২৩ বছর ভাড়া না দিয়ে ফ্লোর দখল ব্যবসায়ীর
Published: 10th, May 2025 GMT
৩৬ বছর আগে চট্টগ্রামের বিআরটিসি মার্কেটের চতুর্থ তলার ১৩ হাজার বর্গফুটের ফ্লোরটি ভাড়া নেন হাশেম চৌধুরী। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করেন মায়ামী আবাসিক হোটেলের নামে ব্যবসা। প্রতি বর্গফুট ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে ১২ বছর নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু বাজারমূল্যের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে যখনই ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় বিআরটিসি, তখনই এ ব্যবসায়ী বেঁকে বসেন। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে আগের ভাড়াও এখন দিচ্ছেন না, ফ্লোরের দখলও ছাড়ছেন না। এমনকি বিআরটিসির কোনো কর্মকর্তা ওই ভবনেও যেতে পারেন না। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.
১৯৮৯ সালে মায়ামী আবাসিক হোটেল চালু করেন হাশেম। হোটেলে ২৪টি আবাসিক রুম রয়েছে। ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রুম ভাড়া দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলায় হোটেলে প্রবেশের মুখে তালা ঝুলছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তৃতীয় তলার পারাপার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. মিজান বলেন, রমজানের ঈদের পর থেকে হোটেলটি বন্ধ রয়েছে। কী কারণে বন্ধ, জানি না।
বিআরটিসির গলার কাঁটা
বিআরটিসি মার্কেটে ১২ হাজার ৬২৪ বর্গফুটের ফ্লোরটি ১৯৮৮ সালের ১৩ এপ্রিল ভাড়া নেন ব্যবসায়ী হাশেম। ১৯৮৯ সালের ১৫ জুন অতিরিক্ত ৩২০ বর্গফুটসহ ১২ হাজার ৯৪৪ বর্গফুট বর্ধিত করা হয়। প্রতি বর্গফুট ভাড়া ১ টাকা ২৫ পয়সা ধরা হয়। সেই হিসাবে মাসে ভাড়া আসে ১৭ হাজার ২৯৩ টাকা। এ হারে ২০০২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত নিয়মিত
ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু বিআরটিসি বাজারমূল্যের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে প্রতি বর্গফুট ভাড়া ২ টাকা ১৩ পয়সা করার উদ্যোগ নেয়। আর তাতেই বেঁকে বসেন এ ভাড়াটিয়া। তিনি বিআরটিসির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে ২০০২ সালের মে থেকে ভাড়া পরিশোধ করা বন্ধ করে দেন। এখন ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯ টাকা বকেয়া পড়েছে।
ব্যতিক্রম শুধু মায়ামী
নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পুরোনো রেলস্টেশনের বিপরীতে বিআরটিসি বাস ডিপোর পাশেই পাঁচ তলা বিআরটিসি মার্কেট ভবন। প্রথম তলায় বিআরটিসিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করা বাস কাউন্টার ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস, বাস মালিক সমিতির অফিসসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়েছে। চতুর্থ তলার পুরো ফ্লোর ভাড়া নেয় হাশেম চৌধুরীর হোটেল মায়ামী। পুরো মার্কেটে ৭৩টি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি থেকে
বর্ধিত ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও ব্যতিক্রম শুধু মায়ামী হোটেল কর্তৃপক্ষ। বিআরটিসি দফায় দফায় চিঠি দিলেও মায়ামী কর্তৃপক্ষ ভাড়া বৃদ্ধিতে সাড়া দেয়নি। আবার নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করছে না। ভাড়া চাইলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাশালী মন্ত্রী হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক প্রভাব দেখাতেন। নিজেকে হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে হুমকি-ধমকি দিতেন বলে বিআরসিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন।
হাশেমের ভাড়া ২ টাকা, অন্যরা দেন ২৫ টাকা
বিআরটিসি মার্কেটে হাশেমের মায়ামী হোটেলের প্রতি বর্গফুটের ১৯৯০ সালের ভাড়া এখনও ২ টাকা ১৩ পয়সা রয়ে গেছে, তাও বকেয়া। অন্যদিকে একই মার্কেটে প্রতি তিন বছর
পরপর অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাড়তে বাড়তে এখন নিচতলায় প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা, দ্বিতীয় তলায় ২০ টাকা এবং তৃতীয় তলার ভাড়া ১৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে আদায় করছে বিআরটিসি।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোর ম্যানেজার জুলফিকার আলী বলেন, জমি ও মার্কেট ভবনের দখল না ছাড়ায় বিআরটিসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২৩ বছর ধরে তিনি ভাড়া না দিতে দিতে এখন সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা ভাড়া বকেয়া পড়েছে।
প্রতি তিন বছর পরপর ১৫ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি নিয়ম থাকলেও তিন যুগে এক টাকাও বাড়াতে দেননি তিনি। বর্তমান বাজারমূল্যে এ ফ্লোর ভাড়া দিলে মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। সেখানে তিনি মাসে ১৭ হাজার টাকা ভাড়াই পরিশোধ করছেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার বলেন, হাশেম চৌধুরী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ক্ষমতা দেখাতেন। রিট করে তিনি নিয়মিত ও বকেয়া ভাড়া পরিশোধ এবং ফ্লোরের দখল ছাড়তে চাইছেন না। ভাড়া চাইতে গেলে তিনি বিআরটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবসময়ই অশোভন আচরণ করেন। মামলা করে দেন।
হোটেল মায়ামীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাশেম চৌধুরীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, মাসিক
ভাড়াসহ বিআরটিসির সঙ্গে সমস্যা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছি। রিটটি বিচারাধীন থাকায় ফ্লোর বরাদ্দ, বকেয়া ভাড়াসহ কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারব না। হাছান মাহমুদ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কেন– অনেক নেতাই আমার পরিচিত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব আরট স র ব যবস য় র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
মাদকের বাহকদের ধরে লাভ নেই; গডফাদারদের ধরতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আমরা শুধু মাদকের বাহকদের ধরছি৷ শুধু বাহকদের ধরলে হবে না৷ এদের গডফাদারদের ধরতে হবে৷
আজ বুধবার মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ৩২টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের মাঝে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি৷
উপদেষ্টা বলেন, আপনারা হাতিয়ার চাইলেন সেটা দেওয়া হলো৷ ১৪০০ কোটি টাকার মাদক নিরাময় কেন্দ্র দেওয়া হলো৷ জনবল বাড়ানো হলো৷ এবার এসবের গডফাদারদের ধরতে হবে৷ বাহকদের ধরে লাভ নেই৷ গডফাদারদের ধরতে হবে৷
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের বাহিনী সীমান্তের মাদক পাচারের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করছে৷ এখান থেকে আয় করে তারা ঘর-সংসার চালাচ্ছে৷ এটা কীভাবে বন্ধ করা যায় চেষ্টা করছি৷ আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি বিষয়টা তা নয়৷ তবে আমরা চেষ্টা করছি৷ আজকাল অনেক বদি (ইয়াবাসম্রাট হিসেবে কুখ্যাত কক্সবাজারের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বদি) তৈরি হয়ে গেছে৷ তাদের কীভাবে ধরা যায় সেই চেষ্টা করছি।