আরও একটি ট্রফিবিহীন মৌসুম, আল নাসরে চুক্তি আলোচনা থামালেন রোনালদো
Published: 11th, May 2025 GMT
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজের কাজটা করছেন। চলতি মৌসুমে আল নাসরের হয়ে গোল করেছেন ৩৩টি। করিয়েছেন আরও ৪টি। কিন্তু দল?
এমন পারফর্ম করার পরও রোনালদোর দল আল নাসর শিরোপাহীন। চলতি মৌসুমেও কোনো শিরোপা জয়ের সুযোগ নেই দলটির। তাতে হতাশ রোনালদো ক্লাবের সঙ্গে নতুন চুক্তি আপাতত স্থগিত রেখেছেন, এমন খবর দিয়েছে মার্কা।
সৌদি প্রো লিগ এখনো শেষ হয়নি। রোনালদোর আল নাসরের ম্যাচ বাকি এখনো চারটি। তবে এরই মধ্যে লিগে শিরোপার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ৮ মে আল ইত্তিহাদের কাছে ৩-২ গোলে হেরে লিগ জয়ের স্বপ্ন মিলিয়ে গেছে আল নাসরের। ৩৪ ম্যাচের লিগে ৪ ম্যাচ বাকি থাকতে আল নাসরের চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেছে শীর্ষ দল আল ইত্তিহাদ।
গত ৮ মে ২ গোলে এগিয়ে গিয়েও আল ইত্তিহাদের কাছে ৩–২ গোলে হেরেছে আল নাসর.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: এর মানে আসলে কী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দিন ধরে সংঘর্ষ চলার পর গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, দেশ দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এর আগে ওই দিন ভোরে দুই দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর দেশটির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ নামের অভিযান শুরু করে ইসলামাবাদ। দুই দেশই দাবি করেছে, তারা বেশির ভাগ প্রজেক্টাইল (ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ইত্যাদি) প্রতিহত করেছে। তবে কিছু হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথাও স্বীকার করেছে তারা।
ভারত গত বুধবার পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের অভিযান শুরু করার পর ৬০ জনের বেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানের অংশে হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদ। নিয়ন্ত্রণরেখা হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্তরেখা, যা বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলকে ভাগ করে রেখেছে।
পাল্টাপাল্টি হামলাকে কেন্দ্র করে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। অতীতেও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান সংকটের সমাধান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এবার এ যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কি না ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
ভারত ও পাকিস্তান কী সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেযুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতজুড়ে আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ব্যবহার করার জন্য দুই দেশকেই অভিনন্দন। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!’
এই আলোচনায় কয়েকটি দেশ অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
‘যুদ্ধ’ শব্দটির কোনো আনুষ্ঠানিক, সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা না থাকায় দেশগুলো চাইলে যুদ্ধ ঘোষণা না করেই দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এই ধোঁয়াশার সুযোগে বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী সামরিক কর্মকাণ্ডের রূপরেখা তৈরি করতে পারে।বিক্রম মিশ্রি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আজ (শনিবার) ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন ক্ষেত্রেই সব ধরনের লড়াই ও সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সমঝোতা কার্যকর করার জন্য দুই পক্ষকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং দুই দেশের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী মহাপরিচালকেরা আবারও ১২ মে কথা বলবেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, এ সমঝোতার পর ভারত ও পাকিস্তান সামরিক যোগাযোগ চ্যানেল এবং হটলাইনগুলো সচল করেছে।
এখন কি দুই দেশ আরও আলোচনা করবেযুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান একটি ‘নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা শুরু করতে’ সম্মত হয়েছে।
১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ গৃহীত হওয়ার পর থেকে কোনো দেশই সাধারণত যুদ্ধ ঘোষণা করে না বা নিজেকে যুদ্ধরত বলে দাবি করে না। কারণ, আইনগতভাবে এটি অবৈধ শক্তি প্রয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।—আহমের বিলাল সুফি, আন্তর্জাতিক আইন বিশারদতবে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই দাবি আংশিকভাবে অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ‘অন্য কোনো ইস্যুতে অন্য কোনো স্থানে আলোচনা করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবীর সিনহা আল–জাজিরাকে বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত পরিসরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। কারণ, ভারত আগেও এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সুবীর সিনহা বলেন, পাকিস্তাননীতি নিয়ে মোদি সরকারের তথাকথিত ‘দৃঢ় অবস্থানের’ অন্যতম একটি যুক্তি হলো—এখন আর আলোচনায় বসা এবং বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়।
এখন ভারত সরকার যদি এ অবস্থান থেকে সরে আসে, তবে দেশের ডানপন্থী গোষ্ঠী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এ গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনো পরিস্থিতি যুদ্ধ বলে তখনই বিবেচ্য হবে, যখন লড়াই অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করে এবং লড়াইয়ে ১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু সরকারের কাছে যুদ্ধ শুরু হয় তখন, যখন তারা তা ঘোষণা করে। —ক্রিস্টোফার ক্লেরি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসিনহা মনে করেন, যুদ্ধ-পরবর্তী উত্তেজনা প্রশমনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি আবার সক্রিয় করতে হবে—একটি সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ও অপরটি সিমলা চুক্তি। সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। আর সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান।
সিনহার মতে, এ দুই চুক্তি পুরোপুরি সচল করা ও সেগুলো ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা দরকার।
ভারত ও পাকিস্তান কি সত্যিই যুদ্ধের মধ্যে ছিলআনুষ্ঠানিকভাবে ছিল না। দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় সংঘাত, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন হামলা ও গোলাবিনিময়ের ঘটনা ঘটলেও কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। ভারত ও পাকিস্তান তাদের সামরিক কর্মকাণ্ডকে সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত ‘সামরিক অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পাকিস্তান গতকাল ভারতের বিরুদ্ধে ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে অভিযান চালিয়েছিল। আরবি ভাষার শব্দগুচ্ছ বুনইয়ান-উন–মারসুস–এর অর্থ সুদৃঢ় প্রাচীর। কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছিল ভারত। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলাকে কেন্দ্র করে এমন অভিযান চালায় দিল্লি। পেহেলগামে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে ভারত।
তবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। অতীতের সংঘাতগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, বড় সংঘর্ষে বিপুলসংখ্যক সেনা ও নিরীহ বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার পরও এ দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
আগে কখনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে কি ভারত-পাকিস্তান বিরোধের সমাধান হয়েছে
হ্যাঁ, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর থেকে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় একাধিকবার তাদের মধ্যকার বিরোধের সমাধান হয়েছে।
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। কার্যত তখন থেকে কাশ্মীর ভারতনিয়ন্ত্রিত ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত অংশে ভাগ হয়ে পড়ে।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। এতে মধ্যস্থতা করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
এ চুক্তির কারণে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান যুদ্ধ–পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যাওয়ার এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার বিষয়ে একমত হন।
১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়েন। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সেনা প্রত্যাহারে রাজি করান।
২০০২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল দাবি করেন, ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে হামলার পর নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর তৈরি হওয়া উত্তেজনা অবসানে তিনি ও তাঁর দল মধ্যস্থতা করে। পরের বছরের জুনে কলিন পাওয়েল বলেন, তিনি আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের কাছ থেকে কিছু আশ্বাস পেয়েছিলেন। আশ্বাসগুলো হলো নিয়ন্ত্রণরেখায় অনুপ্রবেশমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করা হবে এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূল করা হবে।
আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’: ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটাল১১ মে ২০২৫ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা