও বাড়বে। রেনাটা যাতে শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখতে পারে, সেই চেষ্টা আমরা করব।’

এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের ওষুধশিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে বলে জানান ইমাদ এন ফাখুরি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক জেনেরিক ওষুধের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্ত হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয়তা মাত্রাতিরিক্ত
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো