শুক্রবার গভীর রাতে ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের উধমপুর, পাঠানকোট, ভূজ এবং ভাটিন্ডা বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্থান। জবাবে পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি, অস্ত্রাগার, কমান্ড সেন্টার লক্ষ্যবস্তু করেছে ভারত।

শনিবার (১০ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। 

সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল সুফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, গতকাল শুক্রবার রাতেও সীমান্তে লাগাতার উসকানি দিয়েছে পাকিস্তান। আকাশপথে অস্ত্রবাহী ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি, যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে ২৬ এলাকায় হামলা চালিয়েছে। শুধু সেনাছাউনি বা বিমানঘাঁটি নয়, নিশানা করা হয়েছে স্কুল, হাসপাতালের মতো  বেসামরিক অবকাঠামোকেও। রাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ হাই স্পিড ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে উধমপুর, পাঠানকোট, ভূজ এবং ভাটিন্ডা বিমানঘাঁটিতে। সেখানে কিছু সেনাকর্মী ও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

সামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রত্যাখ্যান করল ভারত

পারমাণবিক অস্ত্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন শাহবাজ

এদিন সংবাদ সম্মেলনে উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, আরো অশান্তির ছক কষছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে এগোচ্ছে পাক সেনা। তাদের জবাব দিতে তৈরি হয়েছে ভারতীয় বাহিনীও।

তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান স্থলবাহিনীর সামনের দিকে এগিয়ে আসার অর্থই হলো তারা আরো উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পাকিস্তানের যেকোনো পদক্ষেপের দ্রুত ও যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ভারত চায় উত্তেজনা প্রশমিত হোক, কিন্তু পাকিস্তান যদি তাতে সাড়া দেয় তো।

উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত দ্রুততা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোকে আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে বিএসএফ সিয়ালকোটের একটি জঙ্গিঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়া পাকিস্তান এখনও কুরুচিকর, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান যে দাবি তুলেছে তারা ভারতের সুরাত ও সিরসায় বিমানঘাঁটিতে থাকা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, তা সম্পূর্ণত মিথ্যা দাবি।

এদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঐক্যে ফাটল ধরাতেও ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে পাকিস্তান। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “ভারতের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আফগানিস্তানে আছড়ে পড়েনি। আফগান নাগরিকরা যেন না ভোলেন যে, কোন দেশ সেখানকার নাগরিকদের উপরে হামলা চালায়।”

মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানের ভারতকে বিভক্ত করার মতলব ব্যর্থ হবেই। পাকিস্তানের মিথ্যে অপপ্রচারে কান দেবেন না। পাকিস্তান নিরীহ নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকেও টার্গেট করছে, বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে। চেষ্টা চালাচ্ছে সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করার।”

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, “আমি আগেও অনেকবার বলেছি, পাকিস্তান উসকানি এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করেই চলেছে। জবাবে ভারত তা প্রতিহত করেছে এবং পরিমিত প্রতিরক্ষা এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আজ সকালেও আমরা এই উত্তেজনা ও উসকানিমূলক প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি প্রত্যক্ষ করেছি।”

প্রসঙ্গত, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’-এর ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতভর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা চালিয়েছে তারা। শনিবার ভোরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ জম্মু শহরে বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এছাড়া ভোর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর, আখনুর, রাজৌরি, পুঞ্চ, পাঠানকোটসহ একাধিক জায়গায় শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ। এসব হামলায় এক সরকারি কর্মকর্তাসহ তিন জনের মৃত্যু ঘটেছে। রাজৌরির অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার রাজকুমার থাপার বাড়িতে একটি শেল এসে পড়ে। প্রথমে গুরুতর আহত হলেও পরে তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শোকপ্রকাশ করেছেন।

এরপর পাল্টা প্রত্যাঘাত করে ভারত। রাওয়ালপিন্ডির নুর খান-সহ তিনটি বিমানঘাঁটিতে পাল্টা প্রত্যাঘাত আনে ভারত। 

শনিবার জরুরিভাবে ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই কমিটির হাতেই রয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র এবং দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট

চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।

আজ সোমবার বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটের অস্থায়ী কার্যালয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করেছিলাম, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে সরে আসবে। কিন্তু সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। যা নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’

দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।’

জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ