উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশকে অন্তর্ভুক্তের কাজটা হয় না: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
Published: 10th, May 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। তার কারণটা হচ্ছে, কখনও আমরা এই বিষয়টা মন দিয়ে ভাবিনি আমরা যে এখানে রোহিঙ্গা শিবির করে ফেলছি, ওখানে ইকোনমিক জোন করে ফেলছি, তাহলে হাতি হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে।’ তিনি বলেন, কিছু কিছু মন্ত্রণালয় অনেক বড়, তারা মনে করে যে আমরা যেটা করছি এটাই উন্নয়ন। এদিক দিয়ে রাস্তা, একটা ব্রিজ যদি না বানাই, একটা ফুটওভার ব্রিজ না করি, তাহলে আসলে উন্নয়ন হয় না। কিন্তু ওই যে উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশটাকে যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই কাজটা কিন্তু কখনও হয় না।
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘নগর এবং আঞ্চলিক পরিকল্পনা চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এ আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি একটা পাহাড় সে নিরর্থক দাঁড়িয়ে আসে, তাকে নিরর্থক দাঁড় করিয়ে লাভ কি? বরং যদি আমরা একটি ইকোনমিক জোন করি, হাজার তিনেক লোকের ওখানে কর্মসংস্থান হবে। আমরা তখন ভাবি নাই যে, তাহলে হাতিগুলো তো এই রাস্তা দিয়ে হাঁটে, তাহলে সে হাঁটবে কোন রাস্তা দিয়ে, সে খাবে কী। এটা একদম সমস্যার চূড়ান্তে চলে এসেছে। ফলে প্রতি সপ্তাহে আপনি দেখবেন একটা করে হাতি মারা যাচ্ছে। এটার কোনো কূলকিনারা করা যাচ্ছে না।’
রিজওয়ানা বলেন, কখনও মারা যাচ্ছে পুষ্টিহীনতায়, কখনও মারা যাচ্ছে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে, কখনও মানুষ তাকে গুলি করে মেরে ফেলে তার দাঁত নিয়ে যাচ্ছে, তার পায়ের নখ নিয়ে যাচ্ছে। কখনও নিজের ধান ক্ষেত বাঁচাতে কৃষকেরা তারকাটার বেড়া দিয়ে হাতিকে বিদ্যুতায়িত করে মেরে ফেলছে। এসব আসলে পরিকল্পনার অভাব। শুধুমাত্র একটা সংস্থা, একটা মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করে এটা করতে পারবে না। আমাদের মনোজগতে এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, একটা মন্ত্রণালয় খুব সুন্দর একটা হাউজিং প্রকল্প আনলো যেটার থ্রিডি ইমেইজ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু অন্য মন্ত্রণালয়ে এসে যখন বলবে যে, আপনি তো আমার কৃষি জমি নিয়ে যাচ্ছেন। তখন অপূর্ব সুন্দর থ্রিডি প্রেজেন্টেশনের পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ কথা আর ধরাই হবে না। বলা হবে যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুমোদিত হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে সংস্থাগুলো সিদ্ধান্ত ঠিকই নেয় এবং বলে যে, অমুক অমুক প্রেজেন্ট ছিল সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র তাড়াতাড়ি করে দেবেন। যেন পরিবেশ অধিদপ্তর আছেই সকল প্রকল্পের ছাড়পত্র হ্যাঁ বলার জন্য। এটা তো আমাদের কাজ না। প্রথম থেকেই যদি একসঙ্গে কাজটা করা হয় তাহলে এ সমস্যা থাকে না।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত জমি থাকলেও দুর্বল পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যার অসম বণ্টনের ফলে বিশৃঙ্খল নগরায়ণ ঘটেছে। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। তিনি বলেন, কৃষিজমি নিয়ে শিগগির একটি আইন প্রণয়ন করা হবে যাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষিজমি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দখল হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
অনুষ্ঠানে বিআইপির সভাপতি ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ র জওয় ন র জওয় ন উপদ ষ ট পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট
চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটের অস্থায়ী কার্যালয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করেছিলাম, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে সরে আসবে। কিন্তু সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। যা নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’
দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।’
জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ বক্তব্য দেন।