পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‌‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। তার কারণটা হচ্ছে, কখনও আমরা এই বিষয়টা মন দিয়ে ভাবিনি আমরা যে এখানে রোহিঙ্গা শিবির করে ফেলছি, ওখানে ইকোনমিক জোন করে ফেলছি, তাহলে হাতি হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে।’ তিনি বলেন, কিছু কিছু মন্ত্রণালয় অনেক বড়, তারা মনে করে যে আমরা যেটা করছি এটাই উন্নয়ন। এদিক দিয়ে রাস্তা, একটা ব্রিজ যদি না বানাই, একটা ফুটওভার ব্রিজ না করি, তাহলে আসলে উন্নয়ন হয় না। কিন্তু ওই যে উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশটাকে যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই কাজটা কিন্তু কখনও হয় না।

শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘নগর এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনা চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এ আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি একটা পাহাড় সে নিরর্থক দাঁড়িয়ে আসে, তাকে নিরর্থক দাঁড় করিয়ে লাভ কি? বরং যদি আমরা একটি ইকোনমিক জোন করি, হাজার তিনেক লোকের ওখানে কর্মসংস্থান হবে। আমরা তখন ভাবি নাই যে, তাহলে হাতিগুলো তো এই রাস্তা দিয়ে হাঁটে, তাহলে সে হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে, সে খাবে কী। এটা একদম সমস্যার চূড়ান্তে চলে এসেছে। ফলে প্রতি সপ্তাহে আপনি দেখবেন একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। এটার কোনো কূলকিনারা করা যাচ্ছে না।’

রিজওয়ানা বলেন, কখনও মারা যাচ্ছে পুষ্টিহীনতায়, কখনও মারা যাচ্ছে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে, কখনও মানুষ তাকে গুলি করে মেরে ফেলে তার দাঁত নিয়ে যাচ্ছে, তার পায়ের নখ নিয়ে যাচ্ছে। কখনও নিজের ধান ক্ষেত বাঁচাতে কৃষকেরা তারকাটার বেড়া দিয়ে হাতিকে বিদ্যুতায়িত করে মেরে ফেলছে। এসব আসলে পরিকল্পনার অভাব। শুধুমাত্র একটা সংস্থা, একটা মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করে এটা করতে পারবে না। আমাদের মনোজগতে এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, একটা মন্ত্রণালয় খুব সুন্দর একটা হাউজিং প্রকল্প আনলো যেটার থ্রিডি ইমেইজ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু অন্য মন্ত্রণালয়ে এসে যখন বলবে যে, আপনি তো আমার কৃষি জমি নিয়ে যাচ্ছেন। তখন অপূর্ব সুন্দর থ্রিডি প্রেজেন্টেশনের পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ কথা আর ধরাই হবে না। বলা হবে যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুমোদিত হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বড় বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে সংস্থাগুলো সিদ্ধান্ত ঠিকই নেয় এবং বলে যে, অমুক অমুক প্রেজেন্ট ছিল সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র তাড়াতাড়ি করে দেবেন। যেন পরিবেশ অধিদপ্তর আছেই সকল প্রকল্পের ছাড়পত্র হ্যাঁ বলার জন্য। এটা তো আমাদের কাজ না। প্রথম থেকেই যদি একসঙ্গে কাজটা করা হয় তাহলে এ সমস্যা থাকে না।

অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত জমি থাকলেও দুর্বল পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যার অসম বণ্টনের ফলে বিশৃঙ্খল নগরায়ণ ঘটেছে। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। তিনি বলেন, কৃষিজমি নিয়ে শিগগির একটি আইন প্রণয়ন করা হবে যাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষিজমি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দখল হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

অনুষ্ঠানে বিআইপির সভাপতি ড.

আদিল মুহাম্মদ খান সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আহসান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ র জওয় ন র জওয় ন উপদ ষ ট পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে আতঙ্কে মানুষ, ঘরছাড়া অনেকে, শিশুরা কাঁদছে

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত তিন দিনে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের গ্রাম-শহরগুলোর বাসিন্দাদের দিন-রাত কাটছে আতঙ্কে। সীমান্ত এলাকার বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। শিশুরা কান্নাকাটি করছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা দুই দেশের গ্রাম-শহরগুলোতে দেখেছেন, বসতবাড়ির মধ্যে গোলা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক বাড়ি। কোথাও আবার গোটা শহরই প্রায় খালি করে পালিয়েছে মানুষ।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি আর কুপওয়ারায় গিয়েছিলেন বিবিসির আমীর পীরজাদা। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ সীমান্তের অপর দিক থেকে গোলাগুলির ঘটনায় অভ্যস্ত। 

তবে কুপওয়ারা ক্রালপোরা গ্রামের মানুষ কখনও দেখেননি যে, তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে। ‘জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়ল’, বিবিসিকে বলেছেন গ্রামটির বাসিন্দা তানভির আহমেদ।

গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে তার বাড়িতে একটা গোলা এসে পড়ে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটা ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন, কারণ, পরিবারের সবাই মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গিয়েছিল। তাদের গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাঙ্কার বানানো হয়নি।

উরি যেন এক ভূতুরে শহর

উরি শহরের বাসিন্দারাও বলছেন, এত বেশি সংখ্যায় গোলা পড়তে তারা কখনও দেখেননি। বিবিসিকে পাঠানো এক টেলিফোন ভয়েস মেসেজে উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলছেন, ‘আমরা একটা মসজিদের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এটা বছর দশেক আগে বানানো হয়েছে। সকালে যখন বাড়ির দিকে যাই; দেখতে পাই, আমার বাড়ির আশপাশেই তিনটা গোলা পড়েছে। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙ্গে গেছে।’

একই দৃশ্য দেখেছেন বিবিসির আরেক সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা। তিনি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার সুরানকোটে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে পুঞ্চ জেলার বহু মানুষ এখন ঘরছাড়া।

বুধবার মাঝরাতের পরে পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে গোলাবর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সোবিয়া নামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, ‘হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে একমাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দৌঁড়াই আমি। এতে শিশুটি কান্নাকাটি করছে, তাকে থামানো যাচ্ছে না।’

সুরফিন আখতারের বাড়ির সামনেই একটা গোলা এসে পড়েছিল। তারপরেই ঘর থেকে পালিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘একটাও গাড়ি পাওয়া যায়নি। বহুদূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। এত গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে, পুরো রাস্তা আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটেছি। নিজেও কেঁদেছি, সঙ্গে শিশুও।’

অন্য প্রান্তেও একই চিত্র

নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় অংশে যেমন সুরফিন আখতার সারা রাস্তা কেঁদেছেন, পাকিস্তানের দিকে চাকোঠি গ্রামের বেশিরভাগ কমবয়সী নারী আর শিশুরা সারা রাত কেঁদেছেন। বিবিসির তাবান্ডা কোকাবকে বলছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন। তিনি বলেন, ‘ওরা তো জীবনে এত বেশি গোলাবর্ষণ দেখেনি। এর আগে এত বেশী গোলাবর্ষণ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, তখন তো শিশুরা কেউ জন্মায়নি।’

৬ মে রাতটা তিনি পরিবারকে নিয়ে একটা সিমেন্ট ঢালাই করা বাথরুমে বসে কাটিয়েছেন কিফায়াত।

চাকোঠিসহ পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িতে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পর পর থেকেই টিনের ছাদ দেওয়া হয়। ওই সব ছাদ গোলাগুলি একেবারেই আটকাতে সক্ষম নয়। কিফায়াত বলছিলেন, ‘গোলাগুলি শুরু হতেই সব বাসন আর অন্যান্য জিনিসপত্র মাটিতে আছড়ে পড়তে শুরু করল; আর শিশুরা খুব জোরে কাঁদতে শুরু করল।’

বাজারেও যাচ্ছি না

পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদে রয়েছেন বিবিসির ফারহাত জাভেদ। নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারে নীলম উপত্যকা থেকে সম্প্রতি মুজফ্ফরাবাদ শহরে পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন মুহাম্মদ শাগির। বাড়ির সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পরেই তিনি পরিবারকে নিয়ে সরে আসেন। তিনি বলছিলেন, ‘বাচ্চারা, বিশেষ করে শিশুরা ব্যাপক ভয় পেয়ে গিয়েছিল।’

মুহাম্মদ শাগির বলেন, ‘আমরা ওদের শুধু বোঝাচ্ছিলাম যে, একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাব। রাতটা খুব ভয়াবহ ছিল। পরের দিন সকালেই আমি বাচ্চাদের নিয়ে পাশের শহরে বোনের বাড়িতে চলে যাই।’

মুহাম্মদ শাগির অবশ্য এখনও শহর ছেড়ে যাননি, তবে তার পরিবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছে, যদি কিছু হয় তাহলে যাতে সঙ্গে সঙ্গেই পালাতে পারেন তারা। তার কথায়, ‘আগে থেকে তো বলা যায় না কখন কী হয়। আমরা শহরে থাকি; আর চারদিকে প্রচুর সামরিক স্থাপনা রয়েছে। আমরা তো বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি না, এমনকি বাজারেও যাচ্ছি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে আতঙ্কে মানুষ, ঘরছাড়া অনেকে
  • নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে আতঙ্কে মানুষ, ঘরছাড়া অনেকে, শিশুরা কাঁদছে
  • স্মৃতি, বিবর্তন ও সংযোগ ভাবনা
  • পাখি খুঁজে পেতে পুরস্কার ঘোষণা
  • পাখি খুঁজে পেতে পুরষ্কার ঘোষণা
  • পাখি খুঁজে পেতে তিন হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা
  • রবীন্দ্রনাথ কেন অনিবার্য
  • থ্যালাসেমিয়া কী জানে না ৮১.৬ শতাংশ মানুষ