জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেছেন, ‘জাসদ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। একটি বা দুটি আসনের জন্য বড় বড় দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। আমরা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সব অংশকে এক করে এবার ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবো।’

শনিবার দুপুরে রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ঐক্যের লক্ষ্যে বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় মূখ্য উদ্যোক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ফারাহ খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে স্বপ্নের সোনার বাংলার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার পরে দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল, মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এমন স্বাধীনতা চাইনি বলেই সিরাজুল আলম খান দাদার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠিত হয়েছিল। সেসময় এই জাসদ একটি বটগাছের ভূমিকায় থাকলেও ব্যক্তি স্বার্থে আজ তা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে পরগাছা হয়ে গেছে। তাই এখন সময় এসেছে, জাসদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

সারা দেশে ঐক্য করার জন্য জাসদের সব অংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার অংশ হিসেবে খুলনা ও বরিশালের পর রংপুরের সভায় ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন, ‘‘জাসদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ছিল গণতন্ত্র রক্ষা করা, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো- আমাদের জন্মের এই ৫৩ বছরে আমরা আমাদের কোনো সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারিনি। আমাদের নেতারা সিলেকশনের মাধ্যমে পদে বসেছেন। কিন্তু এবার আমরা কর্মীরা মিলে জাসদে ইতিহাস গড়ব। আমরা কর্মীরা নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নেতা নির্বাচন করব। ‘ব্রাকেট বন্দি’ জাসদকে ঐক্যবদ্ধ জাসদে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সরকার আমাদের ওপর বিভিন্ন সময় অন্যায়-অবিচার করলেও আমরা কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপি, আবার কখনও এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করেছি, নিজেদের হাতকে শক্তিশালী করতে পারিনি।’’

ব্যারিস্টার ফারাহ খান আরও বলেন, ‘আমরা যদি বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারি, তবে কেন ঐক্যবদ্ধ জাসদ হতে পারব না। কেন সব ভুল ও মান-অভিমান ভুলে নিজেদের ভাইদের সঙ্গে আমরা এক হতে পারব না। আমাদের জাসদের কোনো অংশ বা নেতারা নতুন প্রজন্ম তৈরি করেননি। সিরাজুল আলম খান সেটি উপলব্ধি করে নিজে উদ্যোগী হয়ে আমাকে তার জীবদ্দশায় এই দলের রাজনীতিতে প্রবেশ করিয়েছেন। আমি নিউক্লিয়াস প্রধান স্বাধীনতার রুপকার জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি। জাসদের ঐক্য নিয়ে তার সঙ্গে আমার বিস্তর কথা হতো, আমি তাকে কথা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বড় দলের নেতারা আমাদের একটি-দুটি আসন দেয়, আর আমরা তাতেই খুশি হয়ে যায়। কিন্তু জাসদই হতে পারতো এই দেশের মূল কান্ডারী। তাই এবারে আমাদের লক্ষ্য হোক, জাসদের ঐক্য।’

বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাসদ নেতা সাব্বির আহমেদ, আব্দুল হাই, আলহাজ আমিনুল ইসলাম রাজু, শফিয়ার রহমান, ইসমাইল হোসেন বাদল, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মুকুল প্রমুখ। এসময় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা জাসদের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবন্ধ জাসদ গড়ে তোলার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জ ল আলম খ ন স ব ধ নত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

পুরো একটি প্রজন্ম সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে: আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় দেশের মানুষ অধিকার হারিয়ে ফেলেছিল। তারা সাধারণ মানুষকে নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় মেতে উঠেছিল। ১৬ বছরের শাসনামলে তারা ন্যূনতম গণতন্ত্রের ধার ধরেনি। কোনো প্রকার বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া তারা ক্ষমতায় ছিল। পুরো একটি প্রজন্ম কোনো প্রকার সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে কমনওয়েলথ চার্টারবিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন আসিফ মাহমুদ।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের তরুণেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে স্বৈরাচার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। বাক্‌স্বাধীনতার বিলোপ ও মানুষের সব অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচারসহ গুরুতর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

স্বৈরাচারী আমলে দেশের তরুণরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ছিলেন বলে মন্তব্য করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, স্বৈরাচার দেশের তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ সব ধরনের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণেরা স্বৈরাচারী কাঠামো ভেঙে নতুন যুগের সূচনা করেছেন। তরুণদের সাহস ও ত্যাগের মাধ্যমে এই নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখা সম্ভব হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আর কখনো গণতন্ত্র নিয়ে আপস করবে না বলে মন্তব্য করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে পড়া এই রাষ্ট্র পুনর্গঠনে কাজ করছে। সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন একগুচ্ছ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। কমিশনগুলো দেশের সব স্তরের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সরকার ১২১টি প্রস্তাবকে চিহ্নিত করেছে, যেগুলো দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য।

জুলাই সনদে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, জুলাই সনদের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধশীল ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের দেখা স্বপ্ন এই সনদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সব অংশীদার ও তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, তাঁরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সমৃদ্ধিশালী ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব বাস্তবতাকে সামনে রেখে আজকের ওয়ার্কশপটি শুধু সময়োপযোগীই নয়, তরুণদের দক্ষ করে তুলতে এটা অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে।

কমনওয়েলথ চার্টারকে সম্মিলিত বিশ্বাসের একটি মৌলিক দলিল হিসেবে অভিহিত করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, এই চার্টার আইনের শাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে তুলে ধরে। এটি একটি নৈতিক কম্পাস, যা ৫৬টি সদস্যরাষ্ট্রকে একই লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যায়। ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া তরুণেরা এর মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবে।

কমনওয়েলথ চার্টার ওয়ার্কশপটি বাংলাদেশের তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে শেখাবে বলে আশা প্রকাশ করেন কমনওয়েলথের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল লুইস গ্যাব্রিয়েল ফ্রান্সেসচি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণেরা ইতিমধ্যে এমন কিছু করেছেন, যা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া তরুণেরা জয়ীদের অন্তর্ভুক্ত।

কমনওয়েলথ চার্টার ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া তরুণেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষকে সেবা দেবে বলে আশা করেন লুইস ফ্রান্সেসচি। তিনি বলেন, তরুণেরা এমন বিশ্ব গড়তে সহায়তা করবে, যেখানে সবাই সবার সহযোগী।

তরুণদের বিশ্বের পরিবর্তক হিবেসে বর্ণনা করেন লুইস ফ্রান্সেসচি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও পরিবর্তিত হচ্ছে। আপনি আজকে কী করছেন, সেটা মুখ্য নয়। বরং ৩০ বছর পর কী করবেন, সেটাই মুখ্য। সেই কর্মের ওপর আপনার পরিবার ও দেশ আপনাকে নিয়ে গর্ব করবে। কখনোই কাউকে ঘৃণা করা যাবে না। বরং ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের উপদেষ্টা মিশেল স্কোবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন দাম্পত্য সম্পর্কে প্রতারণা করে মানুষ?
  • ছোটদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কী করবেন
  • বাতের ব্যথায় নাজেহাল বাদ দিন ৫ খাবার
  • প্রতিহিংসা বনাম গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা
  • পুরো একটি প্রজন্ম সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে: আসিফ মাহমুদ
  • এক অকুতোভয় বুদ্ধিজীবীর ৯০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
  • সরাসরি: যুদ্ধ কখনোই গণতন্ত্র নিয়ে আসে না: ইরানের নোবেলজয়ী নার্গিস
  • লন্ডন বৈঠক নিয়ে শরিকেরা সন্তুষ্ট: আমীর খসরু
  • শিক্ষকই তো তিনি আমার
  • সরাসরি: ‘যে আলোচনার টেবিল ইরান কখনও ছাড়েনি, সেখানে কীভাবে ফিরবে?’